থিমের আড়ালে বদলে যাচ্ছে রাসের চেহারা
কৌরব রাজসভা। থমথমে মুখে বসে আছেন সভাসদেরা। সভার কেন্দ্রস্থলে শুরু হয়েছে পাশা খেলা। যুধিষ্ঠির বনাম শকুনি। দ্যূতক্রীড়ায় দক্ষ শকুনির কুটিল চালে জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব এক এক করে খোয়াচ্ছেন তাঁর সব কিছু। শেষ পর্যন্ত তিনি বাজি রাখলেন দ্রৌপদীকে। আবার হার। উল্লাসে ফেটে পড়লেন দুর্যোধন। দুঃশাসন প্রকাশ্য রাজসভায় টেনে এনেছেন দ্রৌপদীকে। সেই বস্ত্র হরণেও উদ্যত দুঃশাসন।
মহাভারতের এই চেনা কাহিনি এতক্ষণ পর্যন্ত মণ্ডপের একদম পিছনের বড় পর্দায় দেখা যাচ্ছিল। বস্ত্রহরণ পর্ব শুরু হতেই মণ্ডপে রাখা দুঃশাসন ও দ্রৌপদীর মূর্তি নড়াচড়া শুরু করল। মণ্ডপের এক কোণে চঞ্চল হয়ে উঠলেন শ্রীকৃষ্ণ। তাঁর হাত থেকে কাপড় পৌঁছতে লাগল দ্রৌপদীর কাছে। দুঃশাসন আর পারেন না বস্ত্রহরণ করতে। ধীরে ধীরে গোটা মণ্ডপের সব আলো নিভে গেল। মাইকে ঘোষণা--সামনের দর্শনার্থীরা মণ্ডপ থেকে বেরিয়ে আসুন। পিছনের জনকে দেখার সুযোগ করে দিন।
ভিসস্যুয়াল এফেক্ট। এ বার নবদ্বীপের রাসে নতুন স্বাদ। রয়্যাল ক্লাব চিরাচরিত বিরাট প্রতিমার বদলে দৃশ্যসজ্জার প্রতিমা অনেক আগেই শুরু করেছে। এ বার তাঁদের নতুন চমক লাইট অ্যান্ড সাউন্ড। প্রায় ৩ লক্ষ টাকার বাজেটের পুজো এ বার রয়্যাল ক্লাবের। চন্দননগরের আলো, সুবিশাল মণ্ডপ, ফাইবার গ্লাসের প্রতিমা, লাইট অ্যান্ড সাউন্ডসব মিলিয়ে একেবারে অন্য রকম! প্রাচীন দক্ষিণ মায়াপুরের উদয়ন সংঘের মাঠে আবার নতুন আঙ্গিকে ভারতমাতার পুজো। স্থানীয় ভারতমাতা বারোয়ারি কমিটির সদস্যরা। তাঁদের থিম মা-মাটি ও পল্লিমঙ্গল। প্রাচীন বাংলার পটচিত্র এবং নানা ধরনের পুতুল ব্যবহার করে সাজানো হয়েছে মণ্ডপ। পটুয়া এসেছেন মেদিনীপুর থেকে। পুজো কমিটির সম্পাদক দীপক নাগ বলেন, “ভারতমাতা মূর্তির আঙ্গিকেও আমরা বদল ঘটিয়েছি এ বার। মাতৃমূর্তির দু’পাশে দুই সন্তান। মণ্ডপ ঘরের চাল। যেন পল্লিবাংলার মা তাঁর সন্তানদের নিয়ে গ্রামীণ পরিবেশে শান্তিতে বসবাস করছেন। আসলে আমরা এ রাজ্যের পট পরিবর্তনকে ছুঁতে চাইছি এই থিমের মধ্য দিয়ে। গোটা মণ্ডপ জুড়ে।” গোটা মণ্ডপ জুড়ে কুলো ও পাখার কাজ।
স্টেশন রোডের বিশ্বাসপাড়া বিবেকানন্দ কলোনির পুজোয় এ বার কাচের মণ্ডপ। ৪২ ফুট চওড়া আর ৩৫ ফুট উঁচু মণ্ডপের সামনের অংশটি সম্পূর্ণ কাচ দিয়ে তৈরি। ব্যয় প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। জনপ্রিয় ক্লাব। সবাই থিমের পুজোয় মেতে আছেন। অনেকে আবার থিমের ব্যাপারে আগাম মুখ খুলতে চাইছেন না। এ ভাবেই একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে নবদ্বীপের রাসের চেহারা-চরিত্র। বিরাট প্রতিমা, সেরা মণ্ডপ। মণ্ডপে এক দিন থাকবে প্রতিমা, তার পরেই বিসর্জন। এটা আর মানতে চাইছেন না অনেক উদ্যোক্তাই। তাই থিমের প্রতিমা, আলোকসজ্জা, বড় মণ্ডপ এবং তিন থেকে চার দিনের পুজো-প্যাকেজ। “না হলে পড়তায় পোষাচ্ছে না দাদা”, স্পষ্ট বলছেন এক উদ্যোক্তা।
এ বারে কাগজে-কলমে রাস বৃহস্পতিবার। অথচ প্রতিমার উদ্বোধন শুরু হয়ে গিয়েছে সোমবার থেকেই। উদ্বোধনও যেমন-তেমন নয়। মন্ত্রী থেকে ময়দান-কাঁপানো খেলোয়াড় সবাই থাকছেন। অবলীলায় বাড়ছে পুজোর বাজেট। দু’লাখ, আড়াই লাখ, কোতাও বা কান পাতলে শোনা যাচ্ছে পাঁচ লক্ষ। সীমান্তের আটপৌরে গঞ্জে এত টাকা আসছে কোথা থেকে? কে উত্তর দেবে?
ভারতমাতার উদ্যোক্তা রতন ঘোষ বলেন, “আগে আমরাও বড় প্রতিমা করতাম। তাতে আনন্দের থেকে দুর্ভোগ বেশি। প্রতিমা বিসর্জনের জন্য পাড়ায় বিদ্যুৎ থাকবে না। বাড়ির অভিভাবকরা টেনশনে থাকবেন। এর থেকে থিমের পুজো অনেক বেশি মানুষ উপভোগ করবেন। সবচেয়ে বড় কথা, চার দিন ধরে উৎসব চলবে। এক দিনের মধ্যে হুশ করে ফুরিয়ে যাবে না।”আদতে থিমের আনালে বদলে যাচ্ছে সবই!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.