|
|
|
|
লোকগানে সূচনা রাজবাড়ির রাসের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • এগরা |
অন্তত সপ্তাহ খানেক আগে থেকে শুরু হয়েছিল প্রস্তুতি। সেজে উঠছিল রাজবাড়ি চত্বরের মন্দিরগুলি। রাজবাড়ির পাশের মাঠেই আবার বসবে বিশাল মেলা। আসবেন লোকশিল্পীরা। দূর-দূরান্ত থেকে আসবেন বিক্রেতারা। তারও আয়োজন কম নয়। পঁচেটগড়ের রাস তো আর পাঁচটা উৎসবের মতো নয়! ফলে সব মিলিয়ে কয়েক দিন ধরে ব্যস্ততা ছিল তুঙ্গে।
সব দিকে কড়া নজর ছিল রাজবাড়ির সদস্যদের। পাঁচদিন ধরে উৎসব চলবে। এগারোদিন ধরে চলবে মেলা। কোনও কিছুতে যেন এতটুকু ফাঁক না থাকে। সেইমতো আলোয় সেজে উঠেছে গোটা রাজবাড়ি, মন্দির, রাসমঞ্চ এমনকি গোটা এলাকা। এলাকা ছাড়াও বাইরের জেলা এমনকি পাশের রাজ্যগুলি থেকে হাজারও লোক এসেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই যেমন রাজবাড়ির সামনে জড়ো হচ্ছিলেন এলাকার মানুষ। রাজবাড়ির মন্দির থেকে শোভাযাত্রা করে বিগ্রহ নিয়ে যাওয়া হবে রাসমঞ্চে। সন্ধ্যায় নানা ধরনের বাজনা বাজিয়ে সূচনা হল পটাশপুরের প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন পঁচেটগড় রাজবাড়ির রাস উৎসবের। কয়েকশো মানুষের বিশাল শোভাযাত্রা চলল রাসমঞ্চের দিকে। |
|
প্রাচীন হট্টনাগর মন্দির প্রাঙ্গণে রাস-উৎসব। এগরায় ছবি তুলেছেন কৌশিক মিশ্র। |
এ দিকে, রাজবাড়ির সামনেই তৈরি হয়েছে একাধিক মঞ্চ। রাজবাড়ির তরফে জানানো হয়েছে, গত বছরগুলির মতো এ বছরও মেলার ঐতিহ্য বজায় রেখে থাকছে লোকসাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ বারও বসেছে লোকগানের আসর। স্থানীয় বাসিন্দা সন্দীপ মাইতি বলেন, “রাজবাড়ির রাস উৎসব এটাই সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। প্রতি বছর জেলা এমনকি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকশিল্পীরা আসেন। সারি গান, যাত্রা, পালাগান চলে। এমন অনেক ধরনের গান, সংস্কৃতির কথা আমরা তেমন কিছু জানি না, যেগুলো প্রায় লুপ্ত হতে বসেছে, এমন কিছু শিল্পের সঙ্গে পরিচিত হতে পারি এই একটা সময়ে।”
এই মেলায় বাংলার লুপ্তপ্রায় এবং অনাদৃত লোকসংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা করা হয়। এখনও এই মেলায় পসরা নিয়ে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি এবং ওড়িশার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজির হন বিক্রেতারা। একই ভাবে আসেন লোকশিল্পীরা। বাংলা থেকে হারিয়ে যাওয়া নানা লোকগান, পালাগান ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান থাকে এই মেলায়। এলাকার লোক এই ক’দিন শুধু এই অনুষ্ঠানেই মেতে থাকেন।
রাজবাড়ির সদস্য এবং রাস উৎসব কমিটির কর্মকর্তা দিলীপ নন্দন দাস মহাপাত্র, পিনাকী নন্দন চৌধুরী যেমন বলেন, “এই উৎসব অনেকটা আমাদের পারিবারিক অনুষ্ঠানের মতো। পরিবারের সদস্যেরা অনেকেই জেলা, রাজ্যের বাইরে থাকেন। সারা বছর দেখা হয় না। কিন্তু এই একটা সময়ে যে যেখানেই থাকুক, রাজবাড়িতে আসেন। তবে আসার অন্যতম কারণ কিন্তু এই লোকসংস্কৃতি উৎসব।” শুধু পরিবারের লোকই নয়, এই সময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে রাজবাড়িতে আসেন আমন্ত্রিতেরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িতেও আত্মীয় কুটুম্বদের ভিড়। পাঁচ দিন ধরে শোভাযাত্রা তো আছেই। কিন্তু টানা ১১ দিন ধরে মেলা, লোকসাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সামিল হওয়ার সুযোগ কেউ হাতছাড়া করে! |
|
|
|
|
|