‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে এ বার পদত্যাগ করলেন খোদ বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সভাপতি অসিত মাঝি। এর আগে বিষ্ণুপুর ব্লকেরই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত, উলিয়াড়া ও দ্বারিকা-গোঁসাইপুরের প্রধান, উপ-প্রধান-সহ সব সিপিএম সদস্য পদত্যাগ করেছেন। একটি পঞ্চায়েতে প্রশাসক নিয়োগও হয়ে গিয়েছে।
এই অবস্থায় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদত্যাগকে ঘিরে সিপিএম এবং তৃণমূলের মধ্যে দোষারোপ পাল্টা দোষারোপের পালা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসকের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন অসিতবাবু। মহকুমাশাসক সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “অসিতবাবু নিজের শারীরিক সমস্যার কথা জানিয়ে পদত্যাগ করেছেন। কোনও রকম প্ররোচনার বশবর্তী হয়ে ইস্তফা দেননি বলেও জানিয়েছেন। সরকারি নিয়োগ মেনে তাঁকে এক মাসের মধ্যে শুনানির জন্য ডাকা হবে।”
বিষ্ণুপুরের বিডিও সুদীপ্ত সাঁতরা বলেন, “এই পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সংখ্যা চার। দু’জন সদস্য আগেই পদত্যাগ করেছেন। এ বার সভাপতিও ইস্তফা দিলেন। ফলে পঞ্চায়েত সমিতির কাজে একটা অচলাবস্থা তৈরি হল। মহকুমাশাসক এ ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন।” প্রসঙ্গত, মাস দুয়েক আগে পঞ্চায়েতের সমিতির দুই সিপিএম সদস্য অপর্ণা রায় ও নার্গিতারা বেগমও ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন। এ ছাড়াও বিষ্ণুপুর ব্লকের বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতের (মড়ার, খড়িকাসুলি, রাধানগর) সিপিএম-সহ একাধিক বাম সদস্য পদত্যাগ করেছেন।
অসিতবাবুর সঙ্গে এ দিন ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “শরীর ভাল নেই। তা ছাড়া ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি। কোনও তরফ থেকেই আমার উপরে কেউ চাপ সৃষ্টি করেনি।” যদিও সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের দাবি, “অসিতবাবুকে অনেক দিন ধরেই কাজ করতে দেওয়া হচ্ছিল না। তৃণমূল আশ্রিত গুন্ডারা তাঁকে জেলা পার্টি অফিস এমনকী আমাদের স্থানীয় কার্যালয়ে যেতেও বারণ করে হুমকি দিচ্ছিল। ভয়ে তিনি পার্টি অফিসে আসা বন্ধ করেছেন। তৃণমূলের ভয়েই তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।” অমিয়বাবুর দাবি, ওই এলাকায় সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলিতে এ ভাবেই হুমকি দিচ্ছে তৃণমূল। যার জেরে বিধানসভা ভোটের পরে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি থেকে সিপিএম সদস্যদের পদত্যাগের কার্যত হিড়িক পড়েছে।
অমিয়বাবুর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা আবাসন মন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, “অসিতবাবু নিজে মহকুমাশাসককে লিখিত ভাবে এবং সংবাদমাধ্যমকেও জানিয়েছেন, শারীরিক অসুস্থতার জন্যই তিনি পদত্যাগ করেছেন। কারও প্রতি তাঁর অভিযোগ নেই। সেখানে অমিয়বাবু আমাদের দলের দোষ খুঁজছেন। মিথ্যা বিবৃতিও দিচ্ছেন। এটা ওঁর অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে।” |