দলীয় কর্মী খুনের পরে বলেছিলেন, বলরামপুরেই সভা করবেন।
আজ, শুক্রবার এক সময়ে মাওবাদীদের সেই ‘মুক্তাঞ্চল’-এই সভা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পরে এই প্রথম পুরুলিয়া সফরে আসছেন তিনি। এবং আসছেন এমন এক আবহে, যখন মাওবাদী-রাজ্য সরকার সংঘাত চরমে। গত বৃহস্পতিবার রাতে বলরামপুরের ঘাটবেড়াতেই তৃণমূল কর্মী জিতু সিংহকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছিল মাওবাদীদের বিরুদ্ধে। তার পরেই যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরুর স্পষ্ট ইঙ্গিতও দেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলরামপুরে আসছেন এমন এক আবহে, যখন মাওবাদীদের এই শক্ত ঘাঁটিতে তাঁর দলের শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছে। গড়ে উঠেছে ‘জঙ্গলমহল উন্নয়ন বিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ’। যারা মাওবাদীদের এলাকাছাড়া করার শপথ নিয়েছে। স্থানীয় যুবকেরা মিছিল করে ‘হিংসা নয়, শান্তি চাই’-এর স্লোগান দিয়েছেন। মাওবাদী বা জনগণের কমিটির বন্ধ অগ্রাহ্য করে জনজীবন স্বাভাবিক রাখা? সে-ও তো সাম্প্রতি দেখিয়েছে বলরামপুরই!
মমতা আসছেন এমন এক আবহে, যখন রবিবার বলরামপুরেরই মাওবাদী দম্পতি আত্মসমর্পণ করেছেন পুলিশের কাছে। আবার গত শনিবার ঘাটবেড়ায় হওয়া তাঁরই দলের জনসভায় যোগ দেওয়ার ‘অপরাধে’ ঘাটবেড়া লাগোয়া বেড়সা গ্রাম থেকে দুই তৃণমূল সমর্থককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে। বুধবার রাতে ঘাটবেড়ার থেকেই দুই মাওবাদী স্কোয়াড সদস্যকে ধরা হয়েছে। |
আসছেন এমন এক আবহে, যখন বৃহস্পতিবার দুপুরে দলের যুব সংগঠনের সদস্য-সমর্থকদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলেরই বিরুদ্ধে। এক জনকে ভর্তি করতে হয়েছে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে। ভাঙচুর হয়েছে যুব তৃণমূল কার্যালয়ে।
এ হেন মাওবাদীদের ‘গর্ভগৃহে’ স্বাভাবিক ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর সভা ঘিরে তুমুল উৎসাহ যেমন আছে, তেমনই রয়েছে কৌতূহল এবং চাপা উত্তেজনা। ১৫ অক্টোবর ঝাড়গ্রামে গিয়ে মাওবাদীদের সাত দিনের চরমসীমা বেঁধে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলরামপুরের কলেজ মাঠের সভায় মাওবাদীদের জন্য কি ফের কোনও কঠোর বার্তা তোলা রয়েছে? জঙ্গমহলের পাশাপাশি জেলার জন্য কি থাকবে বিশেষ কিছু প্যাকেজ? জানতে আগ্রহী গোটা পুরুলিয়ার মানুষ। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলরামপুরে আমাদের দলের কর্মী খুনের ঘটনার প্রতিবাদে সভা করবেন। উনি কী বলবেন, তার দিকে তাকিয়ে আছে জঙ্গলমহল।”
এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে গিয়ে ঘুম ছুটে গিয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের। শুক্রবার বেলার দিকে দুর্গাপুর থেকে সড়কপথে পুরুলিয়ায় পৌঁছনোর কথা মমতার। কিন্তু তিনি আসানসোল-রঘুনাথপুর হয়ে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক ধরে এখানে পৌঁছবেন, না কি বাঁকুড়া-হুড়া হয়ে ৬০-এ জাতীয় সড়ক ধরে তাঁর কনভয় পুরুলিয়া সদরে ঢুকবে, তা প্রশাসন গোপন রেখেছে। দু’টি রাস্তাতেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুরুলিয়া শহর থেকে মাওবাদী প্রভাবিত আড়শা হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বলরামপুরে আসার কথা। বুধবার রাত থেকে পুলিশি পাহারা চলছে এই রাস্তায়। সমস্ত সেতু ও কালভার্ট পরীক্ষা চলছে মাইন নিরোধক যন্ত্র দিয়ে। বলরামপুরের রাস্তায় রাস্তায় যৌথ বাহিনীর টহল। টহল দিচ্ছে ‘অ্যান্টি ল্যান্ডমাইন’ গাড়ি।
কলেজ মাঠে এ দিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা সরেজমিন খতিয়ে দেখেন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ ও পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সুনীলকুমার চৌধুরী। গোটা মাঠ ঘিরে রেখেছে বাহিনী। বিকেলে জনসভার প্রস্তুতি দেখতে আসেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়। প্রশাসন সূত্রের খবর, ১৫০০ পুলিশকর্মী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার পাঁচ অফিসার, ডিএসপি পদমর্যাদার ১২ জন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন। গঙ্গেশ্বর সিংহ বলেন, “বলরামপুরে সভা হওয়ায় আমরা নিরাপত্তার দিকে বাড়তি জোর দিয়েছি। সভাস্থল যে হেতু অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে, তাই শুক্রবার সকাল থেকে পাহাড়ের উপরে হেলিকপ্টার চক্কর দেবে। পাহাড়েও তল্লাশি চলছে। কারণ, পাহাড়ে মাওবাদীদের গতিবিধির খবর আমাদের কাছে রয়েছে।” |