করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল
সকাল-বিকেল ওষুধ বদল,
হাসপাতালের আজব ‘ব্যামো’
দলে যায় ওষুধ!
করিমপুর গ্রামীন হাসপাতালের বিছানায় কাহিল হয়ে শুয়ে এক যুবক। একরাশ উদ্বেগ নিয়ে পাশে বসে তাঁর আত্মীয়রা। আগের রাতে কর্তব্যরত চিকিসকের প্রেসক্রিপসন মতো ওষুধ এনে বেজায় ফ্যাসাদে পড়েছেন রোগীর বাড়ির লোকজন। সকালে রাউন্ডে এসে অন্য এক চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন দেখেই চমকে উঠে বলেন গিয়েছেন, ‘মোটেই ঠিক ওষুধ পড়ছে না। এ ওষুধ খাওয়ালে কোনদিন অসুখ সারবে না।’ অগত্যা বাড়ির লোক ছুটেছেন নতুন প্রেসক্রিপশন নিয়ে। আর ওষুধের দোকান-মালিক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বদলানো যাবে না ওষুধ। অতএব গচ্ছা। কিন্তু তে বলতে পারে রাতের রাউন্ডে এসে অ্যন কেউ ফের বদলে দেবে না ওষুধ! করিমপুর গ্রামীন হাসপাতালে এটা নিত্য ছবি। আশপাশের লক্ষাধিক মানুষ সীমান্তের এউ গ্রামীণ হাসপাতালের ভরসাতেই বেঁচে রয়েছেন। কিন্তু সেখানে হাসপাতালের চিকিসকদের নিজেদের মধ্যে সমন্বয় তো দূরস্থান, এ-ওকে দেখতেই পারেন না! ফলে ঘন ঘন বদলে যায় ওষুধ। এ কী নিছকই ‘ইগো’ সমস্যা নাকি ওষুধ সংস্থাগুলির সঙ্গে চিকিৎসকদের ‘বিশেষ সম্পর্কের’ জেরেই এই ভোগান্তি। আর সব জেনেও ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে আছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার বিধুভূষণ মাহাতো বলেন,‘‘ বার বার ওষুধ পাল্টানোর বিষয়টা আমি শুনেছি। এ ব্যাপারে আমার কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন অনেকে। এর ফলে রোগীরা যেমন বিভ্রান্ত হচ্ছেন তেমনি আর্থিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে শুধু ওষুধের ব্র্যাণ্ডটা পাল্টে দেওয়া হচ্ছে।’’ ওই হাসপাতালের চিকিসক দীপক দাস বলেন,‘‘ ধরুন এক জন সামান্য জ্বর নিয়ে হাসপাতালে সাত দিন ধরে ভর্তি আছেন। আমি এক জন চিকিসক হয়ে বুঝতে পারছি, যে ওষুধ ওই রোগি খাচ্ছে তাতে সে কবে সুস্থ হবে ঠিক নেই। অথচ এক গাদা টাকা খরচ হচ্ছে। রোগীর স্বার্থেই বাধ্য হয়েই অনেক সময়ে অন্য ওষুধ আনতে বলি।” কিন্তু বিষয়টি তিনি সুপারের নজরে আনেননি কেন? দীপকবাবু এনিয়ে গিয়েছে। পাল্টা জানাচ্ছেন, হাসপাতালে ওষুধ থাকতেও রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ আনতে বলা হচ্ছে। করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক নিরঞ্জন রায় ও সমর বিশ্বাস পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, ‘‘ ওষুধ ভালো না খারাপ এটা ঠিক করে ড্রাগ কন্ট্রোলার। একটা ওষুধ কারো ক্ষেত্রে কাজ করতে একটু সময় নিচ্ছে মানেই যে সেই চিকিসক খারাপ এটা ভাবা ঠিক নয়। অথচ এই হাসপাতালে কেউ কেউ এটা ভাবছেন। এবং রোগিদের সামনেই অন্যান্য চিকিৎসক সম্পর্কে অপমানজনক মন্তব্য করছেন। এটা ঠিক নয়।” করিমপুরের এক ওষুধ বিক্রেতা জানান,‘‘ হাসপাতালের চিকিসকদের নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আছে। এর ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমাদের। ব্যবহৃত ওষুধ আমাদের ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। অথচ বাড়ির লোক আমাদের উপর চাপ দিচ্ছেন।” অল ওয়েষ্ট বেঙ্গল সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউনিয়নের সদস্য উদয় বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে বলেন,‘‘ আমাদের কাজ চিকিসকের কাছে গিয়ে ওষুধের কথা বলা। তারপর সেই ওষুধ উনি লিখবেন কিনা তাঁর ব্যাপার। হাসপাতালে যা চলছে তা চিকিসকদের নিজেদের সমস্যা।’’
বিষয়টা শুনেছেন নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত হালদার। তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি বিচার করে কখনও কোনও চিকিৎসক ওষুধ পাল্টাতে পারেন। কিন্তু সেটা যদি প্রায়ই হতে থাকে তাহলে তো সেটা উদ্বেগের বিষয়! সুপারের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.