পদত্যাগ করলেন সুপার, ডাক্তারেরা চাইলেন গণছুটি |
জঙ্গিপুর হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর পিছনে চিকিৎসকদের গাফিলতিকেই দায়ী করে এক চিকিৎসককে বেধড়ক মারধর করেছিলেন মৃতের পরিজনেরা। তারই জেরে প্রায় ‘নিরাপত্তাহীন’ ওই হাসপাতালে আর কাজ করা সম্ভব নয় জানিয়ে বুধবার তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইলেন জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল।
একই দাবিতে ওই হাসপাতালের সমস্ত চিকিৎসকই বুধবার গণছুটি নিতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত অবশ্য ‘রোগীদের স্বার্থে’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা মঞ্জুর করেননি। এখানেই শেষ নয়, মঙ্গলবারের ঘটনায় প্রহৃত চিকিৎসক চিত্তরঞ্জন সামন্তও এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন তিনিও ‘চাকরিতে ইস্তফা’ দিচ্ছেন।
শাশ্বতবাবু বলেন, “এ ভাবে নিরাপত্তাহীন পরিবেশে চাকরি করা অসম্ভব। বুধবারই আমি সিএমওএইচকে জানিয়ে সুপারের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছি। প্রহৃত চিকিৎসকও আমাকে জানিয়েছেন তিনিও আর চাকরি করতে চান না। এ দিন হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসকেরা গণছুটির আবেদন করেছিলেন। কিন্তু জরুরি পরিষেবার কথা চিন্তা করে সে আবেদন মঞ্জুর করা হয়নি।”
সুপারের ক্ষোভের কারণ, ঘটনার দিন তিনি এ ব্যাপারে মহকুমাশাসককে ফোন করে ‘সাহায্য’ চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আসতে চাননি। মহকুমাশাসক এনাউর রহমান স্পষ্টই বলেন, “আমি তো আর হাসপাতাল সামলাব না। সামলাতে হবে সুপারকে। গত সপ্তাহে দু-দিন হাসপাতালে গিয়ে দেখেছি, চিকিৎসকেরা ঠিক মতো আসেন না। প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি বন্ধ। এ সব অরজাকতা বন্ধ না হলে মানুষের ক্ষোভ বাড়বেই।”
হাসপাতালের পরিস্থিতি সম্পর্কে জেলার সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিষ্ণুপদ বাগ বলেন, “শিশুমৃত্যু নিয়ে আলোচনার জন্য হাসপাতালে বৃহস্পতিবার একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানেই হাসপাতালের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।” এ দিন হাসপাতালে শুয়ে চিত্তরঞ্জনবাবু বলেন, “আর চাকরিতে থাকতে চাই না। এ কথা হাসপাতালের সুপারকে জানিয়ে দিয়েছি। বাড়ি ফিরেই ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেব।” তাঁর মাথায় আঘাত। সিটি স্ক্যানও হয়েছে। গত বছর অবসর নেওয়ার পরে জেলা স্বাস্থ্য দফতর তাঁর এক বছরের জন্য চাকরির মেয়াদ বাড়ায়। জানুয়ারিতে ওই মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তিনি জানান, ওই শিশুটিকে দেখেই তিনি শল্য চিকিৎসককে রেফার করেছিলেন। হাসপাতালের সেই শল্য চিকিৎসক নির্মাল্য দাস এ দিন বলেন, “সকালে বহির্বিভাগ থেকে সোজা অপারেশন থিয়েটরে ঢুকেছিলাম। সেখানেই ‘কল’ পাই। কিন্তু কাজে ব্যস্ত থাকায় তখন বেরোতে পারিনি। সোয়া দু’টো নাগাদ সেখান থেকে বেরিয়েই শিশুটিকে দেখতে গিয়েছিলাম।”
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জঙ্গিপুরের সম্পাদক তথা হাসপাতালের চিকিৎসক প্রতাপ সাহা বেজায় ক্ষুব্ধ। বলেন, “বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয় তার জন্যই অপেক্ষা করছি। কারণ মার খেয়ে চাকরি করবে না কেউই।” |