পুষ্টি-পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ার কাজ তিমিরেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
জঙ্গলমহলে ‘পিছিয়ে পড়া’ ও মাওবাদী প্রভাবিত ব্লকগুলিতে পুষ্টি-পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ২০১০ সালে। এক বছর পরেও তা তৈরি করা যায়নি! অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতরের উদাসীনতার কারণেই তা করা যায়নি। ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন জঙ্গলমহলে অপুষ্টিতে ভোগা গরিব মা ও বাচ্চারা। কেন এখনও কাজ শুরু করা যায়নি? পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র বলেন, “এ বার দ্রুত পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এই বছরের মধ্যেই কাজ শেষের লক্ষ্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে।”
জেলায় মাওবাদী প্রভাবিত ব্লকের সংখ্যা ১১টি। অনুন্নয়ন আর অপুষ্টি নিত্যসঙ্গী এখানকার মানুষজনের। গর্ভবতী মা বা সদ্যোজাত সন্তান যদি অপুষ্টিতে ভোগে তা হলে পরবর্তীতে শিশুর গুরুতর অসুস্থতার আশঙ্কা থাকে। অনেক ক্ষেত্রে শিশু-মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। এই কারণেই মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। এমনিতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মাধ্যমে মা ও শিশুর পুষ্টির বিষয়টি লক্ষ্য করার কথা। সেখানে মা ও শিশুর খাবারের ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু তাতেও ঠিক মতো কাজ হচ্ছিল না। কারণ, বেশিরভাগ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবনই নেই। নেই তেমন কোনও পরিকাঠামো। ফলে মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়নি। তাই ‘পিছিয়ে পড়া’ ও মাওবাদী প্রভাবিত ব্লকগুলিতে একটি করে আবাসিক ‘পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র’ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যেগুলি ব্লক হাসপাতাল বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র লাগোয়া থাকবে। সেখানে ৬০ জন মহিলা ও তাঁদের সন্তানদের রাখা যাবে। তাঁদের খাওয়া থাকার খরচ দেবে সরকার। তারই সঙ্গে মা-কে দেওয়া হবে অদক্ষ কর্মীর মজুরিও। অর্থাৎ দিনে ১৩০ টাকা। ৩ মাস পর্যন্ত তাঁদের রাখা হবে। এতে মা ও শিশুর পুষ্টি যেমন নিশ্চিত করা যাবে, তেমনই মায়েদের জন্য অদক্ষ কর্মীর মজুরি তাঁদের সংসার চালাতেও সাহায্য করবে।
তাঁদের দেখভালের জন্য প্রতি কেন্দ্রে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, নৈশপ্রহরী ও নার্সও রাখা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। স্বাস্থ্যকেন্দ্র লাগোয়া কেন্দ্র হওয়ায় প্রয়োজন হলেই চিকিৎসকদের পরামর্শও নেওয়া যাবে। তাতে যে কোনও রোগের চিকিৎসার সুবিধাও থাকছে। কেন্দ্র-পিছু কয়েক জনের চাকরির সুযোগও থাকছে। সব মিলিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের কাজ কিন্তু এক বছরেও বিশেষ এগোয়নি। নয়াগ্রামে কেন্দ্র তৈরির দরপত্রটুকু শুধু আহ্বান করা হয়েছে।
ঝাড়গ্রাম, জামবনি, বিনপুর-২ ও মেদিনীপুর সদর ব্লকে জমির অভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করা যাবে কি না, সে নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে। বিনপুর ২-এর বেলপাহাড়ি, জামবনির চিল্কিগড়, মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদড়া ও ঝাড়গ্রাম শহরেই এই কেন্দ্র তৈরির প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু যে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছাকাছি তা তৈরির কথা, সেখানে পর্যাপ্ত জমি মেলেনি বলে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। ফলে সমস্যা। স্বাস্থ্য দফতরের অবশ্য আশ্বাস, চলতি বছরের মধ্যেই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে। কিন্তু বছর শেষ হতে তো আর মাত্রই ক’টা মাস বাকি (মার্চে আর্থিক বছর শেষ হচ্ছে)। এই অল্প সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়িত করা সম্ভব কি না, সে নিয়ে সংশয় কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। |