প্রায় ২ ঘণ্টা ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক আটকে রাখলেন একদল গ্রামবাসী। তাঁদের অভিযোগ, ‘ঘুষ’ না-পেয়ে এক ট্রাকচালককে মারধর করেছেন জেলা পরিবহণ দফতরের তিন কর্মী। তার জন্যই অবরোধ। বুধবার সকাল ৮টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহারের কোতোয়ালি থানার ডাউয়াগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কলেরপাড়া এলাকায়।
নিগৃহীত ট্রাকচালক এলাকার বাসিন্দা নন। কিন্তু, সাতসকালে তাঁকে প্রকাশ্যে মারধর করতে দেখে বাসিন্দারা জড়ো হয়ে যান। নিগৃহীত চালক গ্রামবাসীদের কাছে অভিযোগ করেন, তাঁর গাড়ির কাগজপত্র সব ঠিক থাকা সত্ত্বেও ‘ওভারলোডিং’-এর অভিযোগে ১০ হাজার টাকা চাইছেন ওই দু’জন সরকারি কর্মী। তিনি দিতে রাজি না-হওয়ায় গাড়ির সব কাগজপত্র ‘সিজার লিস্ট’ ছাড়াই দুই পরিবহণ-কর্মী নিতে চাইছেন। এ কথা শোনার পরে মুহূর্তের মধ্যে বাসিন্দারা দুই সরকারি কর্মীর কাছে কৈফিয়ত চাইতে শুরু করেন। বেগতিক দেখে দু’জনে ছুটে পালিয়ে যান। উত্তেজিত জনতা ওই দুই কর্মী যে গাড়িতে এসেছিলেন, তার চাকার হাওয়া খুলে দিয়ে পথ অবরোধে নামে। জাতীয় সড়কে আটকে পড়ে শয়ে-শয়ে গাড়ি। শেষ পর্যন্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। ইতিমধ্যে কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে
জানিয়ে দেন। জেলাশাসক বলেন, “অভিযোগ শুনেছি। এক জন অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। |
তবে পরিবহণ দফতরের কর্মীরা তোলা
আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ট্রাকচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হচ্ছে।”
ঘটনার পরে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বাসিন্দাদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ, অবরোধের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও ট্রাকচালকের কোনও বয়ান নথিবদ্ধ করেনি। ওই ব্যাপারে কোনও মামলাও দায়ের হয়নি। কোতোয়ালি থানার কয়েকজন অফিসারের দাবি, ট্রাকচালক কোনও অভিযোগ করতে রাজি হননি। কিন্তু, বাসিন্দাদের কয়েকজন জানান, অভিযোগ করলে মামলা দায়ের হবে এবং ঘনঘন হাজিরা দিতে আসতে হবে, এক পুলিশকর্মীর মুখে এমন কথাবার্তা শুনে ট্রাকচালক ঘাবড়ে যান।
ডাউয়াগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সোলেমান মিয়াঁ বলেন, “চালকের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। বৈধ কাগজপত্র থাকায় তিনি পরিবহণ দফতরের কর্মীদের টাকা দিতে চাননি। তার জেরেই মারধর করা হয়।” কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে”
যে তিন ইন্সপেক্টরের অভিযানকে ঘিরে এ দিন জেলা প্রশাসনে তোলপাড় হয় তাঁদেরই এক জন মিন্টু বালার বক্তব্য, “সকালে ওই এলাকায় কী হয়েছে তা ঊধ্বর্তন কর্তাদের জানিয়েছি। তাঁরাই যা বলার বলবেন।” তবে দফতরের কর্তাদের দাবি, ট্রাকটির ট্যাক্সের রসিদ ছিল না। ফাইন করতে চাওয়ায় তিনি লোক ডাকাডাকি করে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন।
তবে ট্রাকচালকদের উপরে পরিবহণ দফতরের কর্মীদের একাংশের ‘জুলুম’ নতুন নয় বলে অভিযোগ করেছেন জেলা ডান ও বাম শ্রমিক সংগঠনের অনেক নেতাই। কোচবিহারের আরটিও আফতাব আহমেদ জেলার বাইরে রয়েছেন। তিনি বলেন, “এখন ছুটিতে আছি। ফিরে গিয়ে খোঁজ নেব।” |