তিনি আসছেন কয়েক ঘণ্টার জন্য। আর তা নিয়েই তুমুল ব্যস্ততা। আজ শুক্রবার, পুরুলিয়া থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাঁকুড়ার সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করার কথা। রাতেই তিনি দুর্গাপুরে ফিরবেন বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। তাই, বৃহস্পতিবার থেকেই বাঁকুড়া জেলায় তাঁর নিরাপত্তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয় বার এই জেলায় আসছেন বলে জেলার মূল সমস্যাগুলির সমাধানের আশায় বুক বেঁধেছেন জেলার বাসিন্দারা। |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যার মুখে মুখ্যমন্ত্রীর বাঁকুড়ায় ঢোকার কথা। পুরুলিয়া-বাঁকুড়া সীমান্তের ভূতেরগোড়া গ্রাম থেকে বাঁকুড়ার পুলিশ তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে। পুরুলিয়া থেকে ৬০এ জাতীয় সড়ক ধরে তাঁর কনভয় বাঁকুড়ায় আসার কথা। সেই রাস্তার দু’পাশে মোতায়েন করা হয়েছে প্রচুর পুলিশ। বাঁকুড়ার সার্কিট হাউসে ‘মেটাল ডিটেক্টরের’ দরজা পেরিয়েই প্রশাসনের কর্তাদের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে যেতে হবে। সার্কিট হাউসের চারপাশে পুলিশের বিভিন্নস্তরের আধিকারিকদের নেতৃত্বে পুলিশকর্মীরা পাহারায় থাকবেন। ঘণ্টা দু’য়েক বৈঠক করার পরে তিনি বড়জোড়া হয়ে দুর্গাপুরে রওনা দেবেন। বড়জোড়া ও বেলিয়াতোড়ের জঙ্গলপথে তাঁর জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে বলে জানানো হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে জঙ্গলমহলের উন্নয়নের উপরে বিশেষ গুরুত্ব দেবে তা প্রত্যাশিত। এর পাশাপাশি জেলার অন্যান্য এলাকার সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনতে বিধায়কেরা জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন। বড়জোড়ার তৃণমূল বিধায়ক আশুতোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “বড়জোড়ায় একটি তথ্য প্রযুক্তি পার্ক তৈরি করার দাবি দীর্ঘদিনের। শিল্পমন্ত্রী কয়েকদিন আগে তা ঘোষণাও করেছেন। আশাকরি মুখ্যমন্ত্রী তথ্য প্রযুক্তি পার্কের কথা এ বার জেলায় ঘোষণা করবেন।” তাঁর আর্জি, বড়জোড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে মহকুমাস্তরে উন্নীত করা, অমরকানন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি শালি-গাংদুয়ার জলপ্রকল্পের আরও উন্নতি করতে হবে। তিনি জানান, প্রস্তাবগুলি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনার জন্য জেলাশাসককে বলা হয়েছে। |
ডান দিকে, বাঁকুড়া সার্কিট হাউসে অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি। |
বাঁকুড়ার বিধায়ক কাশীনাথ মিশ্র বলেন, “বাঁকুড়ার বাসন ও তাঁত শিল্প ধুঁকছে। বাঁকুড়া মেডিক্যালেরও নানা সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়া দ্বারকেশ্বর-গন্ধেশ্বরী প্রকল্প রূপায়ণ করা হয়নি। বিধায়ক হিসেবে আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সমস্যাগুলি নিয়ে কথা বলব। প্রশাসনের কর্তারও সেই সমস্যাগুলি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে জানালে আরও ভাল হবে। জেলা প্রশাসনকে এ কথা জানিয়েছি।
আবার, জেলার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র শুশুনিয়ার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য প্রস্তাব গিয়েছেন ছাতনার বিধায়ক শুভাশিস বটব্যাল। তাঁর ইচ্ছা, “শুশুনিয়ায় রোপওয়ে লাগিয়ে রিসর্ট তৈরি করে ইকো-ট্যুরিজম গড়ে তোলা হোক। সেই সঙ্গে সেচ, রাস্তাঘাটের উন্নতিরও প্রস্তাব দিয়েছি।” শালতোড়ার বিধায়ক স্বপন বাউরি বলেন, “আমার এলাকাতেও আদিবাসী কম নেই। পানীয় জল ও সেচের সমস্যা তীব্র। সমস্যার কথা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তোলার জন্য প্রশাসনের কর্তাদের জানিয়েছি।”
মুখ্যমন্ত্রী আসায় প্রত্যাশায় রয়েছেন সাধারণ মানুষও। বড়জোড়ার বাসিন্দা শুভজিৎ ঘোষ বলেন, “দুর্গাপুরের কাছেই বড়জোড়া শিল্পাঞ্চল। এখানে তথ্যপ্রযুক্তি পার্কের সঙ্গে আরও বেশ কিছু দূষণহীন শিল্প তৈরি হলে কর্মসংস্থান বাড়বে।” বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা সব্যসাচী চক্রবর্তীর দাবি, “শহরে পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। মুখ্যমন্ত্রী আশা করি এ ব্যাপারে নজর দেবেন।” |