জীর্ণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা
নতুন ভবন তৈরিই হয়নি পানিপারুলে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন তৈরির জন্য বছর চারেক আগে বরাদ্দ হয়েছিল টাকা। জেলা পরিষদ ও স্বাস্থ্য দফতরের ‘গয়ংগচ্ছ’ মনোভাবের জন্য গত বছর কাজ শুরু হলেও তা অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে এগরার পানিপারুলে জীর্ণ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও মতে চলছে রোগীদের চিকিৎসা।
এ দিকে, আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের লোক এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন বহু মানুষ আসেন চিকিৎসার জন্য। পরিকাঠামোর অভাবে সমস্যায় পড়েছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসকের তরফে সংশ্লিষ্ট সব মহলে বারবার আবেদন জানানো হলেও কর্তারা উদাসীন। ফলে সেই তিমিরেই রয়েছে এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক দেবব্রত করণ বলেন, “দশ শয্যার এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন ভর্তি থাকেন অন্তত ২৫ জন রোগী। প্রতিদিন গড়ে ৪-৫ জন প্রসূতি ভর্তি হন। দু’টি ছোট ঘরে এবং মেঝেতে গাদাগাদি করে পড়ে থাকতে হয় নবজাতক, প্রসূতি এবং অন্য রোগীদের।” তাঁর কথায়, “এগরা ও রামনগরের চারটি ব্লক এমনকি পার্শ্ববর্তী ওড়িশার গ্রাম থেকেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বহির্বিভাগে দিনে গড়ে দেড়শো রোগী আসে। অথচ আছেন দু’জন চিকিৎসক, তিন জন নার্স। নেই ফার্মাসিস্ট, সাফাই এবং অন্য কর্মী। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘর, কোয়ার্টারগুলি জীর্ণ। সব জেনেও প্রশাসন নীরব।” গত মাসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক, এগরার মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক, মহকুমাশাসক, জেলা পরিষদের প্রতিনিধি দল। মহকুমাশাসক রত্নেশ্বর রায়ের বক্তব্য, “সমস্যাটি নিয়ে ঊর্ধ্বতন স্তরে আলোচনা চলছে।”
এলাকার মানুষের চাহিদা অনুযায়ী এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো বৃদ্ধির জন্য ২০০৭-এ নতুন ভবন তৈরির অনুমোদনের সঙ্গে অর্থ বরাদ্দ করে স্বাস্থ্য দফতর। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সে সময় একজন ঠিকাদার কাজের দায়িত্ব নিলেও কাজ করেনি। ২০০৮-এ জেলা পরিষদে তৃণমূল ক্ষমতায় এলে বিষয়টি নিয়ে আর নাড়াচাড়াই করা হয়নি। ২০০৯-এ অন্য ঠিকাদার ওই টাকায় কাজের দায়িত্ব নিতে না চাওয়ায় নতুন করে প্রকল্প তৈরি করা হয়। ২০১০-এ ৮৪ লক্ষ টাকার সেই প্রকল্প অনুমোদন হয়ে অর্থ বরাদ্দ হয়। নতুন ঠিকাদার কাজের দায়িত্ব নেন। পুজোর মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ভবনের গাঁথনি ও ঢালাই ছাড়া বাকি কোনও কাজই হয়নি।
বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র উন্নয়ন কমিটির সদস্য ও পঞ্চায়েত সদস্য দীনেশ প্রধান বলেন, “গত তিন মাস ধরে কাজ বন্ধ। স্বাস্থ্য দফতর, প্রশাসন, জেলা পরিষদকে জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি।” দেবব্রতবাবু বলেন, “পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ওই ভবনে রাতে সমাজবিরোধীদের আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে।” জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন আবার সমস্ত দায় চাপিয়েছেন ঠিকাদারের উপর। তিনি বলেন, “ঠিকাদার পরিকল্পিত ভাবে কাজে ঢিলেমি করছেন, যাতে আবার প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করতে হয়। বিষয়টির প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য রাজ্যস্তরে পাঠানো হয়েছে। ঠিকাদারকেও স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দ্রুত কাজ শেষ না করলে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার মহেশ্বর সামন্ত’র দাবি, বর্তমানে গোটা প্রকল্পের মূল্য মোট এক কোটি দশ লক্ষ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, “কাজের জন্য ৬৯ লক্ষ টাকার ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ দেওয়া হয়েছে। ওই প্রকল্প অনুযায়ী কাজ করলে কয়েক লক্ষ টাকার লোকসান হবে। বিষয়টি বারবার জেলা পরিষদকে বলেছি। কাজ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ রেখেছি। তবু চিকিৎসা পরিষেবার স্বার্থে যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করার চেষ্টা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.