বৃহস্পতিবারও ৩০টির বেশি উড়ান বাতিল করল কিংফিশার এয়ারলাইন্স। ফলে এ দিনও দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে নাকানিচোবানি খেলেন হাজার হাজার যাত্রী। শেষ মুহূর্তে যাঁদের বাধ্য হয়েই অন্য সংস্থার বিমানে সওয়ার হতে হয়েছে, টিকিটের পিছনে তাঁদের প্রায় ২০-৪০% বেশি অর্থ গুনতে হয়েছে। কলকাতা বিমানবন্দরেও এ দিন কিংফিশারের ন’টি উড়ানের মধ্যে দু’টি বাতিল করা হয়েছে বলে সংস্থা সূত্রের খবর।
এই নিয়ে গত চার দিনে দেশ জুড়ে ১২০টিরও বেশি উড়ান বাতিল করল বিজয় মাল্য-র এই সংস্থা। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, কিছু বিমানের ‘বিজনেস ক্লাস’-এ আসন বাড়ানো হচ্ছে। ফলে আপাতত স্থগিত রাখতে হয়েছে সেগুলির উড়ান। কিংফিশারের সিইও সঞ্জয় অগ্রবাল বলেন, “যে সব রুটে একাধিক উড়ান আছে কিংবা যে রুটে যাত্রী কম হয়, সেখানে উড়ান কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংস্থার মুনাফা বাড়াতে এই রুট ঢেলে সাজারই অঙ্গ এই পুরো প্রক্রিয়াটা।” যদিও সংস্থা সূত্রে খবর, শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছুটিতে গিয়েছেন ৩০ জন পাইলট ও কেবিন কর্মী। তাঁরা এখনও কাজে না-ফেরাতেও সমস্যা জট পাকিয়েছে। তবে অন্য একটি রিপোর্ট জানাচ্ছে, অক্টোবরে ঠিক সময় বেতন ও ভাতা দিতে না-পারায় কিছু দিন আগেই সংস্থা ছেড়ে চলে গিয়েছেন প্রায় ১০০ জন পাইলট। ফলে বিপাকে পড়েছে তারা। সঞ্জয় অবশ্য জানিয়েছেন, এই ঘটনা ঘটেছে প্রায় সাত মাস আগে। এখন কাজে বহাল ৬৫০ জনেরও বেশি পাইলট। তবে কর্তৃপক্ষ উড়ান বাতিলের স্বপক্ষে যা-ই যুক্তি দিক না কেন, এই মুহূর্তে কিংফিশার এয়ারলাইন্সের আর্থিক ছবিটা কারওই অজানা নয়। গত ২০১০-’১১ সালে লোকসান গুনতে হয়েছে ১,০২৭ কোটি টাকা। এই মুহূর্তে ঘাড়ে চেপে বসে ৭,০৫৭.০৮ কোটি ঋণ। এর মধ্যে জ্বালানি বাবদ বাকি পড়ে আছে তেল সংস্থাগুলির টাকাও। যে কারণে ইতিমধ্যেই তাদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে এইচপিসিএল, আইওসি এবং বিপিসিএল-এর মতো তেল সংস্থা। তারা জানিয়ে দিয়েছে ধারে আর কিংফিশারকে বিমান জ্বালানি দেওয়া হবে না। সে ক্ষেত্রে দিনের অর্থ মেটাতে হবে দিনেই। ফলে উড়ান চালানোই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
ইতিমধ্যেই উড়ান বাতিল করা নিয়ে বুধবারই ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর ক্ষোভের মুখে পড়েছে কিংফিশার। তাদের বক্তব্য, বিমান পরিবহণ আইন, ১৯৩৭ অনুযায়ী, উড়ানসূচি বাতিল করার আগে ডিজিসিএ-র অনুমোদন নিতে হয়। কিংফিশার তা না-করায় সংস্থাকে কারণ দর্শাবার নির্দেশ দিয়েছে এই বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক। এই পরিপ্রেক্ষিতে অগ্রবাল জানান, এই বাতিল প্রক্রিয়া অস্থায়ী বলে ডিজিসিএ-কে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। কারণ আগামী ১৯ নভেম্বর পর্যন্তই শুধু উড়ান বাতিল করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বরেই কম খরচের বিমান পরিষেবা সংস্থা কিংফিশার রেড গুটিয়ে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। তখন অন্য দুই পরিষেবায় (কিংফিশার ইকনমি ক্লাস ও কিংফিশার ফার্স্ট) জোর দেওয়াকেই ওই সরে আসার কারণ হিসেবে তুলে ধরলেও, বিমান শিল্পমহল কিন্তু সে কথা বিশ্বাস করেনি। |