রাজ্যে উন্নয়নের কাজকে ‘রাজনীতিমুক্ত’ করতে জেলাস্তরে মহকুমাশাসক (এসডিও) ও ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক (বিডিও)-দের হাতে বাড়তি ক্ষমতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার সাত দিনের মধ্যে সেই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়ে গেল।
বুধবার মুখ্যসচিবের সই করা সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ বার থেকে জেলাস্তরে যে কোনও কেন্দ্রীয় বা রাজ্য প্রকল্পের কাজে নজরদারি করবে জেলাস্তরের ত্রিস্তরীয় প্রশাসনিক কমিটি (পোশাকি নাম, ডেভেলপমেন্ট মনিটরিং কমিটি, সংক্ষেপে ডিএমসি।) ব্লকস্তরে কমিটির মাথায় থাকবেন বিডিও-রা। মহকুমাস্তরে এসডিও-রা। এবং জেলাস্তরে ডিএম বা জেলাশাসকেরা। প্রকল্পগুলো পঞ্চায়েতের মাধ্যমে রূপায়িত হলেও এত দিন তার উপরে প্রশাসনিক তেমন নজরদারি ছিল না বলে অভিযোগ। যার জেরে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগও ভুরি ভুরি। সমস্যার সুরাহায় ডিএমসি-র কাজও বেঁধে দিয়েছে সরকার। কী রকম?
মুখ্যসচিবের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কমিটি তৃণমূলস্তরে সরকারের বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করবে, সংশ্লিষ্ট এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে নজরদারি করবে, সেই সঙ্গে সুনিশ্চিত করবে কাজের মান। প্রকল্প রূপায়ণে কোনও সমস্যা হলে বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে সমন্বয়সাধন করে তার সমাধানের দায়িত্বও সামলাতে হবে জেলাস্তরের কমিটিকে।
কোন কমিটির সদস্যেরা কবে কবে নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসবেন, তাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে মুখ্যসচিবের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিটিতে। প্রতি মাসের ৫ তারিখে বসবে বিডিও-দের কমিটি, ১০ তারিখে এসডিও-দের কমিটি ও ১৫ তারিখে জেলাশাসকদের কমিটি। বিডিও এবং এসডিও-দের কমিটির বৈঠকের বিস্তারিত রিপোর্ট জেলাস্তরের কমিটিতে জমা দিতে হবে। তারা জেলার উন্নয়ন সংক্রান্ত সামগ্রিক রিপোর্ট জমা দেবে রাজ্যের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা দফতরে। পাশাপাশি মাঠে-ময়দানে উন্নত মানের কাজ নিশ্চিত করতে প্রতি স্তরের কমিটিকে একটি ‘পরিদর্শন গ্রুপ’ গড়তে বলা হয়েছে। যারা কাজের অগ্রগতি ও মান খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট কমিটিতে রিপোর্ট করবে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ব্লক ও মহকুমা পর্যায়ে কাজের ক্ষেত্রে এমন কোনও ঘাটতি দেখা দিতে পারে, সংশ্লিষ্ট কমিটি স্তরে যা মেটানো সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে সমস্যার নিরসনে জেলাস্তরের কমিটির সাহায্য চাইতে হবে। একই ভাবে জেলাস্তরে সমস্যা হলে জানাতে হবে মহাকরণকে।
সরকারের এক মুখপাত্র জানান, উন্নয়নের কাজে ‘গতি ও সমন্বয়’ আনতেই সরকারের এই সিদ্ধান্ত। গ্রামাঞ্চলে উন্নয়নের গোটা প্রক্রিয়াই যে হেতু ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে রূপায়িত হয়, তাই সেই ব্যবস্থাটিকে ‘রাজনীতির রং’-এর বাইরে আনতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। বস্তুত সরকারি সূত্রটির কথায়, “পঞ্চায়েতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে যাবতীয় কাজ করার যে ‘মডেল’ এ রাজ্যে চালু রয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী ভালই জানেন, তাতে দুর্নীতি ও দলবাজি আটকানো যাবে না।” অতএব, আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁর দলের যথেষ্ট ভাল ফল করার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও মমতা এই ‘ভিন্ন মডেল’ তৈরি করেছেন বলে সূত্রটির দাবি। তাঁর বক্তব্য, এতে গ্রামোন্নয়নের রাশ থাকবে ‘দল-নিরপেক্ষ’ প্রশাসনেরই হাতে।
গত ৩ নভেম্বর কলকাতার টাউন হলে রাজ্যের সমস্ত বিডিও-এসডিও-দের বৈঠকে ডেকে এই বার্তাই দিয়েছিলেন মমতা। |