প্রিয় ইডেন। যেখানে হ্যাটট্রিকের আলোয় স্টিভ ওয়ের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের বিজয়রথ থামিয়ে দেওয়ার রংমশাল জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন দশ বছর আগে। ধোনির টিমের হয়ে সেখানে তো সর্দারের নামা হচ্ছেই না। বছরের শেষে অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের দেশে টেস্ট সিরিজের ভিসা অর্জন করতে পারবেন কি না তা নিয়েও ঘোরতর সংশয় তৈরি হয়েছে।
হরভজন সিংহকে নিয়ে খুব তাৎপর্যপূর্ণ দু’টো ঘটনা বৃহস্পতিবার ঘটে গেল। একটা নয়াদিল্লিতে। যখন জাতীয় নির্বাচকেরা খুব কম সময় ব্যয় করে ইডেন টেস্টের জন্যও একই দল রেখে দিলেন আর সভায় হরভজনকে নিয়ে একটা শব্দও উচ্চারণ করা হল না। নির্বাচক-পঞ্চক তো তোলেনইনি। অধিনায়ক ধোনিও সর্দারকে নিয়ে ট্যাঁ-ফো করতে পারেননি।
দ্বিতীয় ঘটনাটা ঘটল মোহালিতে। যেখানে হরভজন সিংহ পঞ্জাবের হয়ে রঞ্জি ম্যাচ খেলতে নামলেন। দিল্লির বৈঠকে যখন হরভজন অনুচ্চারিত থেকে যাচ্ছেন, তখন মোহালিতেও তাঁর অবস্থা খুব খারাপ। ওড়িশার সাত উইকেট পড়ল। তিনিহরভজন পেলেন মাত্র এক উইকেট। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, মোহালির এই ম্যাচ দেখতে কোনও জাতীয় নির্বাচককেই পাঠানো হল না। নির্বাচকেরা গিয়েছেন মেরঠে। যেখানে উত্তরপ্রদেশ খেলছে সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। রবীন্দ্র জাডেজাকে দেখতে চান তাঁরা। সুরেশ রায়নাকে দেখতে চান। এমনকী রুদ্রপ্রতাপ সিংহকে দেখার কথাও উঠেছে। কিন্তু হরভজন সিংহ যেন তাঁদের ‘রাডার’-এই নেই! নির্বাচক-প্রধান কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত বৈঠকের পর বলে দিলেন, “দিল্লিতে দারুণ খেলেছে এই টিম। তাই কোনও পরিবর্তনের কথা আমরা ভাবিইনি।”
এমনিতে বৃহস্পতিবার দিল্লির দল নির্বাচনী সভায় দু’একটা জিনিস পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। যেমন ইডেনে ২-০ হয়ে গেলেও ধোনি বিশ্রাম নেবেন না। তেমনই শোনা যাচ্ছে, জাহির খান পরের রাউন্ডের রঞ্জি ম্যাচ থেকে মাঠে ফিরতে পারেন। আর হরভজনকে নিয়ে কোনও আলোচনা না হয়ে যেন আরও বড় বার্তা লেখা হয়ে থাকল। বাকি সিরিজেও যদি রবিচন্দ্রন অশ্বিন নামের ঘোড়া চলতে থাকে তা হলে তাঁর মাথার উপর মেঘলা আকাশ আরও মেঘাচ্ছন্ন হয়ে উঠল। এর সঙ্গে নির্বাচকেরা আবার প্রজ্ঞান ওঝার বোলিং নিয়েও যথেষ্ট প্রভাবিত। অস্ট্রেলিয়ায় দুই স্পিনারের বেশি পাঠানো হবে না সেটা একটা দিক। আরও মারাত্মক দিক হচ্ছে, নির্বাচকদের মনোভাব যে, অস্ট্রেলিয়া মানেই হরভজনের আক্রমণাত্মক শরীরী ভাষা দরকার হবেএই সব যুক্তিকে তাঁরা পাত্তা দেবেন না।
অতঃপর কেউ কেউ হরভজনের সঙ্গে তাঁর প্রিয় প্রাক্তন অধিনায়কের তুলনা খুঁজে পাচ্ছেন। গুরু গ্রেগের জমানায় যেমন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে ঘরোয়া ক্রিকেটের মাঠে মাঠে পরীক্ষা দিয়ে বেড়াতে হয়েছিল। হরভজনের জন্য এখন সেটাই দেশের ক্রিকেট-নিয়ন্তাদের রায়। সৌরভ প্রবল বিরোধী হাওয়াকে হারিয়ে অসাধারণ প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছিলেন। শততম টেস্ট খেলেছিলেন। বিশ্বকাপ খেলেছিলেন। আটানব্বই টেস্টের চক্রব্যূহে আটকে পড়া তাঁর প্রিয় অফস্পিনার পারেন কি না সেটাই এখন দেখার।
|
দ্বিতীয় টেস্টে ফিরছে ‘ইডেন উদ্যান থেকে বলছি’
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
আগামী সোমবার থেকে অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় টেস্টে ফিরে আসছে ‘ইডেন উদ্যান থেকে বলছি’। অর্থাৎ বাংলায় টেস্টের ধারাভাষ্য। অজয় বসু, পুষ্পেন সরকাররা না থাকলে কী হবে, বাংলা ধারাভাষ্য আকাশবাণী ফেরাচ্ছে সিএবি-র অনুরোধে। অথচ সচিনের শততম সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও টেস্ট শুরুর তিন দিন আগেও টিকিট বিক্রির বাজার ধরতে পারছে না।
দশ বছর আগে কোনও টেস্টে শেষ বার বাংলায় ধারাবিবরণী হয়েছিল ইডেনে। ২০০১-এর সেই ঐতিহাসিক টেস্ট, যেখানে ভিভিএস লক্ষ্মণ-রাহুল দ্রাবিড়ের দুর্ধর্ষ ব্যাটিংয়ে নতজানু হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। মাঝে আর হয়নি।
কিন্তু টেস্টকে ঘিরে শহরের উত্তাপ তেমন কোথায়? আজ শুক্রবার শহরে ঢুকে পড়ছে দু’টো টিম। প্র্যাক্টিসের বালাই কারওরই নেই, কিন্তু ভারতীয় দলের সঙ্গে সচিন শুক্রবার আসছেন না। তিনি আসবেন ১২ নভেম্বর। বিয়ে-পর্ব মিটিয়ে রবিচন্দ্রন অশ্বিনেরও পরে আসার কথা। এ দিন থেকে আবার টেস্টের টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে গেল। এবং ‘সিজন’ টিকিট বিক্রির হাল বেশ খারাপ। তিন রকম মূল্যের টিকিট ধার্য করা আছে টেস্টের জন্য। পাঁচশো, হাজার এবং পনেরোশো টাকার। কিন্তু প্রথম দিন সব মিলিয়ে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৯৮-টি টিকিট! সিএবি কর্তারা আশা করছেন, ‘সিজন’ নয়, ‘ডেইলি’ টিকিটের চাহিদা বেশি হবে এ বার। তাঁদের বক্তব্য, সচিনের সেঞ্চুরি করার সম্ভাবনা মাঠে একবার দেখা দিলে, স্টেডিয়ামও অনায়াসে ভরে যাবে। |