দূষণ রোধে মহকুমা প্রশাসনকে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ দূষণ বিষয়ক বিধানসভার স্থায়ী কমিটি। সম্প্রতি দু’দিন ধরে আসানসোল মহকুমার পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্র পরিদর্শনের পরে আসানসোলের দূষণ নিয়ন্ত্রণ আধিকারিক ও মহকুমাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করে এই সব পরামর্শ দিয়েছেন ওই কমিটির সদস্যেরা। মহকুমাশাসক জানান, দ্রুত পরামর্শগুলি কার্যকর হবে।
দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, কল্যাণেশ্বরী শিল্পতালুক অঞ্চলের বাসিন্দারা বহু দিন ধরেই এলাকার একাধিক স্পঞ্জ আয়রন-সহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা থেকে দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ জানাচ্ছেন। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই স্থায়ী কমিটির সদস্যেরা এখানে আসেন। কমিটির চেয়ারম্যান শ্রীকান্ত মাহাতো জানান, শিল্প যেমন প্রয়োজন, পাশাপাশি দূষণও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। এ জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিক ও মহকুমা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে একগুচ্ছ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মহকুমাশাসক সন্দীপ দত্ত বলেন, “পরামর্শগুলি কার্যকর করার জন্য আমরা প্রকল্প তৈরি করছি। আমাদের তরফেও দূষণ নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী কমিটিকে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
মহকুমাশাসক জানান, যে সব পরামর্শ ও প্রস্তাব আলোচনায় উঠে এসেছে তার মধ্যে অন্যতম হল, সপ্তাহে এক দিন নিয়ম করে দূষণ পরীক্ষা করতে যাবে নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনের আধিকারিকদের একটি যৌথ অভিযানকারী দল। কোনও গাফিলতি পেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া গারুই নদী, নুনিয়া নদী, বরাকর ও দামোদর নদের আশপাশে একাধিক শিল্প আছে। সেগুলির বর্জ্য মিশ্রিত জল ও রাসায়নিক নদীতে মেশে। দৈনন্দিন কাজে সেই জল ব্যবহার করে তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। স্থায়ী কমিটির সদস্যেরা নদীগুলি পরিদর্শন করে দূষণ নিয়ন্ত্রনের জন্য নিয়মিত পরীক্ষা ও প্রতিষেধক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।
হাইকোর্টের নিয়ম অনুযায়ী শিল্প মালিকেরা তাঁদের মোট জমির ৩০ শতাংশ জমিতে সবুজায়ন করেছেন কি না, তা-ও নজরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে স্থায়ী কমিটি। এ প্রসঙ্গে মহকুমা প্রশাসনের তরফে স্থায়ী কমিটিকে জানানো হয়েছে, ছোট শিল্পমালিকেরা অল্প জমিতে কারখানা গড়ার পরে গাছ লাগানোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পান না। মহকুমাশাসক জানান, এই সমস্যা দূর করতে দু’পক্ষের আলোচনায় ঠিক হয়েছে, ওই সব কারখানা মালিকেরা ৩০ শতাংশ জমিতে গাছ লাগানো ও পরিচর্যা করলে যে খরচ হতো তা মহকুমা প্রশাসনকে দেবেন। তা দিয়ে প্রশাসন সামাজিক বনসৃজন করবে। কমিটির সদস্যদের আরও পরামর্শ, ইসিএলের বিভিন্ন কোলিয়ারি অধ্যুষিত অঞ্চলের পতিত জমিগুলি বনসৃজনের জন্য নেওয়া হোক। মহকুমাশাসক বলেন, “আমি এ নিয়ে ইসিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি।” এ সবের পাশাপাশি, মহকুমা প্রশাসনের প্রস্তাব, শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ জমিতে মাটির কিছুটা নীচেই রয়েছে পাথর বা কয়লা। ফলে বড় গাছের মূল মাটির গভীরে না যেতে পারায় অল্প ঝড়েই তা উপড়ে পড়ে যায়। তাই ছোট গাছ ও ফলের গাছ লাগিয়ে বনসৃজনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজ্যের বন দফতরের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানান মহকুমাশাসক। |