করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল অ্যানেস্থেটিস্ট নেই,
সিজার হয় না
পারেশন থিয়েটর আছে, আস্ত একটা ব্লাড স্টোরেজ ব্যবস্থাও রয়েছে, আছেন দু-জন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞও। নেই শুধু অ্যানেস্থেটিস্ট।
সাড়ে তিন বছর ধরে করিমপুর বা আশপাশের এলাকায় ছেলেপুলের নাম ‘সিজার’, মনে পড়ছে? না পড়ারই কথা। কারণ ব্যাপারটাই স্পষ্ট নয় স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে। গত সাড়ে তিন বছরে হাসপাতালের প্রসূতি সদনে অস্ত্রোপচার বা ‘সিজার’ করে কোনও শিশুরই জন্ম হয়নি যে!
কেন? কিছুটা অস্বস্তি নিয়েই জেলা স্বাস্থ্য কর্তারা জানাচ্ছেন, করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে গত চার বছর ধরে কোনও বিশেষজ্ঞ অ্যানেস্থেটিস্ট নেই। আর তাই প্রসূতির সামান্য জটিলতা দেখা দিলেই হাসপাতাল থেকে প্রসূতিকে রেফার করে দেওয়া হয় কৃষ্ণনগরে। আপাতত সীমান্তের োই হাসাপাতেল এটাই দস্তুর। ছবিটা অবস্য খুব বেশি আলাদা নয়, কয়েক কিলোমিটার দূরের তেহট্ট মহকুমা হাসপাতাল কিংবা বেথুয়াডহরি হাসপাতালে। ওই দুই হাসাপাতেল সিজার করা হলেও জরুরিকালীন কোনও অস্ত্রোপচার বা ‘ইমার্জেন্সি সিজার’ হয় না। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ থাকলেও বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালে সোম ও শনিবার ছাড়া সিজার হয় না। জরুরিকালীন সিজারের প্রয়োজন দেখা দিলে রোগীকে রেফার করা ছাড়া কোনও গতি থাকে না। প্রায় একই হাল তেহট্ট হাসপাতলেরও। ফলে, জেলা সদর কিংবা কলকাতার হাসপাতালে ঘন ঘন রেফার করার প্রবণতার ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের চোখ রাঙানি সত্ত্বেও তাঁদের যে কিছু করার নেই, স্পষ্টই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদেরই এক জনের প্রশ্ন, “পরিকাঠামো নেই। প্রসূতির অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে কি খুনের দায়ে পড়ব!” নদিয়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত হালদার জানান, ‘‘ রানাঘাট ও জেলা হাসপাতাল ছাড়া প্রায় কোথাও জরুরিকালীন সিজার হয় না। কারণ অ্যানেস্থেটিস্ট নেই। করিমপুর হাসপাতাল তার ব্যতিক্রম নয়। সেখানে গত চার বছর ধরেই সিজার বন্ধ।’’ হাসপাতাল ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে গত ২০০৭ সালে অপারেশন থিয়েটর তৈরি করে সিজার চালু করা হয়েছিল, ব্লাড স্টোরেজের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল এলাকার লোকজনও হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। সিজারের জন্য প্রায় ৯০ কিমি উজিয়ে জেলা হাসপাতালে আর যেতে হবে না। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই প্রসূতিকে অ্যানাস্থেসিয়া দেওয়ার পর তাঁর শ্বাসকষ্ট ও খিঁচুনি শুরু হয়। তাঁকে জেলা হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হলেও পথেই মারা যান তিনি। ২০০৮-এর এপ্রিল মাসের ওই ঘটনার পরেই সিজার বন্ধ করে দেওয়া হয় করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে।
এই হাসপাতালে মাসে গড়ে ৪৫০জন প্রসূতি ভর্তি হন। সিজারের ব্যবস্থা না থাকায় গড়ে প্রায় ১৫ শতাংশেরও বেশি প্রসূতিকেই জেলা হাসপাতালে রেফার করা হয়। হাসপাতালের সুপার বিধুভূষণ মাহাতো বলেন, ‘‘এক প্রসূতির মৃত্যুর পর বেশ কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল। তদন্ত মানবাধিকার কমিশন পর্যন্ত গড়িয়েছিল। কিন্তু বিশেষজ্ঞ অ্যানেস্থেটিস্ট দূরের কথা আমাদের এখানে কোন অ্যানাস্থেসিস্টই নেই। ফলে এই হাসপাতালে দুজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ থাকা সত্ত্বেও আমরা কোন সিজার করতে পারছি না।” তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মণ্ডল বলেন,‘‘ আমাদের এখানেও রয়েছে সমস্যা এক জন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অ্যানেস্থেটিস্ট আছেন। কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্ক নেই। ফলে এই পরিকাঠামো দিয়ে ২৪ ঘন্টা সিজার চালু রাখা সম্ভব ন। রেফার করা ছাড়া তাই উপায় থাকে না।’’ বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালের অবস্থাও তথৈবচ। হাসপাতালের সুপার জীবেশচন্দ্র বাইন বলেন,‘‘ অস্ত্রোপচার করে প্রসব করার পর এক জন প্রসূতিকে সাতদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয় অথচ সিজারের ক্ষেত্রে আমাদের হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা মাত্র তিনটে। ব্লাড স্টোরেজের জন্য এখনও আমরা অনুমতি পাইনি। তাই রেফার করতে হয়।’’ করিমপুরের গ্রামীণ এলাকায় সিজার তাই এখনও অচেনা এক শব্দ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.