এক দৌড়ে গন্তব্যে পৌঁছনো প্রায় ভুলেই গিয়েছে মেট্রো।
প্রায় নিত্যদিনই লেগে রয়েছে দুর্দশা। এক দিন কামরার দরজা বন্ধ না হওয়া, তো অন্য দিন ট্রেনের চাকার ব্রেক আটকে যাওয়া কিংবা বাতানুকূল যন্ত্র বিকল হওয়া সব ধরনের রোগই ভুগিয়ে চলেছে মেট্রোকে। একটি ট্রেন মাঝপথে খারাপ হলেই পিছনে পরপর আটকে পড়া ট্রেনের দেরি। মাঝেমধ্যে বাতিলও হচ্ছে ট্রেন। ফলে প্রায়দিনই দুর্ভোগে পড়ছেন নিত্যযাত্রীরা। তবে, অন্য বিভ্রাট রোধ করা সম্ভব হলেও মেট্রোয় আত্মহত্যা আটকানোর কোনও উপায় এখনও বার করতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। বুধবারও সেন্ট্রাল স্টেশনে এক মহিলা ট্রেনের সামনে ‘ঝাঁপ’ দেন। ঘটনাস্থলে তাঁর মৃত্যু হয়। এর জেরে প্রায় এক ঘণ্টা মেট্রো চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় নাকাল হন যাত্রীরা।
তার আগে যান্ত্রিক বিভ্রাট ভুগিয়েছে এ দিন সকালেও। মেট্রো সূত্রের খবর, সকালের ব্যস্ত সময়ে ফের বিগড়ে যায় ভিড়ে ঠাসা একটি ট্রেন। ট্রেনটি দমদম থেকে ছেড়ে দু’তিনটি স্টেশন পার হতেই চালক খেয়াল করেন, মোটর-কামরার নীচ থেকে ক্রমাগত একটি জোরালো শব্দ হচ্ছে। সে ভাবেই ট্রেনটি টালিগঞ্জ পৌঁছয় ১০টা নাগাদ। সেখানে আওয়াজ আরও বেড়ে যাওয়ায় চালক ট্রেন থামিয়ে দেন। যাত্রীদের নামিয়ে ট্রেনটিকে নিয়ে যাওয়া হয় কারশেডে।
ফলে যা হওয়ার ছিল, হলও তা-ই। একটি ট্রেন আটকে যেতেই পিছনে পরপর বহু ট্রেন আটকে যায়। পরে আবার রেকের অভাবে একটি আপ ট্রেন বাতিলও করতে হয়। এতক্ষণ ধরে বিভিন্ন স্টেশনে আটকে থাকা ভিড়টা আছড়ে পড়ে অন্যান্য ট্রেনে। ভিড়ের চাপে অনেক ট্রেনে দরজা বন্ধ করা যাচ্ছিল না। এ সবের জেরে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মেট্রোয় যাতায়াত করতে গিয়ে তুমুল ঝক্কি পোহাতে হয় যাত্রীদের।
যান্ত্রিক বিভ্রাটের এই ধারাবাহিকতায় প্রশ্ন উঠেছে, কেন এমন ঘটে চলেছে বারবার? কবেই বা মেট্রো রেল যথাযথ পরিষেবা দিতে পারবে? মেট্রোকর্তাদের একাংশ দু’টি যুক্তি দিচ্ছেন। প্রথমত, মেট্রো রেলের হাতে এখন পুরনো (বাতানুকূল নয়) রেক ১৮টি। আর বাতানুকূল রেক চারটি। তার মধ্যে দু’টি সারা দিনে দুই থেকে তিন বার ব্যবহার হয়। বাকি দু’টি মাঝেমধ্যে। বাতানুকূল রেকগুলি নতুন হলেও বাকিগুলি প্রায় ২০-২৫ বছরের পুরনো। ফলে গোলমাল লেগেই থাকে। যে রেকগুলি নিয়মিত চলছে, সেগুলিকে বিশ্রাম না দিয়ে সারাক্ষণ ব্যবহার করলে গোলমাল ক্রমশ বাড়ে। এ ক্ষেত্রে সেটাই হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, রেকের সংখ্যা না বাড়লে বিভ্রাট পিছু ছাড়বে না। এখন মেট্রোর ২৫ কিলোমিটার রাস্তা যেতে-আসতে সময় লাগে ১০০ মিনিট। দুই প্রান্তিক স্টেশনে লাইন পাল্টাতে আরও ১০ মিনিট। ফলে পাঁচ মিনিট অন্তর ট্রেন চালাতে গেলে রেক লাগবে ২২টি। আর ছ’মিনিট অন্তর ট্রেন চালাতে গেলে রেক লাগবে ১৯টি। অথচ, মেট্রোর হাতে রয়েছে ১৮টি রেক। কারণ, বাতানুকূল চারটি রেকের দক্ষতা পুরোমাত্রায় না হওয়ায় সেগুলি সব সময়ের জন্য ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আর তাতেই হচ্ছে গোলমাল।
কর্তৃপক্ষের তরফে মেট্রোর অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার প্রত্যুষ ঘোষ অবশ্য এ প্রসঙ্গে বলেন, “বিদেশ থেকে প্রযুক্তি ও যন্ত্র এনে রেকগুলি আমাদের দেশে তৈরি করা হয়। ফলে রেক চাইলেই পাওয়া যায় না। নতুন রেক আসতে সময় লাগে।” ঠিক কবে আসবে আরও রেক? প্রত্যুষবাবু শুধু বলেন, “শীঘ্রই এসে যাবে।” রেল সূত্রে খবর, মেট্রোর কামরা যেখানে তৈরি হয়, পেরাম্বুরের সেই ওয়ার্কশপে ‘থার্ড রেল’ নেই। ফলে সেখানে নতুন রেক পরীক্ষামূলক ভাবে চালানো যায় না। কলকাতায় এনে তা করতে দেরি হয়। গোলমালগুলিও ধরা পড়ে না। |