স্কুল, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকেরা তো বিভ্রান্ত বটেই। এ বার ভর্তির পদ্ধতি নিয়ে সংশয়ে স্কুলশিক্ষা দফতরও।
কেন্দ্রের শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে স্কুলে ছাত্র ভর্তি করা যাবে না। রাজ্য মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, লটারির মাধ্যমেও ছাত্র ভর্তি করতে পারবে না স্কুলগুলি। এ দিকে পরের শিক্ষাবর্ষে ক্লাস শুরু হবে ২ জানুয়ারি। এত অল্প সময়ের মধ্যে বিকল্প কোন পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া চালানো সম্ভব, সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না স্কুলশিক্ষা দফতর। তাই অন্তত ২০১২-র জন্য পুরনো নিয়ম অর্থাৎ লটারিই রেখে দেওয়ার পক্ষপাতী তারা।
ছাত্র ভর্তির বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। স্কুলশিক্ষা সচিব বিক্রম সেন, ওই দফতরের অন্যান্য আধিকারিক এবং বেশ কয়েকটি সরকারি স্কুলে প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছিলেন বৈঠকে। স্কুলশিক্ষা সচিব বিক্রম সেন পরে বলেন, “লটারি বাদে অন্য কোন পদ্ধতিতে ছাত্র ভর্তি করা যায়, মহাকরণ থেকে সেই ব্যাপারে প্রস্তাব চাওয়া হয়েছিল স্কুলশিক্ষা দফতরের কাছে। এ দিনের বৈঠকে ছাত্র ভর্তির বিকল্প যে-সব পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেগুলি লিখিত ভাবে মুখ্যসচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে।” বিভিন্ন বিকল্প পদ্ধতিরও যে খামতি রয়েছে, সচিব নিজেই তা স্বীকার করে বলেন, “কোনও পদ্ধতিই ত্রুটিমুক্ত নয়। দুর্বলতার দিকগুলিও জানানো হয়েছে।” তিনি জানান, নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে মাত্র দু’মাস বাকি। এখন ভর্তির পদ্ধতি বদলালে প্রশাসনিক সমস্যা হতে পারে বলে মুখ্যসচিবকে জানানো হয়েছে। বিক্রমবাবু বলেন, “এই অবস্থায় ২০১২-র জন্য পদ্ধতি অপরিবর্তিত রেখে তার পরের বছর থেকে নতুন পদ্ধতিতে ভর্তি করা যায় কি না, তা-ও বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে।” ছাত্র ভর্তির বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে কী কী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে মুখ্যসচিবের কাছে? বিক্রমবাবু জানান, রাশিবিজ্ঞানের নিয়ম মেনে ‘র্যান্ডম সিলেকশন’ বা অনির্দিষ্ট বাছাই পদ্ধতিতে ছাত্র ভর্তি করা যেতে পারে। অথবা কোনও স্কুল এক জন পড়ুয়ার বাড়ি থেকে কত দূরে, ওই পড়ুয়ার কোনও ভাই বা বোন স্কুলটিতে পড়ে কি না, বাবা-মায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদির ভিত্তিতে নম্বর দিয়ে ছাত্র ভর্তির তালিকা তৈরি করা যায়। কিংবা বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে ছাত্র ভর্তি করা যেতে পারে। স্কুলশিক্ষা সচিব বলেন, “এমন কয়েকটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।” পদ্ধতিগুলি বিশ্লেষণ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে সরকারি সূত্রের খবর।
রাশিবিজ্ঞানীদের মতে, বড় কোনও জনসংখ্যার চরিত্র বোঝার জন্য অনির্দিষ্ট বাছাই পদ্ধতি মেনে চলা হয়। কিন্তু ছাত্র বাছাইয়ে এই পদ্ধতিও আসলে এক ধরনের লটারি। স্কুলশিক্ষা সচিবও অবশ্য এটা স্বীকার করেন। শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “দেশের বেশ কিছু রাজ্যে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে, এমনকী আমেরিকার কিছু স্কুলেও লটারির মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি করা হয়। আসলে প্রবেশিকা পরীক্ষা ছাড়া ছাত্র বাছাইয়ের আর কোনও পদ্ধতিই ত্রুটিমুক্ত নয়।” |