রাজনৈতিক সভা-মিছিল ঘিরে ফের অবরুদ্ধ হল শহর। তবে, অফিসপাড়া ছাড়িয়ে বুধবার তা ছড়িয়ে পড়ল কলেজপাড়াতেও। এ দিন কলেজ স্কোয়ারকে জমায়েতের অন্যতম জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছিল বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সংগঠন ‘অ্যাবেকা’। আবার এ দিনই রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ থেকে এসএফআইয়ের মিছিল শেষ হয় কলেজ স্ট্রিটে। উল্টো দিকে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ দুপুরে পাথুরিয়াঘাটার উদ্দেশে মিছিল শুরু করে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে। আর এই ‘ত্রয়ী’র জেরে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে রইল কলেজপাড়া। যানজটের প্রভাব পড়েছে মহাত্মা গাঁধী রোড, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, জওহরলাল নেহরু রোড, লেনিন সরণি, নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট, এস এন ব্যানার্জি রোডেও। |
কাজের দিনে মিছিল করা এবং যে কোনও কারণ দেখিয়ে রাস্তা অবরোধ করার এই প্রবণতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ। ইতিমধ্যেই জনজীবনে ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী এই ধরনের কর্মসূচির বিরোধিতা করেছেন তিনি। তাঁর নিজের দল যাতে এমন না করে, সে ব্যাপারেও নির্দেশ দিয়েছেন তাঁদের। কিন্তু বিভিন্ন দল বা সংগঠনের নামে এই মিছিল ও অবরোধের রাজনীতি তবু কেন বন্ধ হচ্ছে না, নিজের ঘনিষ্ঠ মহলে সে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়া অর্ডিন্যান্স নিয়ে বিক্ষোভ-মিছিলের ডাক দেয় এসএফআই। ‘অ্যাবেকা’র দাবি ছিল, নির্দিষ্ট বিদ্যুৎ-নীতি ঘোষণা করতে হবে। বন্দিমুক্তি-সহ যৌথ বাহিনীর ‘অত্যাচারের’ বিরুদ্ধে মিছিলের ডাক দিয়েছিল এক নকশালপন্থী সংগঠন। আর মাওবাদীদের অস্ত্র সংবরণের দাবিতে মিছিল করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। কিন্তু এ দিনের যানজট ফের প্রশ্ন তুলেছে, কাজের দিনে রাজনৈতিক কর্মসূচির জেরে কেন নাজেহাল হবেন সাধারণ মানুষ?
পুুলিশ জানিয়েছে, এ দিন দুপুর দুটো নাগাদ রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ থেকে কলেজ স্ট্রিটের উদ্দেশে রওনা দেয় এসএফআইয়ের মিছিল। লেনিন সরণি হয়ে তা পৌঁছয় কলেজ স্ট্রিটে। তার আগে অবশ্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মিছিল রওনা দিয়েছে পাথুরিয়াঘাটার দিকে। উল্টো দিকে, কলেজ স্কোয়ার থেকে এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে বিকেল তিনটে থেকে মিছিল করে ধর্মতলার দিকে আসতে শুরু করেন ‘অ্যাবেকা’র সমর্থকেরা। পুলিশ সূত্রের খবর, অন্য সময়ে রাস্তার এক দিক দিয়ে মিছিল গেলে অন্য দিকে গাড়ি চলাচল করানো হয়। কিন্তু এ দিন একই রাস্তায় দুই মিছিলের ফলে রাস্তার দু’দিকই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
এর পরে সাড়ে তিনটে নাগাদ হঠাৎ ধর্মতলার মোড়ে অবরোধ শুরু করেন প্রায় পাঁচশো ‘অ্যাবেকা’ সমর্থক। কলকাতা পুলিশের দাবি, মিনিট দশেকের মধ্যেই ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং থেকে অবরোধকারীদের হটিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে থমকে গিয়েছে যান চলাচল। অন্য দিকে, যৌথ বাহিনীর ‘অত্যাচারের’ প্রতিবাদ এবং বন্দিমুক্তির দাবিতে নকশালপন্থী একটি সংগঠনের মিছিল অবশ্য পুরসভার সামনেই আটকে দেয় পুলিশ। কিন্তু তত ক্ষণে প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে মধ্য কলকাতার অনেকটা অংশ। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যখন যে রাস্তা দিয়ে মিছিল গিয়েছে, সেই রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। তবে, মিছিল যাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ওই রাস্তাগুলি দিয়ে ফের গাড়ি চলেছে।”
এ দিন শহর জুড়ে লাগাতার মিছিলের জেরে পদে পদে নাকাল হয়েছেন সাধারণ মানুষ। আর অনেক ক্ষেত্রেই শহরের এই ‘সংস্কৃতি’র বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তাঁরা। বিকেল তিনটে নাগাদ যানজটে আটকে থাকা ট্যাক্সিতে বসে ছিলেন এক বৃদ্ধ। যানজট দেখে বিরক্ত হয়ে তাঁর প্রশ্ন, এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি আদৌ বদলাবে কি? চাঁদনি চক মেট্রোর সামনে বসে যখন তিনি এ কথা বলছেন, যোগাযোগ ভবন থেকে শুরু করে গাড়ির সারি তখন চলে গিয়েছে প্রায় ধর্মতলা মোড় পর্যন্ত। একই দৃশ্য এ দিন চোখে পড়েছে এস এন ব্যানার্জি রোড বা জওহরলাল নেহরু রোডেও। কোথাও বা জটে আটকেছে স্কুলপড়ুয়াদের গাড়ি, কোথাও বা যানজটে আটকে থেকে ঘুমিয়ে পড়েছেন দূরপাল্লার বাসের চালক।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, যানজট ছাড়াতে এ দিন বিকেল থেকে জওহরলাল নেহরু রোডের উত্তরমুখী গাড়িগুলি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ, গভর্নমেন্ট প্লেস ইস্ট হয়ে সেগুলি ধর্মতলার কে সি দাশের মোড়ে এসে পড়ে। বিকেল সাড়ে চারটের পর থেকে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। |