দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার বছর দেড়েকের মধ্যেই ফের জনসংযোগে বেরিয়ে পড়লেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। এ বারে তাঁর এই জনসংযোগ যাত্রার নামকরণ তিনি করেছেন ‘সেবা যাত্রা’।
সাধারণ মানুষকে ‘সেবা দান’ নিশ্চিত করাই নীতীশের এই যাত্রার প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য। ক্ষমতায় আসার পরেই তিনি বিধানসভায় প্রথম যে বিলটি অনুমোদন করিয়েছেন তাঁর নাম ‘পরিষেবা অধিকার আইন’। সরকারের কাছ থেকে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন পরিষেবা পাওয়ার কথা। অধিকাংশ সময়েই তারা তা ঠিক মতো পায় না। তার জন্য মূলত দায়ি সরকারের, বা আরও নির্দিষ্ট করে, সরকারি কর্মী-অফিসারদের একটা বড় অংশের কাজ না করার ইচ্ছে, বা কাজ করলে তার বিনিময়ে টাকার দাবি করা। সাধারণ মানুষকে দেয় পরিষেবার ক্ষেত্রে এই চিরন্তন দুর্নীতির মূলে আঘাত করতেই নীতীশ পরিষেবা অধিকার আইন প্রণয়ন করান। এই আইনের মূল বক্তব্য: যে পরিষেবা যাঁর দেওয়ার কথা তিনি যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনও মানুষকে তা দিতে না পারেন তবে তার দায় তাঁকেই বইতে হবে। শাস্তি হিসেবে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মী-অফিসারের আর্থিক জরিমানা হতে পারে, পদাবনতিও ঘটতে পারে। সেই পরিষেবা অধিকার মানুষ কেমন পাচ্ছে তা দেখাই নীতীশের এ বারের যাত্রার মূল লক্ষ্য। |
সেবা যাত্রার প্রথম দফায় চার দিনে নীতীশ ন’টি জেলায় ঘুরবেন। ব্লক অফিসগুলিতে যাবেন। আম-জনতার সঙ্গে বসবেন মুখোমুখি। আজই ছিল যাত্রার শুরু। ভার-নেপাল সীমান্তের প্রত্যন্ত জেলা পশ্চিম চম্পারণের বেতিয়া থেকেই শুরু হল সেবা যাত্রা। পরিষেবার পাশাপাশি নীতীশের এ বারের লক্ষ্য অবশ্যই উন্নয়ন, শিল্পমুখী পরিকাঠামো গঠন।
আজ সকালে নীতীশ কুমার প্রথমে পশ্চিম চম্পারণের জেলা সদর বেতিয়ায় পৌঁছন। সেখান থেকে তিনি ধানহায় গিয়ে একটি সেতুর কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখেন। এরপর চলে যান বারওয়ায়, ৭০০ কোটি টাকার নদী বাঁধের কাজ দেখতে। এখানে গণ্ডকের বাঁধ নির্মাণ ও পলি তোলার কাজ পর্যালোচনা করেন।
কৃষি-প্রধান বিহারকে দেশের শিল্প-মানচিত্রে অন্তত একটি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া নীতীশের অন্যতম লক্ষ্য। আর সেই শিল্প-ক্ষেত্রে ‘গন্না-বিকাশ’-ই যে সঠিক পথ তা ঘনিষ্ঠ মহলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন নীতীশ। সেই লক্ষ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর লওরিয়া গ্রামে আসা। বুদ্ধ সার্কিটে গুরুত্বপূর্ণ এই লওরিয়া গ্রাম। কুশীনগরের পথে তাঁর নির্বাণ যাত্রায় এই লওরিয়াতে থেমেছিলেন ভগবান বুদ্ধ। ৮০-র দশকে এখানকার বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি চিনিকল পুনরুজ্জীবনে নীতীশ উদ্যোগী হয়েছেন। একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে এই চিনি কলটি অধিগ্রহণ করিয়ে প্রায় নতুন করেই গড়াচ্ছেন নীতীশ।
৪০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি ঘুরে দেখেন নীতীশ। এক সময় চম্পারণকে ভারতের চিনি শিল্পের ধাত্রীভূমি হিসেবে চিহ্নিত করা হত। চম্পারণের সেই হৃতগৌরব ফেরাতে বদ্ধপরিকর নীতীশ।পরিষেবা অধিকারের কাজ দেখতে মুখ্যমন্ত্রী কাজ দেখতে যোগপট্টি ব্লকে যান। সেখানে গিয়ে তিনি আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জানতে চান, সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের শংসাপত্র কী ভাবে দেওয়া হয়, তাও। কত দিন সময় লাগে। খতিয়ে দেখেন ফাইল-পত্তরও। |