ফালাকাটায় যে রিকশা ভাড়ার নিয়ন্ত্রণ না-থাকা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে তা পুলিশ-প্রশাসনের অজানা নয়। ইতিমধ্যেই শহরের অস্বাভাবিক রিক্সা ভাড়া নিয়ে ইতিমধ্যে ফালাকাটার বিডিও-কে ডেপুটেশন দিয়েছে ক্রেতা সুরক্ষা বিষয়ক একটি সংগঠন। ওই সংগঠনের পক্ষে ভোলা দাশগুপ্ত বলেন, “যে যার মত ভাড়া নিচ্ছে তা কিছুতে মানা যায় না। প্রশাসনের কেন ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না তা বুঝতে পারছি না।” ফালাকাটা গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষিকা সীমা রায়ের অভিজ্ঞতাও তিক্ত। তাঁর কথায়, “স্কুল থেকে বাড়ি যাতায়াত করতে কয়েক মাস আগে ১০ টাকা লাগত। এখন সেখানে ২০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। অথচ অন্য শহরগুলিতে এর চেয়ে বেশি দূরে চলাচল করলেও কম ভাড়া দিতে হয়। কেউ কি দেখার নেই।” সদর এলাকায় যে রোজই গোলমাল হয় রিকশা ভাড়া নিয়ে সে কথা জানাতে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিমা কোম্পানির এজেন্ট ত্রিনাথ সাহা। তিনি বলেন, “মাঝেমধ্যে মহিলাদের সঙ্গে যে ভাবে ভাড়া নিয়ে চালকরা ঝগড়া করেন তা মানা যায় না। রাত হলে ভাড়া চড়তে থাকে। প্রশাসন করছেটা কি?” রিকশা চালকদের মত অবশ্য অন্যরকম। যেমন হাসপাতাল মোড়ের রিক্সা চালক বিদ্যা বর্মন বা নতুন চৌপথির চালক অনন্ত বর্মনের যুক্তি, “জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে আগের মত ভাড়া নিলে কেমন করে চলবে? সরকারি কর্মচারীদের মাইনে কত বেড়েছে দেখুন। রিক্সা মেরামতি করতে এখন দ্বিগুণ খরচ।” সিটু-র রিক্সা চালক ইউনিয়নের ফালাকাটার সম্পাদক শঙ্কর ঘোষও মনে করেন, ভাড়া না-বাড়ালে চালকেরা সমস্যায় পড়বেন। তিনি বলেন, “জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। পাঁচ বছর আগের ভাড়ার বদলে নতুন ভাড়ার তালিকা করার জন্য নির্বাচনের আগে বিডিওকে বলা হলেও কোনও লাভ হয়নি। সকলে মিলে তাই ভাড়া ঠিক করা হয়েছে। ন্যূনতম ভাড়া কেউ সাত টাকা বা কেউ ১০ টাকা নিচ্ছে। আমরা নিরুপায়।” তৃণমূলের রিক্সা চালক ইউনিয়নের নেতা আমিনুল ইসলামের গলায় সেই একই সুর। তাঁর যুক্তি, “প্রশাসন ভাড়ার তালিকা কবে তৈরি করবে সে আশায় কয়েক মাস বসে থাকলেও লাভ হয়নি। আমরা নতুন ভাড়া ঠিক করেছি। সব কিছুর দাম বেড়েছে। আমরা কেন ভাড়া বাড়াব না?” ফালাকাটার বি ডি ও সুশান্ত মণ্ডলের কথায়, “তিন গ্রাম পঞ্চায়েতকে নতুন ভাড়া ও রিক্সা চালকদের নাম নথিভুক্ত করার জন্য বলা হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে দ্রুততার সঙ্গে তা না করা হলে পঞ্চায়েত সমিতি কাজটি করবে।” ফালাকাটা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পরেশ সরকার বলেন, “পুজোর জন্য এত দিন ব্যস্ত থাকায় রিক্সা ভাড়ার তালিকা ঠিক করা যায়নি। শীঘ্র আমরা সকলের সঙ্গে বসে ভাড়া ঠিক করব। তবে রিক্সায় নম্বর প্লেট অনেক দিন ধরে বসানো হচ্ছে না। সব কিছু নিয়ে বৈঠক হবে।” পঞ্চায়েত ও প্রশাসন সূত্রের খবর, নূন্যতম রিক্সা ভাড়া কত বা কত জন নথিভুক্ত রিক্সা চালক বা রিক্সা শহরে রয়েছে সে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। পুরো তালিকা নেই ইউনিয়ন গুলির কাছেও। ওই তালিকা তৈরি করে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক কবে হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।
|