মুখ্যমন্ত্রী আসছেন। আর তাতেই রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের। উন্নয়নের একগুচ্ছ প্রস্তাব ও পরিকল্পনা তৈরি করতে বুধবার থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের অফিসে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গিয়েছে। তেমনি পুলিশ প্রশাসনও ওই দিন সন্ধ্যা থেকে চরম তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার জেলার ঝাড়খণ্ড সীমান্তে তল্লাশি শুরু হয়ে গিয়েছে। কোথাও আবার রাস্তার পাশে জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ চলছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার দুপুরে এক ডোজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, বিভিন্ন দফতরের সচিবদের নিয়ে এবং জেলা পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। সিউড়ি সার্কিট হাউসে বৈঠক করে বর্ধমান যাবেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরের আগে গত দশ দিনের ব্যবধানে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ, কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় এবং সেচ ও ক্ষুদ্র শিল্পমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া জেলা ঘুরে গিয়েছেন। ওই মন্ত্রীদের দফতর দিয়ে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে। ওই আলোচনার বিষয়গুলি শনিবারের বৈঠকে ফের তুলে ধরা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। |
খয়রাশোল থেকে রাজনগর যাওয়ার রাস্তায় চলছে চেকিং। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত। |
অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রীর সড়ক পথে আসার খবরে আশান্বিত মানুষজন। কারণ মুখ্যমন্ত্রী নিজের চোখেই দেখবেন পানাগড় থেকে সিউড়ি আসার রাজ্য সড়কের বেহাল অবস্থা। পানাগড় থেকে মোরগ্রাম পর্যন্ত ওই উচ্চমানের সড়কটি নির্মিত হয়েছিল প্রায় ২০ বছর আগে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট প্রকল্পে। কিন্তু ২০০০ সালের বন্যায় ওই সড়কের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত তিন বছরে ওই সড়কটি খানাখন্দে ভরে গিয়েছে। সিউড়ি ব্যবসায়ী রাজু মণ্ডল, ইলামবাজারের ব্যবসায়ী মহম্মদ হানিফদের ক্ষোভ, “সিউড়ি থেকে যাঁরা কলকাতা যান তাঁদের ভোরে বাসে করে সাঁইথিয়া বা আমোদপুরে যেতে হত। আর ইলামবাজারের যাত্রীদের যেতে হত বোলপুরে। কিন্তু সরাসরি কলকাতাগামী কিছু সরকারি বাস চালু হওয়ায় যাত্রীরা স্বস্তি পেয়েছিলেন। কারণ ওই সড়কের অবস্থা ভাল থাকায় বাসে কলকাতা যেতে খুব কম সময় লাগত। এর ফলে মানুষ ট্রেনের থেকে বাসে যাতায়াত করতে বেশি পছন্দ করতেন। কিন্তু এখন রাস্তা বেহালের জন্য সময় অনেক বেশি লাগছে।” |
সিউড়ি সার্কিট হাউস সংলগ্ন রাস্তা পরিষ্কার করছেন পুরকর্মীরা। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। |
সিউড়ির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার রমণীমোহম ভট্টাচার্য বলেন, “রাস্তা বেহালের জন্য এখন সিউড়ি থেকে রেফার করা রোগীদের বর্ধমান কিংবা কলকাতায় নিয়ে যেতে রোগীদের নিয়ে যেতে ভীষণ সমস্যা হয়। কারণ সিউড়ি থেকে পানাগড় পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খারাপ।”
তবে এখন অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর সফরের জন্য কোথাও কোথাও তাপ্তি দেওয়ার কাজ চলছে। জেলাশাসক জগদীশকুমার মিনা বলেন, “শুধু ওই সড়কই নয়, জেলার বহু রাস্তার বেহাল অবস্থার কথাও তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া, জেলায় বিভিন্ন শিল্প গড়ার প্রস্তাবও জানানো হবে। শিল্পের জন্য জেলায় পর্যাপ্ত জমিও রয়েছে।”
প্রসঙ্গত, বোলপুরের শিবপুর মৌজায় গত ২০০২ সালে শিল্প স্থাপনের জন্য শিল্প উন্নয়ন নিগম ২০৮ একর জায়গা অধিগ্রহণ করেছিল। কিন্তু কোনও শিল্প হয়নি। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরে ওই জমিতে প্রায় ১৬০০ চাষি গত ২০০৯ সাল থেকে ধান চাষ করছেন। ওই জমিতে শিল্প হলে চাষিরা বাধা দেবেন না বলে দাবি করেছেন স্থানীয় কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, “শিল্প স্থাপনের দাবিতে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে সাত থেকে আট বার বৈঠক করেছি। কিন্তু কোনও কাজ না হওয়ায় চাষ করছি। খেয়ে পরে বাঁচতে হবে তো।” |