আগামী জানুয়ারির গোড়াতেই বাঁ-হাতি সেচ খালে প্রথম জল ছাড়বেন তিস্তা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে তারই তোড়জোড় চলছে। তাতে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের জল পাবেন কৃষকেরা। মূলত মালবাজার এবং ময়নাগুড়ি এলাকায় তিস্তার বাঁ হাতি সেচ খাল লাগোয়া জমিগুলি তাতে উপকৃত হবে। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে তিস্তা সেচ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ, জলপাইগুড়ির বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা, শঙ্কর মালাকার, গোলাম রব্বানিদের নিয়ে সেচ প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে বৈঠক করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। বৈঠক শেষে প্রকল্পের ওই অগ্রগতির কথা জানিয়েছেন তিনি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই তিস্তা সেচ প্রকল্পের বাঁ-হাতি খাল খুলে দেওয়া হচ্ছে। ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সে জন্য প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। বাঁ-হাতি খালের অপর একাংশের কাজের জন্য ১৫৭ কোটি টাকার টেন্ডার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে আরও প্রায় ২৫-৩০ হাজার হেক্টর জমিতে দ্রুত তিস্তা সেচ প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।” তিস্তা সেচ প্রকল্প সূত্রেই জানা গিয়েছে, তিস্তা ব্যারেজের বাঁ-হাতি খালগুলির সমস্ত কাজ সম্পূর্ণ হলে তার মাধ্যমে প্রায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ পৌঁছে দেওয়া সামগ্রিক পরিকল্পনা রয়েছে। একাংশ কাজ শেষের মুখে জানুয়ারির গোড়াতেই তা খুলে দেওয়া হবে। মালবাজার, ময়নাগুড়ি এলাকায় বাঁ হাতি খালের একটি উপশাখার কাজের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তা সেচ প্রকল্পে এই আর্থিক বছরে ইতিমধ্যেই ৩৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তার মধ্যে ১৫৭ কোটি টাকার ওই টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। |
বৈঠকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তিস্তা সেচ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে তৎপর হয়েছে সেচ দফতর এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানান, ২০১৫ সালের মধ্যে তিস্তা সেচ প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করতে বলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার মধ্যে কাজ শেষ করা না হলে বরাদ্দ মিলবে না। রাজ্যে বাম জমানায় প্রকল্পের কাজে নানা দুর্নীতি হয়েছে। কাজের অগ্রগতি সে ভাবে হয়নি। এখন বাকি কাজ শেষ করতে হাতে সময়ও কম। সে কারণে বাড়তি উদ্যোগ গ্রহণ করতেই হচ্ছে। তার উপর রয়েছে জমি সংক্রান্ত জটিলতা। অনেক জায়গায় জমি না মেলায় সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। তার মধ্যে উত্তর দিনাজপুর জেলায় ওই সমস্যা সব চেয়ে বেশি। সে কারণে আগামী ৯ ডিসেম্বর ইসলামপুরে বৈঠক ডাকা হয়েছে। জেলাশাসক এবং জনপ্রতিনিধিরা থাকবেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মিউটেশন ঝুলে থাকায় ক্ষতিপূরণ পাননি জমির মালিকেরা। সে সব মিটিয়ে দ্রুত কাজ করতে হবে। ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়িতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সে কারণে খেয়াল রাখতে হচ্ছে কাজের মানের দিকটিও। দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, তিস্তা সেচ প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হলে প্রায় ৯ লক্ষ হেক্টর জমি এই সেচ প্রকল্পের আওতায় আসবে। বর্তমানে গড়ে মাত্র ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রকল্পের জল দিতে পারছে কর্তৃপক্ষ। অথচ জমি সংক্রান্ত জটিলতায় অনেক ক্ষেত্রেই প্রকল্পের কাজ থমকে রয়েছে। কেবল উত্তর দিনাজপুর জেলাতেই জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ৮৭ টি ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। |