পড়শি মুলুকের মন জয়ের লক্ষ্যে সেই মুক্ত বাণিজ্য নীতিরই হাত ধরলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। মলদ্বীপে ১৭ তম সার্ক সম্মেলনের মঞ্চে আর্থিক ভাবে সব থেকে পিছিয়ে থাকা দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির জন্য ভারতের বাজারের দরজা আরও বেশি করে খুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন তিনি। যার ফলে এ বার শূন্য শুল্ক পণ্য হিসেবে ভারতের বাজারে ৪৫৫টি নতুন পণ্য রফতানি করতে পারবে বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল এবং মলদ্বীপ। মনে করা হচ্ছে, এর ফলে ভারতের সঙ্গে আরও পোক্ত হবে এই প্রতিবেশী দেশগুলির সম্পর্ক। তিস্তুা চুক্তি নিয়ে কিছুটা টানাপোড়েন সত্ত্বেও সম্পর্কের উষ্ণতা বাড়তে পারে দিল্লি-ঢাকার।
এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার মনমোহন জানান, দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (সাফটা)-এর সব থেকে অনুন্নত দেশগুলির জন্য শূন্য-শুল্ক পণ্যের সংখ্যা এক ধাক্কায় ৪৫৫টি বাড়াচ্ছে ভারত। যে কারণে শুধু তাদের জন্য ভারতীয় অর্থনীতির পক্ষে সংবেদনশীল বলে চিহ্নিত পণ্যের সংখ্যা ৪৮০ থেকে কমিয়ে আনা হচ্ছে ২৫টিতে। সাধারণত নানা বিধিনিষেধ কিংবা চড়া শুল্কের কারণে এই সংবেদনশীল পণ্যগুলি ভারতের বাজারে রফতানি করা কঠিন হয়। কিন্তু এ বার কার্যত বিনা শুল্কেই তা ভারতে রফতানি করতে পারবে তুলনায় অনুন্নত হিসেবে চিহ্নিত চারটি দেশ। প্রত্যাশিত ভাবেই তাঁর এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন উপস্থিত অন্য রাষ্ট্রপ্রধানেরা। বক্তৃতা চলাকালীনই হল ভেসে গিয়েছে তুমুল করতালিতে। |
একই সঙ্গে, সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সাধারণ মানুষের মধ্যে যোগাযোগ আরও নিবিড় করতেও এ দিন ডাক দিয়েছেন মনমোহন। তা সে ওই অঞ্চলে স্থল, জল ও আকাশ পথে পরিবহণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজার মাধ্যমেই হোক, বা উদ্ভাবনী ডাক পরিষেবার মাধ্যমে।
দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের প্রধান আর্থিক শক্তি হিসেবে তার নেতৃত্বের ‘ব্যাটন’ যে ভারত নিজের হাতে রাখতে চায়, মনমোহনের এ দিনের বক্তৃতায় তা স্পষ্ট। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, ইউরোপের আর্থিক সঙ্কট আর মার্কিন অর্থনীতির বেহাল দশার জেরে ফের ঘোরালো সমস্যায় বিশ্বের অর্থনীতি। যার আঁচ পড়ছে এশিয়ার উপর। তাই এই পরিস্থিতিতে আর্থিক বৃদ্ধির গতি অব্যাহত রাখার একমাত্র উপায় বিশ্বায়নের শর্ত মেনে তীব্র প্রতিযোগিতায় যুঝতে শেখা। আরও বেশি করে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানো। এবং অবশ্যই সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মানুষের মধ্যে আরও বেশি যোগাযোগ বৃদ্ধি।
এর জন্য এক গুচ্ছ প্রস্তাবও পেশ করেছেন মনমোহন। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক বিমান পরিষেবা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে আগামী বছর সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির প্রতিনিধিদের জন্য বৈঠক আয়োজন করতে তৈরি ভারত। একই ভাবে, রেল ও সড়ক পথে আঞ্চলিক পরিষেবা চালুর বিষয়ে দ্রুত একমত হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি। সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে চান জলপথেও। এখন যেমনটা চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে ভারত, মলদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কা।
দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির সাধারণ মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে ডাক ও টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থাও ঢেলে সাজার পক্ষপাতী প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে তাঁর প্রস্তাব, টেলি সংযোগ উন্নত করার মাধ্যমে কল-রেট কমানো এবং দক্ষিণ এশীয় ডাক ইউনিয়ন গঠন। যার জন্য অস্থায়ী দফতর তৈরি এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণের ভার নিতে ভারত তৈরি বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়েছেন সিনেমা, রেডিও ও টিভি সম্প্রচারের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বাড়ানোর উপরেও।
ঘোষণা করেছেন দক্ষিণ এশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধির কথা। মনমোহনের দাবি, ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে পর্যটন শিল্পেরও। যাকে বিশ্বের সামনে আরও বেশি করে তুলে ধরতে আলোচনাচক্র এবং চলমান প্রদর্শনী আয়োজনে উদ্যোগী হবে ভারত। |