ভরদুপুরে খড়দহের পাতুলিয়ায় ব্যস্ত রাস্তায় পরপর দু’বার গুলি।
আওয়াজ শুনেছিলেন পথচারীরা। হতভম্ব ভাব কাটতে সবাই দেখেন, মাঝরাস্তায় লুটিয়ে পড়েছেন মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি। রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীর। আর তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে এক জন চিৎকার করছেন ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে।
মঙ্গলবার ওই ঘটনার পরে স্থানীয় লোকজনই গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা জানান, মাথায় গুলি লাগার ফলে মৃত্যু হয়েছে ওই প্রৌঢ়ের। পরে পুলিশ জানায়, নিহতের নাম আব্দুল আহাদ গনি (৫১)। তিনি কাশ্মীরের বাসিন্দা। বিয়ে করেছিলেন টিটাগড়ের জি সি রোডের শামিমা খাতুনকে। শামিমা টিটাগড়েই থাকেন। গত বৃহস্পতিবার স্ত্রীর কাছে এসেছিলেন আব্দুল। এ দিন সকালে শ্যালক সাদ্দাম হোসেন এবং সাদ্দামের এক বন্ধুকে নিয়ে স্কুটারে চেপে বেরিয়েছিলেন তিনি। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ পরিচিত এক জনের বাড়ি যাওয়ার পথেই হামলা হয় আব্দুলের উপরে।
আব্দুল গনি। |
কে গুলি করল আব্দুলকে?
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ সন্দেহের তালিকায় রেখেছে আব্দুলের শ্যালক সাদ্দাম এবং তাঁর বন্ধু তাজ মহম্মদকেও। সাদ্দামই ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার করেছিলেন। তাঁদের দু’জনকেই রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সাদ্দামের বক্তব্য এবং পথচারীদের বয়ানের মধ্যে বিস্তর অসঙ্গতি থেকে এই খুনে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সাদ্দাম বলেন, আচমকা তাঁদের স্কুটারটি বন্ধ হয়ে যায়। কিছুটা ঝুঁকে সেটি ‘স্টার্ট’ করার চেষ্টা করছিলেন আব্দুল। তখনই দুই দুষ্কৃতী তাঁর মাথায় গুলি চালিয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু ঘটনার সময় যাঁরা ওই রাস্তায় ছিলেন, তাঁদের বক্তব্য শোনার পরে সাদ্দামের কথায় বেশ কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তাঁরা গুলির শব্দ শুনেছেন। দ্রুত শব্দের উৎসস্থলেও পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা কোনও মোটরসাইকেলই দেখতে পাননি। সাদ্দাম ও তাজ ঘটনার সময় আব্দুলের সঙ্গে থাকলেও ঘটনার ঠিক পরেই তাজ বেপাত্তা হয়ে যান। পরে পুলিশ স্থানীয় মাঠপাড়ায় তাঁকে ধরে। সাদ্দাম ও তাজকে আলাদা ভাবে জেরা করা হয়। তাতে অসঙ্গতির মাত্রা বেড়েই গিয়েছে।
তার পরেই সাদ্দামকে চেপে ধরেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানায়, জেরার জবাবে সাদ্দাম তখন বলেছেন, তাজকে খুন করার জন্যই ‘সুপারি কিলার’ ঠিক করেছিলেন তিনি। কিন্তু আততায়ীরা ‘নিশানা’ ভুল করে তাঁর জামাইবাবুকে গুলি করেছে।
কিন্তু কেন তাজকে খুনের ছক কষলেন সাদ্দাম? |
সাদ্দামের সাফাই, প্রণয়ঘটিত কারণেই তাজের সঙ্গে তাঁর বিরোধ।
যদিও দু’জনকে জেরার পরে তদন্তকারীরা মনে করছেন, কোনও ‘সুপারি কিলার’ নয়, সাদ্দাম ও তাজ ছক কষেই আব্দুলকে খুন করেছেন। খুনের পরে আগ্নেয়াস্ত্রটি লুকিয়ে ফেলার জন্যই গা-ঢাকা দিয়েছিলেন তাজ। পুলিশকে বিভ্রান্ত করতেই স্কুটার খারাপ হওয়া বা মোটরবাইকে আসা আততায়ীর গল্প ফেঁদেছিলেন সাদ্দাম ও তাজ। কিন্তু সেটা ধোপে না-টেকায় তাজকে খুনের জন্য সুপারি কিলার নিয়োগের গল্প বলেন সাদ্দাম। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেন, “প্রত্যেকের বয়ানে অসঙ্গতি আছে। সাদ্দাম-সহ ধৃতদের জেরা করে কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। জেরা চলছে। এই খুনের পিছনে ব্যক্তিগত আক্রোশ ও পারিবারিক বিরোধের বিষয়টিও যাচাই করা হচ্ছে।”
পুলিশ জানায়, তিনটে বিয়ের পরে প্রায় মেয়ের বয়সি শামিমা (সাদ্দামের বোন)-কে বিয়ে করেছিলেন কাশ্মীরের একটি হোটেলের কর্মী এবং শাল বিক্রেতা আব্দুল। এ নিয়ে পারিবারিক অশান্তিও ছিল। শামিমা বলেন, “আমার ভাইকে অকারণে ফাঁসানো হচ্ছে। ও খুনের ঘটনায় যুক্ত নয়।” |