যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যেই রাজ্যকে যতটা আর্থিক সহযোগিতা করা যায়, কেন্দ্রীয় সরকার তা করার চেষ্টা করবে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘আশ্বাস’ দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। সরকারি ও রাজনৈতিক সূত্রের খবর, রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের উপস্থিতিতে রাজভবনে মঙ্গলবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বৈঠকের নির্যাস এটাই।
এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এ দিন বৈঠক চলেছে রাজভবনে। তাঁদের কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে প্রণববাবু বা মমতা, কেউই প্রকাশ্যে সবিস্তার কিছু বলেননি। বৈঠক সেরে দিল্লি যাওয়ার আগে প্রণববাবু বলেন, “নিদিষ্ট কোনও আর্থিক সমস্যা নয়, রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়েই আলোচনা হয়েছে।” তবে প্রণববাবু তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, রাজ্যের আর্থিক সমস্যা সমাধানে তাঁর পক্ষে যতটুকু ‘করণীয়’, তা তিনি করবেন। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় দেশের অন্যান্য রাজ্যকে টপকে পশ্চিমবঙ্গে ‘বিশেষ আর্থিক সহযোগিতা’ করার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক সমস্যা আছে বলে ইতিমধ্যেই প্রণববাবু জানিয়েছিলেন। সাংবিধানিক চৌহদ্দি মেনেই এ দিনের বৈঠকেও তিনি রাজ্যকে কেন্দ্রের পক্ষে ‘যতটা সম্ভব আর্থিক সহযোগিতা’র আশ্বাস দিয়েছেন। রাতে দিল্লি পৌঁছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন প্রণব। মমতা রাজ্যের আর্থিক হাল নিয়ে যা জানিয়েছেন, সে কথাই তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে এসেছেন বলে সূত্রের খবর। যদিও এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কিছু বলতে চাননি। অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, এর পরেও কেন্দ্র ‘না-আঁচালে বিশ্বাস নেই’। কারণ, ৩৪ বছর ধরে রাজত্ব করে-যাওয়া বামফ্রন্ট সরকারের আর্থিক ‘দায় ও ঋণভার’ তাঁদের বইতে হচ্ছে বলে তিনি বারবার কেন্দ্রকে জানিয়েছেন। কিন্তু গত পাঁচ মাসে তাঁর আবেদনে কেন্দ্রের কাছ থেকে ‘উপযুক্ত’ সাড়া মেলেনি। তাঁদের বৈঠকের অব্যবহিত পরেই মমতা এ দিন যে ভাবে কেন্দ্রকে ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন, তা নিয়ে প্রণববাবু মন্তব্য করতে চাননি। প্রশ্নের জবাবে তিনি শুধু বলেন, “ওঁদের প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে শুনেছি।” |
রাজভবন থেকে বেরোনোর পথে। নিজস্ব চিত্র |
বৈঠকের পরে মমতা রাজভবনের ফটকে দাঁড়িয়ে বলেন, “এটা সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎকার। রাজ্যপাল আমাকে ও প্রণবদা’কে চা খেতে ডেকেছিলেন। রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে প্রণবদা’র সঙ্গে কথা হয়েছে।” পরে বৈঠকের ‘প্রকৃত বিষয়বস্তু’ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “দু’লক্ষ তিন হাজার কোটি টাকার দেনা করে গিয়েছে আগের সরকার। তারা এই দেনাটা না করলে তার দায়টা তো আমাদের উপরে বর্তাত না! সরকারি কর্মীদের বেতন দিতেই বিরাট টাকা চলে যাচ্ছে। ওদের পাপই আমাদের বহন করতে হচ্ছে! আমরা প্রাপ্যটাই চাইছি।” রাজ্যপালের উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বৈঠকে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র অবশ্য যাননি। কেন তিনি গেলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অমিতবাবু বলেন, “রাজ্যপাল যাঁদের ডেকেছেন, তাঁরাই সেখানে গিয়েছেন।”
অর্থ দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের বেহাল আর্থিক পরিস্থিতির কারণে ঋণের সুদ পরিশোধ করার বিষয়টি আপাতত স্থগিত রাখতে চায় রাজ্য। এই ব্যাপারে রাজভবনের বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে মুখ্যমন্ত্রী দাবি জানিয়েছেন বলে এক সরকারি মুখপাত্রের বক্তব্য। তিনি জানান, আগামী পাঁচ মাস যাতে রাজ্যকে ঋণের সুদ পরিশোধ করতে না-হয়, সেই দাবি জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের অর্থমন্ত্রী দিল্লি গিয়ে ওই একই দাবি জানিয়ে এসেছেন। |