রাস্তায় শেষ কবে পিচ পড়েছে?
স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পঞ্চায়েত কিংবা পূর্ত-কর্তা, মনে করতে পারছেন না কেউই। তবে হ্যাঁ, গ্রামের সকলেরই মনে আছে ওই রাস্তায় গত পাঁচ বছর ধরে আর বসা চলাচল করে না। বাস মালিক সংগঠনের কর্তারা মৃদু হেসে জানাচ্ছেন, বাস তো রাস্তায় চলে, ওটা তো আর রাস্তা নেই!
প্রায় এক দশক ধরে নওদার ত্রিমোহিনী থেকে সর্বাঙ্গপুরের ৬ কিলোমিটার রাস্তাটা এমনই। পিচ দিয়ে বাঁধানো হয়েছিল কোনও এক সময়ে। এখন অবশ্য নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তার হাল দেখে তা বোঝার উপায় নেই। রাস্তা জুড়ে খানা-খন্দ। ইট বেরিয়ে বিপজ্জনক ‘খাদ’। অগম্য রাস্তায় বাসের সঙ্গে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ট্রেকারও। স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপে, কিছু দিন হল তা ফের চালু হলেও সে যাত্রা প্রাণ হাতে করেই করতে হয় তাঁদের। রাস্তার শেষ সংস্কার হয়েছিল ২০০০ সালে। তখন এই রাস্তায় বহরমপুর থেকে সর্বাঙ্গপুর হয়ে বেলডাঙা-ত্রিমোহিনী রুটে রোজ যাতায়াত করত বাস। তবে ২০০৫ সালের পর থেকে বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এমনিতেই রাস্তা বেহাল। তার উপরে বর্ষায় সমস্যা চরমে পৌঁছয়। জল জমে গিয়ে রাস্তার খানা খন্দ পুকুরের চেহারা নেয়। বাসের যন্ত্রাংশ আর যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই ওই রাস্তায় বাস আর চলে না।
|
ভাঙা রাস্তায় চলতে স্থানীয় বাসিন্দাদের এক মাত্র ভরসা ট্রেকার। তাও বর্ষার সময়ে রোজ দেখা মেলে না ট্রেকারের। সরকারি তথ্য অনুসারে আগে বেহাল অবস্থার জন্য দশটিরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে রেজিনগর থেকে নওদা ও বেলডাঙা আসার গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায়। প্রতি দিনই এই রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় প্রসূতি থেকে মরনাপন্ন রোগীদের।
নওদার ত্রিমোহিনী বাসস্ট্যান্ড থেকে সর্বাঙ্গপুর পর্যন্ত এই রাস্তার দু’পাশে বাস করেন প্রায় ১৭ হাজার মানুষ। রয়েছে সর্বাঙ্গপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সর্বাঙ্গপুর বালিকা বিদ্যালয়, ১৬টি প্রাথমিক স্কুল, দু’টি বড় মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র, ৬টি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র, ২টো জুনিয়র হাই মাদ্রাসা। সর্বাঙ্গপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও তিনটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রও এই রাস্তার পাশেই অবস্থিত। চিকিৎসক থেকে ছাত্রছাত্রী প্রত্যেককেই প্রতি দিন এই রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। রাস্তাটির দেখভাল করে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের সদস্য আরএসপি-র বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “রাস্তায় গত ৫ বছর বাস চলেনি। রাস্তার সংস্কারের জন্য আমাদের তরফে পূর্ত দফতরকে জানানো হয়। ওই বিভাগের বাস্তুকার ও সহকারী বাস্তুকারদের একটি দল রাস্তা পরিদর্শনেও আসে। জানান, রাস্তা সংস্কার করতে হলে একটি বড় কালভার্ট ও গার্ড ওয়াল তৈরি করতে হবে। তার জন্য প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা খরচ হবে। জেলা পরিষদের তরফে ওই পরিমান টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি।” নওদা পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে ওই রাস্তায় এক বছর আগে কিছু ইট ফেলা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। জেলা পরিষদের সহকারি সভাধিপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, “রাস্তার অবস্থা সত্যিই খুব খারাপ। সংস্কারের চেষ্টা করা হচ্ছে।” মুর্শিদাবাদের বিধায়ক ও রাজ্য পূর্ত দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুব্রত সাহার দায়সারা জবাব, “ওই রাস্তা সংস্কারের ব্যাপারে আমাকে তো কেউ কিছু জানায়নি।” |