তিন বছর ভারতের জাতীয় দলের কোচ থাকাকালীন সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়াটাই তাঁর সবচেয়ে বড় আক্ষেপ বলে নিজের আত্মজীবনী ‘ফিয়ার্স ফোকাস’-এ লিখেছেন গ্রেগ চ্যাপেল।
চ্যাপেল লিখেছেন, “আমার সবচেয়ে বড় আক্ষেপ হল ওয়ান ডে টিমে সচিনের চার নম্বরে ব্যাট করা নিয়ে ওর সঙ্গে ঠিকঠাক কথা বলতে না পারা। এটা লজ্জানক কারণ, ঘটনাটা ঘটার আগে আমি আর সচিন এটা নিয়ে গভীর ভাবে কথা বলেছিলাম। কিন্তু ফলাফল বা উন্নতি দেখার জন্য আমার ধৈর্যের অভাব একেবারেই পক্ষে যায়নি।’’ যোগ করেছেন, “যে ভুলগুলো আমি করেছিলাম, তার সবগুলো যে পশ্চিমী, তা নয়। কিন্তু যখন খেলতাম, ক্যাপ্টেন হিসেবে এই একই ভুল করতাম। সোজা কথায়, আমার প্ল্যান আমি সিনিয়র ক্রিকেটারদের যথাযথ ভাবে বোঝাতে পারিনি। সচিন, সহবাগ, লক্ষ্মণদের বোঝাতে পারিনি আমি বদলের প্রতীক হলেও ভবিষ্যতের টেস্ট দলের পরিকল্পনা থেকে ওরা বাতিল নয়। আমি যখন ওদের সঙ্গে কথা বলতাম, কিছুটা জোর দিয়েই বলতাম। একবার দক্ষিণ আফ্রিকায় সচিন ও সহবাগকে ডেকে বলেছিলাম, ওদের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু চাই। ওদের মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম ওদের আমার কথা বলার ধরনটা পছন্দ হয়নি। পরে ওই রুমে থাকা রাহুল আমাকে বলেছিল, গ্রেগ, কেউ কখনও ও ভাবে ওদের সঙ্গে কথা বলেনি।” ভারতীয় বোর্ডের দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন চ্যাপেল। তাঁর বক্তব্য বিভিন্ন বিল এবং পারিশ্রমিক আটকে দিয়ে বোর্ড তাঁর ভারতে থাকা দুঃসহ করে তুলেছিল। “বেঙ্গালুরুর তাজ ওয়েস্টএন্ডে আমাদের থাকাটাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হত না। ভারতীয় বোর্ড হোটেলের বিল দিতে দেরি করত। আমি যখন ট্যূরে বাইরে থাকতাম, আমার স্ত্রী জুডি বুঝতে পারত না, ভারতীয় বোর্ড আমাদের ব্যাপারে যা করতে দায়বদ্ধ, তা ঠিকঠাক করা হবে কি না।” অভিযোগ করেছেন, তিনি এবং সহকারী ইয়ান ফ্রেজারের পারিশ্রমিক মাঝে মাঝেই অনেক দেরিতে দেওয়া হত। তবে শরদ পওয়ার আসার পরে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। ‘এ নিউ হোপ’ শীর্ষক অধ্যায়ে চ্যাপেল লিখেছেন, কী অসহনীয় চাপ নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটারদের খেলতে হয়, বিশেষত সচিনকে। “সচিনের চেয়ে চাপ কাউকে নিতে হয় না। এমনকী ডন ব্র্যাডম্যানকে এতটা প্রত্যাশার চাপ নিতে হয়নি। সেই ’৮৯ থেকে সচিন এই চাপ নিয়ে আসছে। যখম টিম বাইরে যেত, ও কানে হেডফোন নিয়ে বসে থাকত। পাশেও তাকাত না। ” এমনকী সচিনকে একবার একদিন ছুটি নিতে বললেও তিনি তা নিতেন না, প্রত্যাশার চাপে। “যদি একদিন ট্রেনিং না করে ও ম্যাচে ব্যর্থ হয়, ওকে দোষ দেওয়া হবে। লোকে ব্যাপারটা দেখবে। এমনকী কখনও ওর রাস্তায় বেরনোরও উপায় নেই। ও কোনও বিশ্রাম পায় না।’
চ্যাপেল জানাচ্ছেন, ২০০৭-এ কটক বিমানবন্দরে তাঁর উপর আক্রমণের পরে তিনি ঠিক করেন, যা-ই হোক, তিনি আর ভারতের কোচ থাকবেন না। “ঘটনার পরে একটা নামী সংবাদপত্র খবর করেছিল, ‘চ্যাপেলকে আক্রমণ করার আরও ভাল পাঁচটা কারণ’। তার পর আর নতুন করে চুক্তি সই করার কোনও কারণ দেখিনি।” |