মুখ্যমন্ত্রীর জনসভার ২৪ ঘণ্টা আগেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল বলরামপুরে।
‘তোলাবাজির’ প্রতিবাদ করায় যুব তৃণমূলের সদস্য-সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল কংগ্রেসেরই কর্মী-সমর্থকদের একাংশের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বলরামপুর বাজার এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। ভাঙচুর চলেছে যুব তৃণমূলের কার্যালয়েও। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর বিধানসভা কেন্দ্র বলরামপুরই। যদিও তিনি এই ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি। তাতে স্থানীয় যুব তৃণমূল নেতা ও সদস্যদের ক্ষোভ আরও বেড়েছে। যুব তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি সুদীপ মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, “এই ধরনের ঘটনা কখনওই কাঙ্ক্ষিত নয়। ভবিষ্যতে যাতে এমন না ঘটে, সে ব্যাপারে সকলকেই দায়িত্ব নিতে হবে।” |
আজ, শুক্রবার বলরামপুরের কলেজ ময়দানে জনসভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন বিকেলে সেই জনসভার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে বলরামপুরে যান দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তিনি আসার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই যুব তৃণমূলের লোকজনকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় ও তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর জনসভার জন্য এ দিন বলরামপুর বাজারে মাইকে প্রচার করছিলেন যুব তৃণমূলের সদস্য-সমর্থকেরা। সংগঠনের বলরামপুর ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মাঝির অভিযোগ, “বাজারে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে ব্যবসায়ী ও দোকানদারদের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করছিল তৃণমূলের কিছু কর্মী-সমর্থক। দলের নামে এ ভাবে জোর করে চাঁদা আদায় করার ক্ষেত্রে দলনেত্রীর নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমাদের সংগঠনের কর্মীরা মাইকে আবেদন করেন চাঁদা না দেওয়ার জন্য। পরে এলাকার কিছু তৃণমূল কর্মী আমাদের সংগঠনের কার্যালয়ে চড়াও হয়। আমাদের কর্মীদের মারধর করে।” যুব তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, হামলাকারীদের হাতে মার খেয়েছেন সুনীল পাল, সুমিত পান্ডা, সন্তোষ দাস ও রামু গরাই। তাঁদের মধ্যে সুনীলের বাঁ পা ভেঙে গিয়েছে। তিনি আপাতত পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকি তিন জনকে বলরামপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। আহত সুনীলবাবু বলরামপুর থানায় তৃণমূল কর্মী-সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। |
যুব তৃণমূলের বলরামপুর অঞ্চল সহ-সভাপতি সন্তোষ দাসের দাবি, “প্রচার সেরে আমরা কার্যালয়ে বসেছিলাম। সেই সময় ব্লক তৃণমূল সভাপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর নেতৃত্বে শতাধিক লোক হামলা চালায়। কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়।”
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সৃষ্টিধরবাবু বলেন, “আমাদের কর্মী-সমর্থকদের কেউই এ দিন চাঁদা আদায় করেননি। তবে এলাকার কিছু ব্যবসায়ী জোর করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ আমাদের কাছেও জানিয়েছিলেন। আমরা ওঁদের বলে দিয়েছি, দলের নামে কেউ চাঁদা তুলবে না।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “যুব তৃণমূলের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং ওরা দলীয় কর্মসূচি থেকে শুরু করে নির্বাচনসব ক্ষেত্রেই ঝামেলা পাকিয়ে কাজে বাগড়া দেয়।” আর জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরামবাবুর মন্তব্য, “ওটা এমন কিছু ব্যাপার নয়।” এ কথা জেনে ভোলানাথবাবুর প্রতিক্রিয়া, “এখন উনি এমন কথা বলছেন। অথচ তোলাবাজির অভিযোগ পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে ফোনে ওঁকেই আমরা জানিয়েছিলাম। আমাদের কর্মীদের উপরে হামলার খবরও তাঁকে ফোনে বলা হয়েছিল।” তাঁর আক্ষেপ, “দলের জন্মলগ্ন থেকে প্রচুর ঝড়-ঝাপটা সহ্য করে আমরা এখানে তৃণমূল করেছি। আর আজ দেখছি, বহিরাগত কিছু লোক আমাদের দলে ঢুকে আমাদেরই সংগঠনের কর্মীদের আক্রমণ করছে। দলের ভিতরে তারাই ছড়ি ঘোরাচ্ছে!”
|