কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক প্রবীরকুমার ঘোষকে সাসপেন্ড করল স্বাস্থ্য দফতর। মঙ্গলবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিব সুকুমার ভট্টাচার্য বলেন, “মদ খেয়ে হাসপাতালে রোগী দেখার ঘটনায় প্রবীরবাবুকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এই সংক্রান্ত চিঠি এ দিনই স্বাস্থ্য-অধিকর্তার মাধ্যমে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে পাঠানো হয়েছে।”
প্রবীরবাবু অবশ্য এ দিন এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁর স্ত্রী দেবযানী ঘোষ বিকেলে বলেন, “ওঁকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই ফাঁসানো হল!” দেবযানীদেবী নিজেও কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের চিকিৎসক।
গত রবিবার বাঘা যতীন স্টেট জেনারেলের ইমার্জেন্সিতে ‘মদ্যপ’ অবস্থায় রোগী দেখার অভিযোগ উঠেছিল প্রবীরবাবুর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে কিছু রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান। প্রবীরবাবুকে ঘেরাও করে রাখা হয়। পরে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওই চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হচ্ছে।
এ দিকে বাঘা যতীন স্টেট জেনারেলে প্রবীরবাবুই ছিলেন মেডিসিনের একমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। রবিবারের ঘটনার পরে তাঁকে কাজে যোগ দিতে নিষেধ করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। এ দিন দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, চিকিৎসক না-থাকায় হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি লাগিয়ে তা জানিয়েও দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। যা দেখে ফিরে গিয়েছেন দেখাতে আসা রোগীরা। ওঁরা ফিরে গেলেও ডাক্তারের অভাবে ঘোর বিপাকে পড়েছেন মেডিসিন বিভাগে ভর্তি থাকা ২৪ জন রোগী (১১ জন পুরুষ, ১৩ জন মহিলা)। ওঁদের চিকিৎসা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল-কর্মীরা। বিভাগের এক নার্সের কথায়, “সোমবারও কোনও ডাক্তার ভর্তি রোগীদের দেখতে আসেননি। আমরা সকলে মিলে ওয়ার্ড মাস্টারকে জানিয়েছি।” মেল ওয়ার্ডে ভর্তি এক বৃদ্ধের ছেলে প্রদীপ মিস্ত্রির অসহায় প্রশ্ন, “অন্য ডাক্তার আনা হয়নি! বাবাকে এখন দেখবে কে?”
কী হবে ওঁদের চিকিৎসার? বাঘা যতীন স্টেট জেনারেলের সুপার বিকাশচন্দ্র মণ্ডলের জবাব, “আমি কিছু বলব না। স্বাস্থ্যভবনের কর্তারাই বলবেন।” তাঁরা কী বলছেন? স্বাস্থ্যভবনের অবশ্য আশ্বাস: বিকল্প ব্যবস্থা হচ্ছে। বিশেষ সচিব সুকুমারবাবুর বক্তব্য, “দু’-তিন দিনের মধ্যে ওখানে এক জন ডাক্তার পাঠানো হবে। সুপারকে বলা হয়েছে, ভর্তি থাকা রোগীদের চিকিৎসায় যেন গাফিলতি না-হয়। প্রয়োজনে অন্য হাসপাতালে রেফার করতেও বলা হয়েছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত চিকিৎসকের রক্ত ও মূত্র পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও আসেনি। স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য সেই রিপোর্টকে বিশেষ আমল দিচ্ছে না। সুকুমারবাবুর কথায়, “রিপোর্টের চেয়েও আমরা রোগী ও তাঁদের পরিজনদের অভিযোগকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। আগামী দশ-বারো দিনের মধ্যে প্রবীরবাবুকে চার্জশিট দেবে স্বাস্থ্য দফতর।” তার পরে?
বিশেষ সচিব জানাচ্ছেন, এর পরে এক জন সরকারি অফিসার ঘটনার অনুসন্ধান করবেন। তখন অভিযুক্ত আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন। আর মূল অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, তখন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |