আলিকে হারানো ফ্রেজিয়ার ক্যানসারের কাছে নক আউট
হম্মদ আলিও তাঁর কাছে হার মেনেছিলেন। কিন্তু দূরারোগ্য লিভার ক্যানসারের কাছে ‘নক আউট’ জো ফ্রেজিয়ার। দু’বারের বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন, কিংবদন্তি বক্সার ফ্রেজিয়ার মারা গেলেন। বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। গত রাতে তাঁর পরিবারের সূত্র থেকে দুঃসংবাদের সত্যতা স্বীকার করা হয়। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে তাঁর ক্যানসার ধরা পড়ে। জীবনের শেষ ক’টি দিন বাড়িতেই রাখা হয়েছিল ফ্রেজিয়ারকে।
বক্সিং দুনিয়ায় ফ্রেজিয়ার বিখ্যাত ছিলেন ‘স্মোকিং জো’ নামে। কুড়ি বছরের হেভিওয়েট বক্সিং জীবনে বেশির ভাগটাই বর্ণময়। পেশাদার বক্সিং ইতিহাসে অবিস্মরণীয় অধ্যায় মহম্মদ আলি বনাম জো ফ্রেজিয়ার হেভিওয়েট লড়াই। চার দশক পুরনো আলি-ফ্রেজিয়ার তিন ম্যাচের সেই সিরিজে আজও মহাকাব্যিক আমেজ খুঁজে পান বিশেষজ্ঞেরা। ম্যানিলার ম্যাচ তো আক্ষরিক হয়ে উঠেছিল ