নিজস্ব সংবাদদাতা • দিনহাটা |
বাম আমলে কোচবিহারের দিনহাটায় ফ্রন্টেরই অন্যতম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের একটি মিছিলে পুলিশের গুলিচালনায় ছ’জনের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু সেই ঘটনার তদন্তে গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিশনের রিপোর্টটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র (রাজনৈতিক) দফতরের তরফে এ কথা জানানো হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এতে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন অনেকেই।
কী ভাবে জানা গেল যে, কমিশনের রিপোর্টটি উধাও?
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, উৎপল রায় নামে এক ব্যক্তি তথ্য জানার অধিকার আইনে ওই রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চেয়ে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন। উৎপলবাবু জানান, তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতে
গত ২ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র (রাজনৈতিক) দফতরের সহ-সচিব এস কে মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দিনহাটার ওই ঘটনার তদন্তে নিযুক্ত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নারায়ণচন্দ্র শীলের নেতৃত্বাধীন শীল কমিশনের দাখিল করা রিপোর্টটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসনের বক্তব্য জানার পরে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আইন ও বিচার মন্ত্রী মলয় ঘটকের কাছে চিঠি পাঠিয়ে রিপোর্ট অন্তর্ধানের বিষয়ে তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছেন উৎপলবাবু। কমিশনের রিপোর্ট উধাও হওয়ার ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?
আইন ও বিচার মন্ত্রী বলেন, “পুলিশের কাছে এই ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হবে।”কার বা কাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হবে? মলয়বাবু বলেন, “যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী, অভিযোগ জানানো হবে তাদের বিরুদ্ধেই।”
২০০৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দিনহাটায় ফরওয়ার্ড ব্লকের একটি মিছিলের উপরে গুলি চালায় পুলিশ। তাতে পাঁচ জন রাজনৈতিক কর্মী এবং এক পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার জেরে রাজ্য-রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠে। তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার তদন্তের জন্য শীল কমিশন গঠন করে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের ১৯ অগস্ট বিচারপতি নারায়ণচন্দ্র শীল রাজ্য সরকারের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন। ‘কমিশন অফ এনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫২’ (ধারা ৩, উপধারা ৪) অনুযায়ী সরকারের কাছে দাখিল করা কোনও রিপোর্ট ছ’মাসের মধ্যে বিধানসভায় পেশ করার কথা। কিন্তু শীল কমিশনের ওই রিপোর্টের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। তাই রিপোর্টটির বিষয়বস্তু জানতে চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানান উৎপলবাবু।
দিনহাটার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি তুলেছিল বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকই। কিন্তু বাম জমানার শেষ দিকে তারাই দাবি জানায়, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ করা যাবে না। কারণ, ওই রিপোর্ট প্রকাশ্যে এলে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বামফ্রন্টের অন্দরে শরিকি সম্পর্কে তার প্রভাব পড়তে পারে। ফব-র রাজ্য নেতৃত্ব এই অবস্থান নেওয়ায় দলের অন্দরেই প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত ফব আবার পুরনো অবস্থানেই ফিরে যায়। তা সত্ত্বেও বামফ্রন্ট সরকার থাকতে থাকতে রিপোর্টটি আর প্রকাশ করা হয়নি।
ক্ষমতায় থাকাকালীন বামেরা কেন রিপোর্টটি প্রকাশ করেননি, কেনই বা সেটি বিধানসভায় পেশ করা হয়নি, সেই প্রশ্ন তো উঠেছেই। উৎপলবাবুর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এখন এই প্রশ্নটাও বড় হয়ে উঠেছে যে, রিপোর্টটি গেল কোথায়? |