দ্বিচারিতার অভিযোগ কংগ্রেসের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রায়গঞ্জ |
এইম্সের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলে উত্তর দিনাজপুরে আন্দোলনে নামল কংগ্রেস। তাতে সামিল হলেন রাজ্যের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা দফতরের প্রতিমন্ত্রী কংগ্রেসের প্রমথনাথ রায়ও।
বুধবার রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সির নেতৃত্বে কালিয়াগঞ্জ ও হেমতাবাদে মিছিল এবং পথসভা হয়। হাসপাতালের জন্য জমি অধিগ্রহণের দাবিতে কালিয়াগঞ্জ শহরের নাটমন্দির এলাকায় সভা হয়। সেখানে সাংসদ দীপাদেবী বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার রায়গঞ্জে হাসপাতাল তৈরির কথা ঘোষণা করেছে। টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ করেছে। অথচ, রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু না করে জেলাবাসীর সঙ্গে দ্বিচারিতা করছে। জমি নিয়ে নানা ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে। জমির মালিকেরা জমি দিতে প্রস্তুত। হাসপাতালটিকে কল্যাণীতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত চলছে। এর প্রতিবাদেই আন্দোলন শুরু হল।” |
কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, রায়গঞ্জে ওই হাসপাতাল হলে উত্তরবঙ্গ শুধু নয়, গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দারা আধুনিক মানের চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন। জেলা কংগ্রেস নেতা অরুণ দে সরকার, পবিত্র চন্দ’রা বলেন, “জমি অধিগ্রহণ করতে রাজ্য সরকারের প্রায় ১৫ কোটি ১১ লক্ষ টাকা লাগবে। রাজ্য টাকা দিতে রাজি না হলে দলের সাংসদ, বিধায়কেরা টাকা দিতে প্রস্তুত। কেন্দ্রের প্রস্তাব অনুসারে হাসপাতাল রায়গঞ্জেই গড়তে হবে।” মন্ত্রী প্রমথনাথবাবু বলেন, “এত বড় একটা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান তৈরি হলে অনেক মানুষের উপকার হবে। আমাদের জোট সরকার কেন কাজটা তাড়াতাড়ি করছে না, আমি বুঝতে পারছি না!”
উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেসের এ দিনের আন্দোলনে সামিল হন মালদহের কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী, নদিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর সিংহ, প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বরঞ্জন সরকার, কনক দেবনাথ এবং কোচবিহার জেলা নেতৃত্ব। এ দিন শুরু হওয়া আন্দোলন টানা চলবে বলেও কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার করণদিঘিতে কংগ্রেসের প্রতিবাদ-মিছিল, পথসভার কর্মসূচি রয়েছে। ১১ নভেম্বর গোয়ালপোখর, চাকুলিয়ায়, ১২ নভেম্বর ইটাহারে, ১৩ নভেম্বর ইসলামপুর, চোপড়ায় এবং ১৪ নভেম্বর রায়গঞ্জে একই ধারায় আন্দোলন হবে।
অন্যতম শরিক কংগ্রেস রাজ্যে তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামায় কিছুটা ‘অস্বস্তি’তে জেলা তৃণমূল নেতারা। জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অসীম ঘোষ বলেন, “আমরাও চাই, হাসপাতাল হোক। রাজ্য সরকারকে আমরাও বিষয়টি জানিয়েছি। তবে কংগ্রেস বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছে।” রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির উদ্যোগেই ২০০৯-এর ফেব্রুয়ারিতে রায়গঞ্জে এইম্সের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির ঘোষণা করে কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য-সুরক্ষা যোজনায় ৮২৩ কোটি টাকা খরচে ১০০ একর জমিতে ৯৬০ শয্যার হাসপাতাল তৈরি করা হবে বলে ঠিক হয়। রাজ্য সরকারকে জমি-সহ রাস্তা, পানীয় জল, বিদ্যুৎ এবং নিকাশির ব্যবস্থা গড়ে দিতে বলা হয়। রায়গঞ্জের পানিশালায় ১২৫ একর জমি চিহ্নিত করা হয়। বিধানসভা ভোটের আগে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ রাজ্য সরকারকে জমি অধিগ্রহণ করার কথাও বলেন। জেলা প্রশাসনের তরফে জমির সমস্ত তথ্য, নকশা রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু ভোটের জন্য অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, “জমি অধিগ্রহণ নিয়ে রাজ্য সরকারের কোনও টালবাহানা আমরা আর দেখতে চাই না। হাসপাতাল তৈরির জন্য যত দূর যেতে হয়, যাব।” |