রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ‘মহাগুরু’ ধরা হয় তাঁকে। কোটলায় অভিষেকেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ তাঁর ছাত্র। অনেক কথাই মনে পড়ে যাচ্ছিল ডব্লিউ ভি রামনের। বুধবার সকালে বাংলার প্র্যাক্টিসের পর আনন্দবাজারের সঙ্গে সে সব নিয়েই আড্ডায় বসে পড়লেন...
প্রথম দেখা: ২০০৭-এ তামিলনাড়ুর কোচিং করার সময় প্রথম দেখেছিলাম অশ্বিনকে।
তামিলনাড়ুর অভিজ্ঞতা: একটা সময় নিজেকে অলরাউন্ডার ভাবত অশ্বিন। জুনিয়র লেভেলে ওপেন করত। কর্নাটকের বিরুদ্ধে একটা ম্যাচের কথা মনে পড়ছে। খুব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। আমরা ভাল জায়গায় ছিলাম না। দলের সবাই স্ট্র্যাটেজি নিয়ে গম্ভীর আলোচনা করছি। হঠাৎ অশ্বিন হাত তুলে বলল, স্যর আমি আরও উপরের দিকে ব্যাট করতে চাই। নিজের উপর এতটাই বিশ্বাস ছিল ওর!
অশ্বিনকে কী ভাবে সামলাতেন: অশ্বিন ক্রিকেট নিয়ে প্রচণ্ড উৎসাহী। ওকে সব সময় বলতাম, নিজের উপর অত চাপ না নিতে। কোনও ম্যাচে বেশি উইকেট নিলে বোঝানোর চেষ্টা করতাম, ব্যাপারটা অত সহজ নয়। নিজে প্যাড আপ করে বলতাম, দ্যাখ তো আমাকে আউট করতে পারিস কি না। আজ পর্যন্ত এক বারও কিন্তু অশ্বিন আমাকে আউট করতে পারেনি!
আমার লক্ষ্য ছিল ওর উৎসাহটার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা। বেশি ছটফট করলে যে আবার সমস্যা। ওকে সব সময় বলতাম, তুই বলছিস তুই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য তৈরি। কিন্তু একটা ম্যাচে শুধু পাঁচ উইকেট নিলেই চলবে না। বেশি রান না দিয়ে উইকেট নিয়ে দেখা। সেটা করলে আমি আবার বলতাম, তুই তো অলরাউন্ডার। তা হলে নামের পাশে সেঞ্চুরি কই? পাঁচ উইকেট নেওয়ার সঙ্গে বড় রান না করতে পারলে কিন্তু তোকে অলরাউন্ডার হিসেবে ভাবতে বলিস না। একটা ম্যাচে ও সেটা করেও দেখিয়েছিল। তখন বলেছিলাম, একটা দিয়ে কী হবে? আসলে সব সময় ওর খিদেটা জাগিয়ে রাখতাম। দেখতাম যাতে কখনওই ও আত্মতুষ্ট না হয়ে পড়ে। কারণ আমি জানতাম, এক দিন ও ভারতের হয়ে খেলবেই। |
ক্যারম বল: ভেরিয়েশন নিয়ে পরীক্ষা করতে ভালবাসত অশ্বিন। আমি বলতাম আগে স্টক বলটা ঠিক কর। সপ্তাহে একটা সেশন রাখ ভেরিয়েশন নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করার জন্য। রবার বল, টেনিস বল নিয়ে গলি ক্রিকেট খেলার সময় থেকে ক্যারম বল করত অশ্বিন। তারপর দেখল ক্রিকেট বল দিয়েও করতে পারছে। মেন্ডিসকে দেখার পর বিশ্বাস আরও বেড়ে গিয়েছিল।
ম্যাচের পর: ম্যাচের আগে এসএমএস করেছিলাম, আশা করছি দশ উইকেট নিবি। ম্যাচের পর বললাম, যা টার্গেট সেট করেছিলাম তার থেকে কিন্তু একটা উইকেট কম পেয়েছিস। তার মানে দশ শতাংশ প্রত্যাশা রাখতে পারিসনি।
ড্রেসিংরুমে: এত আড্ডা মারত যে বার বার জিজ্ঞেস করতাম, কী করলে তুই চুপ থাকবি বল তো? এখন অবশ্য বয়সের সঙ্গে নিজের উপর অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ এসেছে। এখন জানে কখন চুপ করে থাকতে হবে।
অধিনায়ক অশ্বিন: ক্রিকেটমস্তিষ্ক খুব ভাল। ম্যাচ পড়ায় দক্ষ। টিমের সবার সঙ্গে বোঝাপড়া খুব ভাল। ওর নেতৃত্বে সর্বভারতীয় ওয়ান ডে টুর্নামেন্ট জিতেছিল তামিলনাড়ু। সেই দলে কিন্তু মুরলী বিজয়, বদ্রীনাথ, দিনেশ কার্তিকদের মতো সিনিয়ররা কেউ ছিল না। আনকোরা টিম নিয়ে জিতেছিল অশ্বিন। রাজ্য দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা তো আছেই, ভবিষ্যতে জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে অশ্বিনকে ভাবা হলেও আমি আশ্চর্য হব না।
অস্ট্রেলিয়া সফর: আমি চাইব অশ্বিন নিজেকে চ্যালেঞ্জ করে যাক। দু’মাস পরের কোনও সফরের দলে থাকবে কি না তা নিয়ে যেন এখনই খুব বেশি না ভাবে। |