দুর্যোগ মোকাবিলার পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরকে দ্রুত প্রয়োজনীয় জায়গা দেওয়া হবে বলে জানাল আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ)। রাজ্য সরকারের তরফে আগেই জায়গা চেয়ে তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এত দিন বিষয়টি ঝুলে ছিল।
আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক বিশ্বজিৎ দত্ত জানান, রাজ্যের অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের সচিব এসএল ভগত ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা চেয়ে এডিডিএ কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর পাঠানো ওই চিঠির সঙ্গে একটি খসড়া প্রকল্পও পাঠানো হয়েছে। সেই প্রকল্প অনুযায়ী প্রাথমিক কাজকর্ম শুরু করে দিয়েছে মহকুমা প্রশাসন। সব কিছু ঠিকঠাক চললে নতুন বছরের গোড়ায় সক্রিয় ভাবে কাজ শুরু করতে পারবে ওই গ্রুপ।
হাজার হাজার অবৈধ খাদানের জেরে ধস থেকে শুরু করে মাইথন জলাধারে নৌকাবিহার দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনেক দিন ধরেই ‘ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ’ গড়ার চেষ্টা করছিল আসানসোল মহকুমা প্রশাসন। মহকুমাশাসক সন্দীপ দত্ত জানান, বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ইসিএলের বহু পরিত্যক্ত ও জলে ভরা কয়লা খাদান আছে। তাতে মাঝে-মধ্যেই লোকে ডুবে যায়। উদ্ধারের জন্য কলকাতা থেকে ডুবুরি বা উদ্ধারকারী দল আনতে হয়। এতে সময় লাগে বেশি। খরচও বেশি পড়ে। কাছেই ঝাড়খণ্ডের মাইথন জলাধারে ভ্রমণার্থীদের জন্য নৌকাবিহারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানেও প্রশিক্ষিত উদ্ধারকারী দল নেই। দুর্ঘটনা ঘটলে প্রশাসনকে বিপদে পড়তে হয়।
এ ছাড়া খনি অঞ্চলের নিয়মিত ভূমিধস তো আছেই। বেশ কিছু এলাকা অত্যন্ত ধসপ্রবণ। ধসের কারণে প্রায়ই বাড়ি-ঘরে ফাটল ধরে। আসানসোল শহরে ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার বহুতল আছে। ধস, ভূমিকম্প বা অন্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নাগরিকদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। সন্দীপবাবুদের মতে, হাতের কাছে যদি একটি প্রশিক্ষিত ‘ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ’ থাকলে তৎক্ষণাৎ বিপদের মোকাবিলা করা সম্ভব। সেই কারণেই এই উদ্যোগ। প্রশাসনের তরফে প্রাথমিক কাজকর্ম তদারকির দায়িত্বে আছেন আসানসোলের এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রাহুল নাথ। তিনি জানান, মোট ১৮০ জন কর্মী থাকবেন। তার মধ্যে ৪০ জনের একটি দলকে যে কোনও রকম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলায় দক্ষ করে তোলা হবে, যাঁরা বিভিন্ন খনি ও শিল্পক্ষেত্রে দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে জলে ডোবা, অগ্নিকাণ্ড ও ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে গিয়ে সমান পারদর্শিতার সঙ্গে উদ্ধারকাজ করতে পারবেন।
প্রায় দু’বছর আগেই আসানসোলে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ তৈরির বিষয়ে কথাবার্তা শুরু করেছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক বিশ্বজিৎ দত্ত। একটি খসড়া প্রকল্প বানিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরেও পাঠান তিনি। তা হাতে পাওয়ার পরে দফতরের তদানীন্তন মন্ত্রী শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায় সরেজমিন তদন্ত করতেও আসেন। কিন্তু তার পরে আর কাজ বিশেষ এগোয়নি। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “সরকার ফের উদ্যোগী হওয়ায় খুশি।” এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তথা আসানসোলের মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গ্রুপের অফিস বানানো, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি ও অন্য কাজের জন্য এডিডিএ এক একর জায়গা দেবে। রাহুলবাবু বলেন, “ইতিমধ্যেই আমরা উন্নত সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি আনতে শুরু করেছি।” যন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম কেনার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। |