এ বার র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠল স্কুলের হস্টেলেও। অভিযোগ, সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রকে ডেকে প্রায় রাতভর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালিয়েছে দশম শ্রেণির ৫ ছাত্র। কখনও তিন জন মিলে ছাত্রটিকে ধরে রেখে দু’জনে টানা কাতুকুতু দিয়েছে। আবার কখনও চার জন ধরে রেখেছে এবং এক জন মারধর করেছে। অদ্ভুত সব প্রশ্ন করা হয়েছে। উত্তর দিতে না-পারায় জুটেছে আরও ‘শাস্তি’।
রবিবার রাতে জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ এলাকায় একটি বেসরকারি আশ্রমিক স্কুলে ওই ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকালে ওই ছাত্র হস্টেল ছেড়ে মেডিক্যাল কলেজ লাগোয়া সুশ্রুতনগরের বাড়িতে চলে যায়। তা নিয়ে তার বাড়ির লোকজনেরা সরব হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। তবে স্কুল-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পরে ছাত্রটির বাড়ির তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। স্কুল-কর্তৃপক্ষ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। অন্য তিন জনকে জেরা করছেন শিক্ষকেরা। তাদের অভিভাবকদের তলব করেছেন স্কুল-কর্তৃপক্ষ। স্কুলের এক জন কর্তা বলেন, “শৃঙ্খলার ব্যাপারে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সুনাম রয়েছে। কোনও রকম অন্যায়কে এখানে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না।”
অভিযুক্ত ৫ জন ছাত্রও ভেঙে পড়েছে। স্কুল চত্বরে দাঁড়িয়ে তারা প্রায় একই সুরে জানায়, ‘স্রেফ মজা করার জন্য’ তারা ওই ছাত্রটিকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। হাসিঠাট্টার মধ্যেই অনেকটা সময় কাটানো হয় বলে তারা দাবি করেছে। কিন্তু, ‘সিনিয়রদের’ মজা করার জন্য নিচু ক্লাসের ছাত্রকে ডেকে আনার প্রয়োজন পড়ল কেন? জবাবে এক ছাত্র জানায়, ঘটনাটা যে অন্য দিকে মোড় নিতে পারে সেটা তারা বুঝতে পারেনি। এক ছাত্রের কথায়, “মজা করতে গিয়ে যে র্যাগিংয়ের অভিযোগের মুখে পড়তে হতে পারে সেটা মাথায় ছিল না। যাই হোক, আমরা ভুল স্বীকার করছি। ভবিষ্যতে এমন কোনওদিন করব না। ওই ছাত্রের বাড়ির লোকজনদের কাছেও ক্ষমা চাইব। না হলে আমাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।”
অভিযুক্তেরা অনুতপ্ত হলেও ‘অত্যাচার’-এর কথা বলতে গেলেই কাঁপছে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রটি। তার বাবা বলেন, “রাত ১১ টা নাগাদ ওই পাঁচ ছাত্র আমার ছেলেকে প্রচণ্ড ভাবে র্যাগিং করেছে। তার মুখ চেপে ধরে রেখে হস্টেলের রুমে টানাহেঁচড়া করা হয়েছে। চুল ধরে টানাটানি করা হয়েছে। বুকে ঘুষি মারা হয়েছে। নানা ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। ছেলে এতটা ভয় পেয়ে গিয়েছে যে, ওই রাতে ঘুমোতে পারেনি।”
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গিয়েছে, র্যাগিংয়ের শিকার ছাত্রটি গত বছর সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। হস্টেলে থেকেই সে পড়াশোনা করে। মূল অভিযুক্তদের এক জনের বাড়ি শিলিগুড়ি শহরে। অপর জনের বাড়ি ফাঁসিদেওয়ার বিধাননগরে। ওই ঘটনার পর তারাও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
|