|
|
|
|
পুলিশকর্মী-গাড়ি অপ্রতুল, থানায় জমে উঠেছে মামলার পাহাড় |
পীযূষ নন্দী • আরামবাগ |
রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটে গিয়েছে। কিন্তু অশান্তি কমার লক্ষণ নেই গোটা আরামবাগ মহকুমা জুড়ে। আগে লড়াই হত ডান-বাম দু’পক্ষের। ইদানীং আবার তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরও পোহাতে হচ্ছে হুগলি জেলার এই অংশের মানুষকে। শান্তি রক্ষায় পুলিশকে ‘তৎপর’ এবং একই সঙ্গে ‘নিরপেক্ষ’ থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু আরামবাগ মহকুমার চারটি থানায় পরিকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সমস্যা হচ্ছে বলে মনে করেন পুলিশ কর্তারা। এ দিকে, মামলা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে এই চারটি থানায়।
আরামবাগ মহকুমায় বরাবরই রাজনৈতিক গোলমালের ঘটনা বেশি। এ ছাড়া, পারিবারিক বিবাদ বা অন্য অভিযোগুলি তো আছেই। অনেক ক্ষেত্রে ছোটখাট সমস্যাতেও লাগছে রাজনৈতিক রঙ। একই দিনে একটি থানা এলাকার একাধিক জায়গায় অশান্তি ছড়ালে পুলিশকে নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছে।
পুলিশের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আরামবাগ থানায় ৬২৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। গোঘাটে সংখ্যাটা ৩৮৩। খানাকুল থানায় মামলা হয়েছে ২৯৩টি। পুড়শুড়ায় ৩ নভেম্বর পর্যন্ত দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা ১৯৬টি। গত কুড়ি বছরের মধ্যে সংখ্যার নিরিখে এটি ‘রেকর্ড’ বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারাই। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই সংখ্যা যে আরও বাড়বে, সে কথা বলাইবাহুল্য। ২০১০ সালে আরামবাগের চারটি থানায় মামলার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪৪৮, ২৪৬, ৩১০ এবং ১৮০।
আরামবাগে ভৌগোলিক অবস্থান বিচার করেই পুলিশ কর্মী, গাড়ির সংখ্যা বাড়ানো জরুরি বলে বরাবর মনে করে পুলিশ মহল। আরামবাগ থানার ভৌগোলিক এলাকা ১৭২.৪৭ স্কোয়ার কিলোমিটার। এই এলাকার মধ্যে আছে ১৫টি পঞ্চায়েত এবং ১৬৬টি গ্রাম। জনসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ৮০ হাজার। এ বার আসা যাক থানার পরিকাঠামোর প্রসঙ্গে। এই থানায় আইসি ছাড়া আছেন ৫ জন সাব ইন্সপেক্টর। ৯ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর এবং ১৫ জন মাত্র কনস্টেবল। মায়াপুর ও কাবলেতে দু’টি পুলিশ ক্যাম্পে আছেন এক জন করে এএসআই এবং সাকুল্যে জনা চার-পাঁচ কনস্টেবল ও কয়েক জন লাঠিধারী হোমগার্ড। আরামবাগ থানায় গাড়ি চারটি। গাড়ি-পিছু দৈনিক তেল মেলে ৮ লিটার।
মহকুমা সদরেই পুলিশ কর্মী, গাড়ির সংখ্যার এই হাল। বাকি তিনটি থানার অবস্থা আরও করুণ। খানাকুলে ভৌগোলিক এলাকা আরও বড়, ১৮৮.৩৩ স্কোয়ার কিলোমিটার। গ্রামের সংখ্যা ১৭৭। জনসংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষের উপর। মুণ্ডেশ্বরী, দামোদর, দ্বারকেশ্বর এবং তাদের অসংখ্য শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এই এলাকায়। জলপথ পেরিয়ে যেতে হয় বহু এলাকায়। এই থানায় ওসি ছাড়া আছেন মাত্র ৪ জন সাব ইন্সপেক্টর। ৬ জন এএসআই এবং ১৭ জন কনস্টেবল। থানার দু’টি ক্যাম্প এবং ররাজ্য সশস্ত্র বাহিনীর তিনটি ক্যাম্প থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কর্মীর সংখ্যা কম বলে মনে করেন দফতরের কর্তারা। গাড়ি আছে এখানে মাত্র দু’টি। তেল বরাদ্দ, গাড়ি পিছু দৈনিক সেই ৮ লিটার। যা থানা থেকে অরুণ্ডা, মাড়োখানা কিংবা নতিবপুরের মতো এলাকায় গেলেই শেষ।
