দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন তাঁরা। কিন্তু প্রশাসন তাঁদের আবেদনে কর্ণপাতই করেনি বলে অভিযোগ। তাই বেআইনি ডিজেল অটোর দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বনগাঁ-বাগদা সড়কে বাস ও অটো চলাচল বন্ধ করে দিলেন মালিক ও শ্রমিকেরা। মঙ্গলবার সকালে এই ঘটনার জেরে চরম দুর্ভোগে পড়েন অফিস যাত্রী থেকে সকলেই। নাকাল হন ওই রাস্তায় যাতায়াতকারী কয়েক হাজার মানুষ। বনগাঁর মহকুমাশাসক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “ডিজেল চালিত অটো বেআইনি। সমস্যা মেটাতে শীঘ্রই বৈঠক ডাকা হবে।”
উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ মহকুমার বাগদা ব্লকের মানুষের বনগাঁ শহরে আসার বা বনগাঁ থেকে বাগদা যাওয়ার একমাত্র উপায় এই সড়ক। বাস ও অটো ছাড়া কোনও বিকল্প যানবাহন ব্যবস্থা নেই। এ দিন সে সবই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন অটো এবং বাসস্ট্যান্ডে বহু মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কাজে বের হয়ে যানবাহন না পেয়ে বহু মানুষকে ফের বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে। অনেকে অবশ্য মাট্যাডর, ট্রাকে করে গন্তব্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। সে জন্য অবশ্য তাঁদের অনেক বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে। এ দিন বাস-অটো বন্ধের ব্যাপারে বাস এবং অটো সংগঠনের দাবি, বনগাঁ-বাগদা সড়কে বৈধ অটো (এলপিজি) চলে প্রায় ২৫০টি। কিন্তু বেআইনি অটো (ডিজেল চালিত) চলে ৩০০-রও বেশি। আর ওই সড়কে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা প্রায় ১০০টি। কিন্তু দিনের পর দিন বেআইনি অটোর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাস ও বৈধ অটোর মালিকদের রুজিরুটি বন্ধ হওয়ার জোগাড়। |
বনগাঁ-বয়ড়া বাস সিন্ডিকেট লিমিটেডের সম্পাদক দেবদাস মণ্ডল বলেন, “প্রথমত বেহাল রাস্তার কারণে প্রতিদিনই গাড়ির যন্ত্রাংশের ক্ষতি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হচ্ছে। তা ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের ন্যূনতম ভাড়ায় নিয়ে যেতে হয়। এতকিছুর পরেও বেআইনি অটোর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের পক্ষে আর লোকসানে বাস চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার স্থানীয় কলমবাগান থেকে বেয়ারা এবং গাঙ্গুলিয়া সীমান্ত পর্যন্ত কয়েকটি ডিজেল চালিত অটো চলাচল শুরু হয়। মূলত এর বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ জানান বাস ও অটোর মালিকেরা। বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ও তৃণমূল নেতা সুব্রত পাল বলেন, “তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আটটি অটো চালু করা হয়। এ ব্যাপারে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তাপস দাশগুপ্তের অনুমতিও নেওয়া হয়েছে।” যদিও এ নিয়ে প্রশাসনের কোনও অনুমতি তাঁরা পেয়েছেন কিনা জানতে চাওয়া হলে সুব্রতবাবু কিছু বলেননি। অন্যদিকে, তাপসবাবু বলেন, “এই অটো চলাচলের ব্যাপারে আমাদের কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি।”
ডিজেল চালিত অটো বেআইনি জেনেও কেন তা চালানো হল?
এই প্রশ্নের উত্তর সুব্রতবাবুর যুক্তি, “এর আগে সিপিএমের আমলেও বহু ডিজেল অটো অনুমতি পেয়েছে। সেগুলি এখনও চলছে। তখন কেন আন্দোলন করা হয়নি?” আগের সরকারে কোনও বেআইনি কাজ হলে, নতুন সরকার আসার পরেও তা বজায় থাকাটা কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে জানতে চাওয়া হলেও সুব্রতবাবু কিছু বলতে চাননি। |
তবে সোমবার ওই অটো চলাচলের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে বনগাঁ থানা সূত্রে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে থানায় বৈঠক করেন আই সি অনিল রায়। সেখানে ওই ডিজেলচালিত অটোগুলির চলাচল আপাতত বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুব্রতবাবুর কথায়, “আইসি-র অনুরোধেই আমরা ওই অটো বন্ধ রাখছি। কিন্তু সেই সঙ্গে আমাদের দাবি সমস্ত বেআইনি অটোর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে।” অনিলবাবু বলেন, “বনগাঁয় বিভিন্ন রুটে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। কিছু গাড়ির পারমিট থাকা সত্ত্বেও মালিকেরা তা চালাতে পারছেন না। এ সব বিষয়ে মহকুমাশাসকের দফতের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক হবে।”
তৃণমূলের একাংশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার যে অটোগুলি চালানো হয় সেগুলিতে দলের পতাকা লাগানো ছিল। এ ব্যাপারে তাপসবাবু বলেন, “খবর পেয়েই আমরা ওই সব অটো থেকে দলীয় পতাকা খুলে ফেলার নিদের্শ দিয়েছি। তা ছাড়া বাসরুটকে সমস্যায় না ফেলেই অটো রুট চালু করতে হবে।” জেলা আঞ্চলির পরিবহণ সংস্থার সদস্য গোপাল শেঠ বলেন, “জানতে পেরেছি ওই অটোগুলি বেআইনি। পরবহণ দফতর থেকে ওই সব অটো চলাচলের কোনও অনুমতিও দেওয়া হয়নি।” বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “পুলিশকে ওই সব বেআইনি অটোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”
|
ছবি তুলেছেন পার্থসারথি নন্দী। |