দুই কিপার-অধিনায়কের যন্ত্রণার আবহেই চনমনে ইস্টবেঙ্গল
পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দেখা যায়, পৃথিবীর যত রাজ্যের মায়া ওই মুখে বাসা বেঁধেছে। বিষাদও।
ইস্টবেঙ্গল প্র্যাক্টিস চত্বর এখন আনন্দ-হাট। হইচই। চিৎকার। শেষ দুই ম্যাচের ছয় পয়েন্টের সূর্যোদয়ের রং লাগা সেখানে। অন্য আলো।
কিছুই ওই মুখকে ছুঁতে পারছে না। কিচ্ছু না। সেখানে অন্ধকার।
ইনি অভ্র মণ্ডল। ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক। আই লিগে দলের তিন গোলকিপারের মধ্যে নাম নথিবদ্ধই হয়নি তাঁর।
যন্ত্রণার দুই নম্বর মুখও অন্য এক বাঙালি গোলকিপারের। তিনিও অধিনায়ক।
সোদপুরের নাটাগড় বিধানপল্লী। পুকুর, গাছ ঘেরা বাড়িতে বসে তাঁর গলায় মাখামাখি বেদনা, যন্ত্রণা। “বুঝতে পারছি না, বুধবার খেলাটা দেখতে যাব কি না। মনে হয়, যাওয়া হবে না। নিজের শহরে খেলতে পারছি না, এর চেয়ে যন্ত্রণা কী হতে পারে?”
ইনি সুব্রত পাল। পুণে এফসি অধিনায়ক। চিকিৎসা বিভ্রাটের শিকার হয়ে, দেরিতে হাঁটু অস্ত্রোপচার করে এখন মাঠের বাইরে।
অসংখ্য লড়াই, উত্থান, পতনের হাত ধরে হাঁটা দু’জনেরই। দুই গোলকিপার-অধিনায়কের যন্ত্রণার মিনারে দাঁড়িয়ে আজ ইস্টবেঙ্গল এবং পুণে এফসি মুখোমুখি। দুই ক্লাবেই নেতৃত্বের মুকুট পড়ে আছে, রাজা নেই।
লেক টাউনের গ্রীণ পার্কের অভ্র বুঝে পাচ্ছেন না, কেন তিনি প্রথম তিন জনের মধ্যেও নেই। “আমার কাউকে কিছু বলার নেই। ভিয়েতনামে ক’দিন আগে খেলেছিলাম। ক্লাব সচিব আমায় বলেছিলেন, তুই সবচেয়ে ভাল খেলেছিস। এটাই আমার তৃপ্তি।”
অধিনায়ক ছাড়াই যুদ্ধ: সোদপুরের বাড়িতে বন্দি পুণে অধিনায়ক সুব্রত।
ইস্টবেঙ্গল অধিনায়কের জন্য পুণে অধিনায়কের কষ্ট তাঁর প্রতিটি কথায় বেরিয়ে আসছে। চোখের সামনে ভেসে আসছে সোদপুর ক্লাবের মাঠ, কোচ সমীর চট্টোপাধ্যায়, ট্রেনিং। সোদপুরে সমীরবাবুর কাছেই দু’জনের কিপিংয়ে হাতেখড়ি। “আমাদের একই কোচ” বলছিলেন সুব্রত।
আই লিগে ইতিমধ্যেই ছিয়াশি গোল হয়ে যাওয়ায় গোলকিপাররা স্বস্তিতে নেই। একমাত্র ডেম্পোর শুভাশিস রায়চৌধুরী একটাও গোল হজম করেননি প্রথম চার ম্যাচে। ইস্টবেঙ্গলে তারুণ্যের বাজনা যে ভাবে বাজছে, তাতে সন্দীপ নন্দীর মতো গোলকিপারও বসে। এক নম্বরে গুরপ্রীত সিংহ। অন্য দুই তরুণ জয়ন্ত এবং দেবজিৎও নজর টানছেন। দলে ঢুকব ঢুকব। এই পরিস্থিতিতে অভ্র কী করবেন? কথা শুনে মনে হচ্ছে, লিয়েনে অন্য ক্লাবে যাওয়ার কথা মাথায় তাঁর। ইস্টবেঙ্গলে তাঁর অনেক সতীর্থও বলছেন, লিয়েনে অন্য দলে গেলে অভ্রর সেখানে জায়গা বাঁধা।
