|
|
|
|
১০ নভেম্বর স্মরণ |
নিজেদের সরকারের ভূমিকায় ‘অসন্তুষ্ট’ নন্দীগ্রামের বিধায়ক |
আনন্দ মণ্ডল • নন্দীগ্রাম |
জমি-রক্ষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণসভায় নিজেদের সরকারের ভূমিকা নিয়েই অসন্তোষ প্রকাশ করলেন নন্দীগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক।
২০০৭-এর ১০ নভেম্বর ভূমি-উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির মিছিলে সিপিএমের গুলিচালনায় নিহতদের স্মরণে গত তিন বছরের মতোই বৃহস্পতিবারও তেখালি থেকে গোকুলনগর পর্যন্ত পদযাত্রা এবং গোকুলনগরে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। ভূমি-কমিটির নামেই যাবতীয় আয়োজন হলেও পুরোভাগে ছিলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। সেই স্মরণসভাতেই নন্দীগ্রামের বিধায়ক ফিরোজা বিবি বলেন, “নন্দীগ্রামের রক্তে রাজ্যে পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু নন্দীগ্রামের মানুষ এখনও বিচার পাননি। গণহত্যায় অভিযুক্তেরা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে। অত্যাচারী পুলিশ অফিসার, অন্য আধিকারিকেরাও রয়েছেন প্রশাসনে।” এর পরেই ফিরোজার মন্তব্য, “নন্দীগ্রামের মানুষ হিসাবে আমরা কিন্তু বিচার আদায় করবই।”
২০০৭-এর ১৪ মার্চ পুলিশি গুলিচালনায় নিহতদের পরিজন এবং ওই ঘটনায় আহত ও ধর্ষিতাদের দেরিতে হলেও আদালতের নির্দেশে ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল পূর্বতন বাম সরকার। কিন্তু ১০ নভেম্বরের ঘটনায় স্বজন-হারানো পরিবারগুলি বা আহত-অত্যাচারিতরা ক্ষতিপূরণ পাননি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ক্ষতিপূরণ-সংক্রান্ত সুপারিশ কার্যকর করেনি আগের সরকার। নন্দীগ্রামে জমি-রক্ষা আন্দোলনের প্রধান শক্তি তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসায় ক্ষতিপূরণের আশা যেমন বেড়েছে, তেমনই তীব্র হয়েছে ১৪ মার্চ ও ১০ নভেম্বরের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিও।
১৪ মার্চ নিজের কিশোর-পুত্র ইমদাদুলকে হারিয়েছিলেন ফিরোজা। এ দিনের সভায় হাজির সাউদখালির সুষমা মাইতি, কল্যাণী সিংহের স্বামীরা আবার ১০ নভেম্বরের ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ। চার বছরেও তাঁদের পরিণতি সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু জানাতে পারেনি জেলা পুলিশ। সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশে নিখোঁজদের সম্পর্কে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। স্বামী ভগীরথ মাইতি নিখোঁজ হওয়ার পর নাবালক পুত্রকন্যাকে নিয়ে কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছেন সুষমা। তাঁর ক্ষোভ, “চার বছরেও স্বামীর খোঁজ পেলাম না। সরকার কিছু করল না। বাধ্য হয়েই আমরা কয়েক জন আদালতে আবেদন করি। তাই সিআইডি খোঁজ-খবর করছে।” ভূমি-কমিটির মিছিলে গিয়েই নিখোঁজ হয়েছিলেন বলরাম সিংহ।
নাবালক পুত্র, শাশুড়িকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম বলরামবাবুর স্ত্রী কল্যাণীদেবীর প্রশ্ন, “স্বামীদের, ছেলেদের যারা গুম করল, খুন করল তাদের শাস্তি আর কবে হবে!”
ওই সভায় তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের জন্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠকে গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, “বুদ্ধবাবুর নির্দেশেই তেখালি পুলিশ ফাঁড়ি বন্ধ রেখে, সব ক্যাম্প থেকে পুলিশ সরিয়ে ৪ বছর আগের সেই নভেম্বরে সিপিএম নন্দীগ্রাম দখল অভিযানে নেমেছিল। গোটা রাজ্যের দুষ্কৃতীদের এখানে জড়ো করে লক্ষ্মণ শেঠরা আক্রমণের ছক কষেছিলেন। তাই বুদ্ধবাবু, লক্ষ্মণবাবুদেরও গ্রেফতার করতে হবে।”
স্মরণসভায় ক্ষতিপূরণ ও শাস্তির প্রশ্নে সরব হন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শিশির অধিকারী, এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসুও। |
|
|
|
|
|