উত্তর ২৪ পরগনার জেলা যুব কংগ্রেস নেতা দেবকুমার অধিকারীর খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হলেন দলেরই দলেরই এক নেতা। পুলিশ জানিয়েছে, ইসাহক সর্দার নামে ওই নেতা কাটিয়াহাট ব্লক কংগ্রেস সভাপতি। বুধবার রাতে বাদুড়িয়ার বেলগড়িয়া গ্রামের বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও ধৃতের দাবি, চক্রান্ত করে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। ইসাহক সর্দারকে গ্রেফতার নিয়ে পুলিশের ভূমিকাকে ন্যাক্কারজনক জানিয়ে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে জেলা কংগ্রেসের একাংশ। দেবকুমার খুনের ঘটনায় এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের দাবি, দেবকুমারবাবুকে সুপারি কিলার লাগিয়ে খুন করা হয়েছে।
বসিরহাটের এসডিপিও আনন্দ সরকার বলেন, “দেবকুমার খুনের ঘটনায় ইসাহক সর্দার সরাসরি যুক্ত বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তবে প্রাথমিক জেরায় জানা গিয়েছে, পঞ্চায়ত সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গোলমালের জেরেই এই খুন। অন্যান্য অভিযুক্তদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে।” বৃহস্পতিবার ধৃতকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তার আট দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। |
গত ২০ অক্টোবর, রাতে বাদুড়িয়ার কাটিয়াহাটে ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে একটি আমবাগানে গুলি করে খুন করা হয় দেবকুমারবাবুকে। পরে এক ব্যক্তি মোবাইলে ফোন করে পুলিশকে খুনের কথা জানান। দেবকুমারের মোবাইল ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা করে পুলিশ জানতে পারে দুই দুষ্কৃতী এই খুনের ঘটনায় জড়িত। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম না বললেও পুলিশ জানিয়েছে একজনের বাড়ি বিহারে। অন্যজন আগে কাটিয়াহাটে থাকলেও বর্তমানে তার ডেরা সল্টলেক এলাকায়। পেশাদার খুনি হিসাবে দু’জনেরই পরিচিতি রয়েছে। দু’জনকে নগদ ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দেবকুমারকে খুনের সুপারি দেওয়া হয়েছিল। গোটা ঘটনায় জড়িত ছিল মোট দশ জন। দেবকুমারকে খুন করার পরে দুই দুষ্কৃতীকে নিজের মোটর সাইকেলে বসিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে যায় শায়েস্তানগরের বাসিন্দা সেলিম সাহারিয়া ওরফে খান। খুনের ঘটনার পরই অবশ্য সে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। সেলিমকে জেরা করে পুলিশ স্বরূপনগরের ঘোষালদহের বাসিন্দা মাহবুব গাজিকে গ্রেফতার করে। তার কাছে জানা যায়ওই দুই দুষ্কৃতী বাংলাদেশে পালালেও বাকিরা এখনও বাদুড়িয়ায় রয়েছে। এর পরে বেলগড়িয়া গ্রাম থেকে সাবুর আলি সর্দার এবং খোড়গাছি থেকে স্বপন ঘোষ নামে দু’জনকে পুলিশ গ্রেফতারের পরে দেবকুমার খুনে কারা কারা জড়িত তা জানতে পারে।
পুলিশের দাবি, ধৃতদের জেরা করলে উঠে আসে খুনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হিসাবে কাটিয়াহাট ব্লক কংগ্রেস সভাপতি ইসাহক সর্দারের নাম। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটিয়াহাট এলাকায় প্রভাবশালী ওই নেতার স্ত্রী রাবেয়া বেগম স্থানীয় আটুরিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান হওয়ার পরে ইসাহকের প্রতাপ আরও বেড়ে যায়। পঞ্চায়েতের নানা কাজের টেন্ডার থেকে শুরু করে এলাকার ইটভাটাগুলির নিয়ন্ত্রণও নিজের হাতে তুলে নেন ইসাহক। ওই সময় এলাকায় ৯টি ইটভাটার লাইসেন্স দেওয়াকে কেন্দ্র করে দেবকুমারের সঙ্গে বিবাদ শুরু হয় ইসাহকের। কাটিয়াহাটে বাংলাদেশ সীমান্তে পণ্যবাহী লরি চলাচলের বিষয় নিয়েও দুই নেতার মধ্যে বেধে যায় গোলমাল। দলের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে দুই নেতার। ইতিমধ্যে পঞ্চায়েতে অনাস্থা এনে রাবেয়া বেগমকে প্রধানের পদ থেকে হটিয়ে দেওয়ার পরে বিবাদ চরমে ওঠে। একজনকে অন্যকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে বলে পুলিশের দাবি।
সীমান্তে চলাচলকারী পণ্যবাহী লরি থেকে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের তোলা আদায়ের বিরোধিতা করেন দেবকুমার। পুলিশের দাবি, এই অবস্থায় ওই দুই দুষ্কৃতী সুপারির প্রস্তাব লুফে নেয়।
বুধবার তাঁকে গ্রেফতারের পরে ‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে’ বলে দাবি করেন ইসাহক। তিনি বলেন, “মানুষ চায়নি বলে গ্রামের মধ্যে ইটভাটার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিছু সুবিধাবাদী মানুষ দেবকুমারকে ভুল বুঝিয়ে পঞ্চায়েতে অনাস্থা আনে। ইদানীং অন্য রাজনৈতিক দল এবং দুষ্কৃতীদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল। তারই সুযোগ নিয়ে আমার প্রভাব নষ্ট করতে কিছু মানুষ ওকে খুম করে আমাকে ফাঁসালো।”
ইসাহককে গ্রেফতারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ দলের জেলা সহ সভাপতি দিলীপ মজুমদার বলেন, ‘‘ইসাহক দলের এক বর্ষীয়ান নেতা। খুনের সঙ্গে কোনওভাবেই জড়িত নন। এই গ্রেফতারের প্রতিবাদে আমরা পুলিশের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামব।” যদিও জেলা যুব কংগ্রেস নেতা সম্রাট তপাদার বলেন, “এক নেতার অন্য আর এক নেতাকে খুনের ঘটনায় জনিয়ে পড়া ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এই ঘটনায় দলের আরও কেউ কেউ জড়িত। পুলিশ তাদেরও গ্রেফতার করুক।” তিনি আরও বলেন, “দিল্লিতে রাহুল গাঁধীকে এক ফ্যাক্স বার্তা পাঠিয়ে এ ব্যাপারে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, দলের ভিতরে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে চরম শাস্তি না দেওয়া হলে আমরা কংগ্রেস ছাড়তে বাধ্য হব।” |