মাথায় বড় বড় কদমা-সহ পুজোর নানা উপচার। কেউ সাজলেন নিতাই, কেউ আবার গৌর। তাদের সামনে রেখেই বের হল বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। ছিল হরেক রকম বাদ্যও। গত এক দশক ধরে এ ভাবেই রাস উৎসবের সূচনা হয় পূর্বস্থলীর শ্রীরামপুরে। অন্যান্য বারের মতো মধ্য শ্রীরামপুর এলাকায় ৫১টি ক্লাব একত্রিত হওয়ার পরে শুরু হল শোভাযাত্রা। যোগ দিলেন কয়েক হাজার মানুষ।
নদিয়ার নবদ্বীপের পাশেই পূর্বস্থলীর শ্রীরামপুর। মাঝে একটি সেতুর ব্যবধান। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নবদ্বীপের মতো এখানকার রাস উৎসবও বহু প্রাচীন। রাস উৎসবের সূচনা নিয়ে নানা জনশ্রুতি রয়েছে। কেউ বলেন, বৈষ্ণব ও শাক্ত মতালম্বীদের মধ্যে মত পার্থক্যকে ঘিরেই রাস উৎসবের সূচনা হয়। আবার কারও দাবি, নবদ্বীপ থেকেই রাস উৎসব ছড়িয়ে পড়ে এই এলাকায়। |
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকার সবথেকে প্রাচীন পুজোটি হয় ঘোষপাড়ার অন্নপূর্ণা মাতা কমিটির পুজো। এই পুজোর বয়স ১৫০ বছরেরও বেশি। শোনা যায়, এক সময় এলাকায় খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছিল। তা মেটাতে ধুমধাম করে অন্নপূর্ণার পুজো করা হয়। পরবর্তিকালে অবশ্য শ্রীরামপুর এলাকায় মানুষজনের বসবাস বাড়ে। তাঁদের হাত ধরেই এলাকায় পুজোর সংখ্যাও বাড়ে। স্থানীয় পঞ্চায়েতের হিসাব অনুযায়ী, এ বার এলাকায় ৫১টি পুজো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার পূর্বস্থলীতে রাস উৎসবের সূচনা করেন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। উদ্বোধনের পরে মলয়বাবু বলেন, “নবদ্বীপের রাস উৎসবের কথা তো সকলেই জানেন। শ্রীরামপুরের রাস উৎসবেও যে এত মানুষ সামিল হন, তা এখানে না এলে বুঝতে পারতাম না।”
রাস উৎসব ঘিরে মেতে উঠেছেন হেমায়েতপুর, চাঁদপুরের বাসিন্দারাও। তিন দিনের এই উৎসব উপলক্ষে সেজেছে পাড়ার বহু মণ্ডপ। রাস্তায় লাগানো হয়েছে আলো। প্রতিটি পুজো কমিটিই আলাদা আলাদা মূর্তি তৈরি করেছে। উদয়ন সঙ্ঘের মূর্তি গঙ্গামাতার, গাজনতলার মূর্তি মহিষমর্দিনীর, অমরভারতী ক্লাব তৈরি করেছে গণেশ জননী, ফ্রেন্ডশিপ ক্লাবের মূর্তি রণচণ্ডী, নিউ ইয়ং বেঙ্গলের শিব-পার্বতী, নিউ স্টারের অনন্তশয্যা।
পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক স্বপন দেবনাথ বলেন, “সম্প্রীতির জন্যই ক্লাবগুলি এক সঙ্গে শোভাযাত্রা বের করে।” শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দিলীপ মণ্ডল জানান, এ বার শ্রেষ্ঠ ১৫টি পুজোকে পুরস্কৃত করবে পঞ্চায়েত। পূর্বস্থলী থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, শোভাযাত্রা যাতে সুষ্ঠভাবে হয় তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশও রয়েছে। |