|
|
|
|
পাল্টা সরব কংগ্রেসও |
গিলানিকে ‘শান্তিকামী’ বলার নিন্দায় বিজেপি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
মুম্বই হামলার ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার পরেও পাক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিকে ‘শান্তিকামী’ আখ্যা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কড়া সমালোচনা করল বিজেপি। মলদ্বীপে সার্ক সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকের পরে পাক প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মনমোহন সিংহের ওই মন্তব্য ‘ভুল’ বলে মনে করেন বিজেপি নেতৃত্ব। পাল্টা সমালোচনায় কংগ্রেসও লাহৌর বাসযাত্রা, সংসদে জঙ্গি হামলা বা জিন্না প্রশ্নে আডবাণীর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজেপি নেতৃত্বকে বিঁধেছে।
প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা যশবন্ত সিন্হা আজ বলেন, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্তপারের সন্ত্রাসই সবথেকে বড় বিষয়। অথচ সন্ত্রাস রুখতে পাকিস্তান যে আগ্রহী, তেমন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী আগে বলেছিলেন, ২৬/১১-এর দোষীদের যতক্ষণ না শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ ভারত কোনও আপস করবে না। অথচ আজ পর্যন্ত মুম্বইয়ে সন্ত্রাস হামলার অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করেনি পাকিস্তান।” তিনি জানান, মনমোহন যখন গিলানিকে ‘শান্তিকামী’ বলছেন, তখন হাফিজ সইদ বা জামাত-উদ-দাওয়ার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগের প্রমাণ নেই বলে মন্তব্য করছেন পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রেহমান মালিক! তার পরেও পাক প্রধানমন্ত্রীকে ‘শান্তিকামী’ অ্যাখ্যা দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ‘ভুল’ বলে মন্তব্য করেন যশবন্ত।
সমালোচনায় ক্ষুব্ধ কংগ্রেস পাল্টা মুখ খুলেছে। দলের মুখপাত্র মনীশ তিওয়ারি বিজেপির ‘দুর্বল স্মৃতি’ নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, “এ সব কথা বলার আগে ওদের নিজেদের দিকে তাকানো উচিত!” তাঁর প্রশ্ন, “কে বাস নিয়ে লাহৌরে গিয়েছিল? তার পরে কি কিছুই হয়নি? কারা সংসদে বা জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় হামলা চালিয়েছিল? তখন কেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফকে ভারতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন? জিন্নাকে ধর্মনিরপেক্ষতার সার্টিফিকেট কে দিয়েছিলেন?”
বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু এটাও মনে রাখা জরুরি যে, আলোচনা করতে গিয়ে দেশের স্বার্থ যেন ‘ক্ষুণ্ণ’ না হয়। এ প্রসঙ্গে লাহৌর বাসযাত্রার পরে কার্গিল যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে বিজেপি নেতা প্রকাশ জাভরেকর জানান, তার পরেও বাজপেয়ী মুশারফের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসেছিলেন। তাঁর কথায়, “কিন্তু বাজপেয়ী বন্ধুত্বের হাত বাড়ানোর পরেও মুশারফ সন্ত্রাস প্রশ্নে সাড়া না দেওয়ায় আগরা সম্মেলন ভেস্তে গিয়েছিল।”
মলদ্বীপে সার্ক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে মনমোহন পাকিস্তান সম্পর্কে যে মনোভাব দেখিয়েছেন, তাতে মিশরের শর্ম-অল-শেখের ছায়াই দেখছেন বিজেপি নেতৃত্ব। যশবন্তের বক্তব্য, রেহমান মালিক বলেছেন, হাফিজ সইদের নেতৃত্বাধীন জামাত-উদ-দাওয়ার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনও প্রমাণ নেই। অথচ সারা পৃথিবীর কাছে হাফিজ সইদ ও আইএসআই-এর সন্ত্রাসবাদী গতিবিধির অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রীর কথায়, “রেহমান মালিক আজমল কাসভকে ফাঁসি দেওয়ার কথা যেমন বলছেন, তেমনই সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণে অভিযুক্তদেরও ফাঁসির দাবি তুলছেন! ওরা সন্ত্রাস প্রশ্নে সব সময় ভারতকেও ওদের সঙ্গে এক সূত্রে বাঁধার চেষ্টা চালায়!” তাঁর অভিযোগ, ভারত যখনই কাশ্মীরে পাক হস্তক্ষেপের কথা বলে, তখনই পাকিস্তান পাল্টা বালুচিস্তানের প্রসঙ্গ টানে। যশবন্ত বলেন, “এখন ২৬/১১-র কথা বলতে গেলে পাকিস্তান হিন্দু সন্ত্রাস ও সমঝোতা বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ টানছে! আর মনমোহন আগের মতোই সেগুলির কোনও প্রতিবাদ না করে নিঃশব্দে হজম করে যাচ্ছেন!” কংগ্রেস অবশ্য বিজেপির এই অভিযোগ মানতে নারাজ। মনীশ তিওয়ারি এ দিন রেহমান মালিকের মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “কাসভের কী হবে, তা ভারতের বিচারবিভাগ ঠিক করবে। কিন্তু বড় প্রশ্ন হল, ২৬/১১-র অপরাধীরা, যারা পাকিস্তানে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে বা নিরাপত্তা রক্ষীদের পাহারায় রয়েছে, তাদের ব্যাপারে ইসলামাবাদ কী করছে?”
বিজেপি নেতারা এ দিন জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাইলেও ২৬/১১-র তদন্ত বা কাশ্মীর প্রশ্নে তাঁরা ইসলামাবাদকে একাধিক বারই নিজেদের মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন। দলের এক নেতার বক্তব্য, পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী হওয়ার পরেই হিনা রব্বানি খার গত জুলাই মাসে এ দেশে এসে হুরিয়তের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তার পরে তিনি ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ-র সঙ্গেও বৈঠক করেন। ওই নেতার কথায়, “পরে হিনা সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করেন। সে সময় হুরিয়ত প্রসঙ্গে তো বটেই, ২৬/১১ তদন্তে ‘শূন্য অগ্রগতির’ জন্যও তাঁর কাছে সরকারি ভাবে অসন্তোষ জানান সুষমা।”
যশবন্তের কথায়, “যখন ভারতীয় সেনা, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী সন্ত্রাসবাদী কাজে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে সরব হচ্ছেন, তখন নিজের মন্ত্রিসভার সদস্যদেরই অবস্থান না জানার তো কথা নয় প্রধানমন্ত্রীর। তা হলে কী করে তিনি বিদেশের মাটিতে গিয়ে পাকিস্তানের বিষয়ে উদাসীন থাকতে পারেন? কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসে হামলার পিছনেও আইএসআই-এর ভূমিকা সামনে এসেছে। এত সহজে অতীত ভুলে গেলে কী করে হবে?” বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, পাকিস্তান ‘স্টেট অ্যাক্টর’ ও ‘নন-স্টেট অ্যাক্টর’-এর মধ্যে বিভাজন দেখিয়ে যুক্তির জাল বুনছে। তাদের মাটি থেকে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসের কথা বেমালুম অস্বীকার করছে। অথচ তার পরেও মনমোহন বা বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ বলছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের আস্থার ঘাটতি কমছে! সংসদের আসন্ন অধিবেশনে এই সব বিষয় নিয়ে সরকারকে বেঁধার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি। |
|
|
|
|
|