গোঘাট থানার ভৌগোলিক এলাকা ৩৭৭ স্কোয়ার কিলোমিটার। গ্রামের সংখ্যা ২৯১। লোকসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ৯০ হাজারের মতো। থানায় ওসি ছাড়া আছেন ৩ জন এসআই এবং ৫ জন এএসআই। কনস্টেবল ২৪ জন। এ ছাড়া, বদনগঞ্জে ১টি ফাঁড়ি ও দু’টি ক্যাম্প আছে ভেউটিয়া ও বহেররাশোলে। ক্যাম্প চলে দু’জন করে কনস্টেবল ও হোমগার্ড দিয়ে। বদনগঞ্জ ফাঁড়িতে ২ জন এএসআই এবং ১০ জন কনস্টেবল। বিশাল এই এলাকার জন্য গাড়ি মাত্র দু’টি। তেলের বরাদ্দ একই।
পুড়শুড়া থানা এলাকাটি তুলনায় ছোট। ৯৬.৯২ স্কোয়ার কিলোমিটার। লোকসংখ্যা ১ লক্ষ ৬০ হাজারের মতো। ওসি, তিন জন এসআই এবং ৬ জন এএসআই আছেন এখানে। কনস্টেবল আছে ১৮ জন। গাড়ির সংখ্যা ৩টি। পুলিশ কর্মীদের বক্তব্য, থানাগুলিতে কর্মীর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় আছে অর্ধেক। গাড়িও তাই।
কিন্তু অভিযোগ এত বাড়ছে কেন? থানা সূত্রে নানা ব্যাখ্যা মিলেছে এ প্রশ্নের। বাম জমানায় সব অভিযোগ নথিভক্তই হত না বলে পুলিশ মহলের একাংশই জানাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতাও সে কথা বলে। অনেকে পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে সরাসরি আদালতে মামলা করতেন। এখন মুখ্যমন্ত্রী ভরসা দেওয়ায় অনেকে সালিশির জন্য পঞ্চায়েত, রাজনৈতিক দলের কাছে না গিয়ে সরাসরি থানায় আসছেন। আবার ব্যক্তিগত স্তরে কাউকে ‘জব্দ’ করতে চাইলে সামান্য কারণেও মামলা ঠুকে দিচ্ছেন। এ ছাড়া রাজনৈতিক হিংসা বৃদ্ধি তো আছেই। সিপিএম-তৃণমূল মারামারির পাশাপাশি তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেও অশান্তি বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পুরনো মামলাগুলি নতুন করে তদন্তে দাবি উঠছে।
কিন্তু এই পরিকাঠামো নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণ কতটা সম্ভব? তদন্তই বা কেমন এগোবে? আরামবাগের এসডিপিও আকাশ মাগারিয়া বলেন, “অনেক থানায় কর্মী সংখ্যা কম। গাড়িও অপ্রতুল সর্বত্র। সমস্ত অসুবিধার কথা রাজ্যস্তরে জানানো হয়েছে। মামলাগুলির নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত কী ভাবে সম্ভব, সে ব্যাপারে পরিকল্পনা চলছে।” কিন্তু মামলার সংখ্যা বাড়ছে কেন? এসডিপিও-র বক্তব্য, “পুলিশ যথাযথ ভূমিকা পালন করছে। মানুষ পুলিশের উপরে আস্থা রাখছেন।”
আরামবাগের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিনয় দত্ত বলেন, “মহকুমায় আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীই তো পুলিশমন্ত্রী। থানাগুলির উন্নতির জন্য যা করা দরকার, তা না করে তিনি চমকপ্রদ রাজনীতি করছেন। না আছে পরিকাঠামো উন্নয়নে কার্যকরী কোনও উদ্যোগ, না কোনও পরিকল্পনা।” তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমান বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত বিষয়টি জানেন। পদক্ষেপও করছেন।” এ প্রসঙ্গে, জঙ্গলমহলে পুলিশে লোক নিয়োগের সরকারি সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেন পারভেজ।খানাকুলে ক্রিকেট। বৃহস্পতিবার সকালে পুড়শুড়া বিধানসভা এলাকার খানাকুলের ছত্রশালে ৪ ওভারের একটি প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ হয়ে গেল। বিধায়ক একাদশ বনাম থানা একাদশের এই খেলায় থানা একাদশ জয়ী হয়েছে। তাদের রান ৪২। পরে ব্যাট করতে নেমে বিধায়ক একাদশ ২৬ রান তোলে। বিধায়ক একাদশের ক্যাপ্টেন পারভেজ রহমান বলেন, “সৌহার্দ্য এবং সম্প্রীতির লক্ষে এই ম্যাচকে ঘিরে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গিয়েছে।” |
|
|
|
|
|