উৎসবের মরসুমেও ঘুরে দাঁড়াতে ব্যর্থ দেশের গাড়ি শিল্প। বিক্রি বৃদ্ধি তো দূর অস্ৎ, গত অক্টোবরে (আগের বছরের একই সময়ের তুলনায়) যাত্রীবাহী গাড়ির (প্যাসেঞ্জার কার) বিক্রি কমেছে ২৩.৮%। গত এক দশকে বিক্রি কমার নিরিখে যা সর্বোচ্চ। এমনকী দেশের আর্থিক ছবি এখন যে রকম, তাতে আগামী বছরের গোড়াতেও পরিস্থিতির খুব উন্নতি আশা করছে না তারা।
গত অক্টোবরের গাড়ি বিক্রির খতিয়ান বুধবারই প্রকাশ করেছে গাড়ি সংস্থাগুলির সংগঠন সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স (সিয়াম)। যাতে দেখা যাচ্ছে ২০১০-এর অক্টোবরের তুলনায় এই অক্টোবরে যাত্রীবাহী গাড়ির বিক্রি কমেছে প্রায় ২৩.৮%। যা ছাপিয়ে গিয়েছে ১০ বছর আগের রেকর্ডকে। এর আগে ২০০০-এর ডিসেম্বরে গাড়ি বিক্রি কমেছিল ২৩.১৯%। |
এক দিকে, চড়া মূল্যবৃদ্ধি যুঝতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক লাগাতার সুদ বাড়ানোয় মাসিক কিস্তি বেড়েছে গাড়িঋণের। অন্য দিকে, ক্রমাগত বেড়ে চলেছে পেট্রোলের দাম। মূলত এই দুইয়ের জেরেই ভাটা পড়ছে গাড়ি কেনার আগ্রহে। এর সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে মারুতির মানেসর কারখানায় লাগাতার ধর্মঘট। তা-ও বেশ খানিকটা টেনে নামিয়েছে সার্বিক গাড়ি বিক্রিকে। কারণ দেশের বাজারে যত গাড়ি বিক্রি হয় তার প্রায় অর্ধেকই আসে মারুতির কারখানা থেকে। সিয়ামের সিনিয়র ডিরেক্টর সুগত সেন জানান, ছোট ডিজেল গাড়ির চাহিদা বাড়লেও বেশিরভাগ সংস্থার ভাঁড়ারেই সেই ধরনের গাড়ি নেই। তাই সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছে।
সাধারণত উৎসবের মরসুমে গাড়ি বিক্রি বাড়ে। এ বার তা হয়নি। অথচ এ বার বিক্রি বাড়াতে ‘ডাউনপেমেন্ট’-এ ছাড়-সহ নানা আকর্ষণীয় প্রকল্প এনেছিল বেশ কিছু সংস্থা। তা সত্ত্বেও কমেছে বিক্রি। এর কারণ হিসেবে আর্থিক পরিস্থিতিকেই দায়ী করছে গাড়ি শিল্প। তাদের মতে, ব্যক্তিগত যাত্রীগাড়ি কেনার ক্ষেত্রে একটা আবেগ কাজ করে। বাজারের বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে তা এখন তলানিতে। ফলে গাড়ি কেনার আগে দু’বার ভাবছেন ক্রেতারা।
জেনারেল মোটরস ইন্ডিয়া-র কর্তা পি বালেন্দ্রন ও মারুতি সুজুকি-র কর্তা শশাঙ্ক শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত গাড়ির চাহিদার কোনও উন্নতির হয়নি। ফেব্রুয়ারির আগে তা হবেও না বলে মনে করছেন বালেন্দ্রন। তবে শশাঙ্কের আশা, ডিলারদের বিক্রি মাস কয়েকের মধ্যে বাড়বে। তা ছাড়া, আশার একটি রুপোলি রেখা দেখছে সিয়ামও। তাদের হিসেবে, অক্টোবরে প্যাসেঞ্জার কারের বিক্রি কমলেও, বাণিজ্যিক গাড়ির বিক্রি বেড়েছে ১৮.৫%। পরিকাঠামো উন্নয়ন-সহ আর্থিক উন্নয়নের কর্মকাণ্ডের জন্য প্রয়োজন হয় বাণিজ্যিক গাড়ি। তাই তা বিক্রি বাড়ার অর্থ সেই কর্মকাণ্ডে ভাটা না-পড়া। এ দিকে, পিটিআই জানিয়েছে, হুন্ডাই মোটর ইন্ডিয়া ৪০০ কোটি টাকা লগ্নি করে ডিজেল ইঞ্জিন তৈরির পরিকল্পনা এখন স্থগিত রাখছে। সংস্থার দাবি, বাজারের পরিস্থিতি বিচার করেই এই সিদ্ধান্ত। |