সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন। প্রথমে সামরিক শাসক, পরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দীর্ঘ ন’বছর দেশ শাসনও করেছেন। অথচ তাঁর হাতে কোনও ক্ষমতাই ছিল না বলে একটি সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ।
সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া থেকে শুরু করে বেনজির ভুট্টো হত্যাকাণ্ডলন্ডনে একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া আধ ঘণ্টার ওই সাক্ষাৎকারে একের পর এক অভিযোগের তির উড়ে এসেছে মুশারফের বিরুদ্ধে। আর বারবার সেই সব অভিযোগ খণ্ডন করেছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন সামরিক শাসক। কার্যত গোটা সাক্ষাৎকারটিতেই নিজের পিঠ বাঁচাতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। এক সময় মুশারফ এ-ও দাবি করেন, তাঁর হাতে কোনও ক্ষমতাই ছিল না। যাবতীয় ক্ষমতা ভোগ করতেন দেশের প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীরা। রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়ার একান্ত কর্তব্যটিও তাঁদেরই ছিল। তবে মুশারফ স্বীকার করেছেন, ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত সময়টুকু সামরিক শাসক হিসেবে কিছু ক্ষমতা তাঁর হাতে ছিল। কিন্তু ২০০২-এর পরেই ছবিটা পাল্টে যায়। কারণ, তত ক্ষণে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির হাতে সমস্ত ক্ষমতা ‘চলে গিয়েছে’।
প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে। এই প্রসঙ্গেই মুশারফের বক্তব্য, “গোটা বিষয়টাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাই গ্রেফতার হতে পারি জেনেও আগামী বছর মার্চে পাকিস্তানে ফিরতে চাই।”
প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সন্ত্রাস দমন নিয়ে অনেক কথা বলেছিলেন মুশারফ। সন্ত্রাসবাদ দমনে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে আমেরিকা তথা গোটা বিশ্বকে অনেক প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। অথচ, তাঁর আমলেই ওসামা বিন লাদেন পাকিস্তানের মাটিকেই নিরাপদ হিসেবে আশ্রয় বেছে নিয়েছিলেন। প্রশ্ন হল, কী ভাবে? মুশারফের ছোট্ট জবাব, “লাদেনের গতিবিধি সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। লাদেন যে অ্যাবটাবাদে থাকতেন, এটা পাক সরকারের দুর্ভাগ্য।” তালিবান নেতা মোল্লা ওমরের গতিবিধি নিয়েও মুশারফকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রেও তাঁর সংক্ষিপ্ত জবাব, “আমার মনে হয় না ওমর পাকিস্তানে আছে।” তবে গোটা সাক্ষাৎকারটিতে কোণঠাসা মুশারফ কিন্তু ভারতকে এক হাত নিতে ছাড়েননি। তাঁর কথায়, “পাকিস্তান বিরোধী আফগানিস্তান তৈরি করতে এখন জোরকদমে চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত। কন্দহর, জালালাবাদে ভারতের দূতাবাস রয়েছে। আফগান সেনা, গোয়েন্দারা ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণও নিচ্ছে। কেউ তো পাকিস্তান যেতে চায় না! এর থেকেই তো প্রমাণিত হয়, আফগানিস্তানে নিজের খুঁটি শক্ত করছে ভারত।” |