ডাইন অপবাদ দিয়ে ফের জরিমানা আদায় করার অভিযোগ উঠল পুরুলিয়ায়। এ বার মানবাজারের এক মা ও ছেলে এর শিকার হয়েছেন। সোমবার বিকেলে তাঁরা মানবাজার থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ সুপার সুনীলকুমার চৌধুরী বলেন, “অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার পুলিশ ওই গ্রামে গিয়ে তদন্ত করে।”
মানবাজার থানার শাসনগোড়া গ্রামের বাসিন্দা অজিত কিস্কুর অভিযোগ, তাঁদের গ্রামের এক বাসিন্দা দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভুগে চলতি বছরের জুলাই মাসে মারা যান। তার পর থেকেই গ্রামের কয়েক জন বাসিন্দা রটাতে থাকেন, অজিত ও তাঁর মা দোলমনি কিস্কু ডাইন। তারাই ওই ব্যক্তিকে মেরে ফেলেছেন। বারবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও রটনাকারীরা থামেননি। পুলিশের কাছে অজিতের অভিযোগ, “কয়েক মাস আগে গ্রামের বাসিন্দা সিপিএম সদস্য আনন্দ কিস্কু, শ্যামাপদ কিস্কু, বিভূতি কিস্কু ও তারাপদ কিস্কুর নেতৃত্বে গ্রামে সালিশি সভা হয়। সেই সভা আমাদের ডাইন অপবাদ দিয়ে ফরমান দেয়, বোকারোয় এক জানগুরুর কাছে গিয়ে দোষ ছাড়াতে হবে। সে জন্য প্রায় ৯০০০ টাকা খরচ করেছি। কিন্তু তার পরেও ওদের অত্যাচার বন্ধ হয়নি।”
অজিতবাবুর মা দোলমনিদেবীর অভিযোগ, “গ্রামের ওই মাতব্বরদের নির্দেশ মতো গাড়ি ভাড়া করে অজিত তাঁদের নিয়ে বোকারোয় জানগুরুর কাছে দুর্গাপুজোর আগে গিয়েছিল। সমস্ত খরচ মেটাতে গিয়ে ঘরের দু’টি বলদ বিক্রি করতে হয়েছে। এর পরেও তারা আরও এক লক্ষ টাকা দাবি করেছে। সেই টাকা দেওয়া সম্ভব নয়, জানানোর পর থেকে আমাদের উপরে অত্যাচার আরও বেড়ে যায়।” তাঁদের অভিযোগ, রাতে মাঝে মধ্যে বাড়িতে ঢিল ছোঁড়া হয়। বাড়ির বাইরে গেলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কয়েক দিন আগে বাড়ির পোষা একটি ছাগল ও মোরগ চুরি হয়েছে। সালিশি সভার পর থেকে এই ধরণের উপদ্রব শুরু হয়েছে। অজিতবাবুর স্ত্রী গঙ্গামনি বলেন, “গ্রামের নলকূপ থেকে জল নেওয়া যাবেনা বলে ওরা হুমকি দিয়েছে। জল নিয়ে আসতে ভয় লাগে।”
খবর পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন অজিতবাবুর দাদা মোহন কিস্কু। তিনি বলেন, “ইন্দাসের ছাতমগিরিতে সামান্য জমিতে চাষাবাদ করি। মা ও ভাইয়ের এমন বিপদের খবর পেয়ে এখানে একমাস ধরে রয়েছি। এই বিপদের মধ্যে ওদের ছেড়ে ইন্দাসে ফিরতে পারছি না।” এই পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় রাঙামেটা গ্রামের বাসিন্দা খেত মজুর সমিতির জেলা কমিটির সদস্য সুধীর মুর্মু। তিনি বলেন, “আমি অজিতবাবুকে সঙ্গে নিয়ে থানায় অভিযোগ জানাই। আমার সন্দেহ গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ এই ধরণের অপবাদ ছড়িয়ে অজিতবাবুর পরিবারকে গ্রামছাড়া করতে চাইছে। পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি।”
অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি আনন্দ কিস্কু, শ্যামাপদ কিস্কুরা। তাঁদের দাবি, “আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। সালিশি সভা করে জরিমানা করার হয়নি। মৃত ব্যক্তি অজিতদের আত্মীয়। আমাদের সমাজের নিয়ম মেনে ওদের সে জন্য পুজো-যজ্ঞ করতে বলা হয়েছিল।” স্থানীয় ধানাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, “আনন্দ কিস্কু আমাদের দলের সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধে ডাইন অপবাদ গিয়ে সালিশি সভা বসিয়ে জরিমানা করার অভিযোগের বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।”
পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সুপার জানান, আজ বুধবার গ্রামের দু’পক্ষকে মীমাংসার জন্য মানবাজার থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের তদন্ত চলছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। |