দুই কিপারের যাবতীয় দুঃখে প্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়ে দুই প্রাক্তন কিপার। অভ্রর ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, সুব্রতর দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। “অভ্রর লিয়েনে অন্য দলে চলে যাওয়া উচিত। সারা বছর বসে থেকে কী করবে?” বলেই ফেললেন ভাস্কর। ইস্টবেঙ্গলে তিন কিপারের মধ্যেও অভ্রকে না দেখে ভাস্কর অবাক।
কবে ফিরতে পারবেন দেশের এক নম্বর কিপার? কাকতালীয়ই হবে, ফেডারেশন কাপে যুবভারতীতে এই ইস্টবেঙ্গল-পুণে এফসি ম্যাচেই চোট পেয়ে ছিটকে গেছিলেন সুব্রত। বললেন, “তিন সপ্তাহের মধ্যে জিম শুরু করব।” দেবাশিসের মুখে আশা, “মাঠে ফিরতে ফিরতে জানুয়ারির শেষ হয়ে যাবে।”
দুই প্রাণবন্ত কিপারের দুঃখ ভুলে দুটো দলের খবর জানতে আগ্রহীদের জন্য কিছু তথ্য এখানেই গুঁজে দিই।
ইস্টবেঙ্গল কোচ ট্রেভর মর্গ্যানের মুখে আবার হাজির সেই পুরনো হাসি, রসিকতা। মোটামুটি এক দলই রাখছেন। মানে আগে পেন, পরে গাও। শুধু হরমনজিৎ খাবড়ার বদলে মাঝমাঠে সুশান্ত ম্যাথু। প্রথম দলে এক জন বঙ্গসন্তানও নেই।
ইস্টবেঙ্গল
অধিনায়ক অভ্র।
পুণে এফসি কোচ ডেরিক পেরিরার কপালে অনেক বেশি ভাঁজ। চিন্তা, আগের ম্যাচে পাঁচ গোলের ধাক্কা সামলানো যায় কী ভাবে? নাইজিরিয়ান স্টপার চিকা ওয়ালি দলে ফিরলেও গিনি-র মিডফিল্ডার মন্দজু কেইটা নেই। দলটায় সমীহ জাগানো নাম বলতে নতুন প্রজন্মের সেরা স্ট্রাইকার জেজে, আই লিগের সবচেয়ে অভিজ্ঞ মুখ ভেঙ্কটেশ, জাপানি নাম বদলে নীলকণ্ঠ নরেন্দ্র খামভোলজা করে ফেলা আরাতা ইজুমি। পুণের ফিজিও শ্বেতা মানেরিকরকে বিয়ে করে আরাতা এখন চান ভারতীয় হতে।
নিশ্চিত, অভ্রর জন্য আজ অন্তত আক্ষেপ করতে হবে না মর্গ্যানকে। পুণের বিষদাঁতটাই তো সোদপুরে।
সুব্রতর জন্যও কি ডেরিককে আক্ষেপ করতে হবে না? নিশ্চিত নই।
ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স ভারতে আসার দিন সুব্রতর বদলে নেমে দুর্দান্ত খেলেছিলেন পুণের মালয়ালি কিপার শাহিনলাল মেলোলি। সে দিন চাপ ছিল না। এ বার আই লিগ শুরু হতেই তরুণ শাহিনলাল বুঝছেন চাপ কারে কয়। ফল, চার ম্যাচে আট গোল।
শাহিনলাল এখনও অভ্র মণ্ডল-ই হননি। সুব্রত পাল পর্যন্ত পৌঁছতে বহু লম্বা রাস্তা।
মর্গ্যান সব বুঝেই প্রাণখোলা হাসছেন।
ছবি: উৎপল সরকার
বুধবারে আই লিগ
ইস্টবেঙ্গল: পুণে এফসি (যুবভারতী, ৬-৩০),
পৈলান অ্যারোজ: স্পোটিং ক্লুব (মারগাও)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.