মাইক ফুঁকে মতুয়াদের দুই ভাইয়ের কোন্দল
গে তিনি ছিলেন শুধুমাত্র মতুয়া মহাসঙ্ঘের সহ সঙ্ঘাধিপতি। কিন্তু এখন রাজনীতিতেও প্রভাব-প্রতিপত্তি বেড়েছে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের। সঙ্ঘের পদাধিকারী হওয়ার পাশাপাশি তিনি এখন রাজ্যের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী। মতুয়া মহাসঙ্ঘকেও নিজের মতো ঢেলে সাজতে চাইছেন। এত দিন ধরে সঙ্ঘের সাধারণ সভায় কার্যকরী কমিটি ঘোষণা করতেন সর্বভারতীয় মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা মঞ্জুলকৃষ্ণের দাদা কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর। সর্বসম্মতিক্রমে সেই নামের তালিকাই গৃহীত হত। কিন্তু এ বার বেঁকে বসেছেন মঞ্জুল। নিজেও তালিকা হাজির করেছেন। যা নিয়ে দুই ভাইয়ের কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এসেছে। বিষয়টি গড়িয়েছে থানা-পুলিশ পর্যন্ত।
একই মঞ্চে এক সঙ্গে নামের তালিকা প্রকাশ করছেন মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর
ও কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর। বৃহস্পতিবার পার্থসারথি নন্দীর তোলা ছবি।
বৃহস্পতিবার ছিল সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের কেন্দ্রীয় কমিটির ২৫ তম বার্ষিক সাধারণ সভা। প্রতি বছর রাস পূর্ণিমার এই দিনটিতে মতুয়াদের পীঠস্থান গাইঘাটার ঠাকুরনগরে সভা হয়। সেখানে নতুন কার্যকরী কমিটির সদস্যেরা মনোনীত হন। গত কয়েক বছরের মতো এ বারও মঞ্চে দাঁড়িয়ে মাইকে নাম ঘোষণা করছিলেন কপিল। প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম আসে প্রথমেই। একে একে পৃষ্ঠপোষক পদে তিনি পড়তে থাকেন বনগাঁর তৃণমূল সাংসদ গোবিন্দচন্দ্র নস্কর, হাবরার বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মঞ্জুলকৃষ্ণদের নাম। বেলা তখন প্রায় ১২টা। হঠাৎই এক দল অনুগামীকে নিয়ে সভাস্থলে আসেন মঞ্জুল। উঠে পড়েন মঞ্চে। কাগজ দেখে তিনিও পড়তে শুরু করেন তাঁর মনোনীত কমিটি সদস্যদের নাম। সামনে মাইক্রোফোন ছিল না। খালি গলাতেই চিৎকার করছিলেন মঞ্জুল। এক অনুগামী মাইক এগিয়ে দেন। দুই ভাই মাইকে তারস্বরে চেঁচিয়ে নামের তালিকা পড়তে থাকেন। দু’পক্ষের অনুগামীদের মধ্যে তখন তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে মঞ্চের নীচে। অশক্ত শরীরে বড়মা উঠে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করেছিলেন দুই ছেলেকে শান্ত করতে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! দু’পক্ষ পাঠ শেষ করে নেমে যায় মঞ্চ থেকে।
কপিল পরে বলেন, “যা হয়েছে গায়ের জোরে। এটা অন্যায় ও অনৈতিক। আমি সঙ্ঘাধিপতি। আমি যেটা ঘোষণা করেছি, সেটাই আসল কমিটি।” রাতের দিকে কপিল পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, মঞ্জুল তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “লিখিত অভিযোগ হয়েছে। আমরা আইনমাফিক তদন্ত করছি।”
এ দিনের ঘটনায় মঞ্জুল সরাসরি মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন। সাধারণ সভায় গোলমালের পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কটূক্তিও করেন তিনি। দিনভর টেলিফোনে যোগাযোগ করা যায়নি তাঁর সঙ্গে। দৃশ্যতই বিরক্ত বড়মা শুধু বলেন, “কমিটি গঠন স্থগিত। আপাতত পুরনো কমিটিই বহাল থাকল।”
মতুয়া মহাসঙ্ঘের অন্দরে কপিল-মঞ্জুল দুই ভাইয়ের আকচা-আকচি নতুন ঘটনা নয়। ভক্তেরা সে ব্যাপারে সম্যক ওয়াকিবহাল। কিন্তু হঠাৎ সেই তিক্ততা এমন প্রকাশ্যে চলে এল কী করে?
মতুয়া ভক্তদের একাংশ জানাচ্ছেন, মঞ্জুল আপাতত মতুয়া মহাসঙ্ঘকে নিজের মতো করে ঢেলে সাজতে চাইছেন। একদা ‘বামঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত কপিল বিধানসভা ভোটের কিছু আগে থেকেই বামেদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করেন। ইদানীং তাঁকে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গেই ওঠাবসা করতে দেখা যাচ্ছিল। তৃণমূল শিবিরে ঢুকে পড়ে দাদার এই ‘খবরদারি’ না-পসন্দ মঞ্জুলের। কপিলবাবুর পেশ করা তালিকায় নাম আছে জগদ্দলের প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক হরিপদ বিশ্বাসেরও। তিনি বলেন, “মতুয়াদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব ঢুকে পড়ছে। সঙ্ঘের বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠছে।” অন্য দিকে, জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কথায়, “যা হয়েছে তা মতুয়া মহাসঙ্ঘের নিজেদের ব্যাপার। আমাদের সরাসরি কিছু বলার নেই। তবে মঞ্জুল আমাদের মন্ত্রিসভায় আছেন। স্বভাবতই আমাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নৈতিক সমর্থন ওঁর দিকেই থাকবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.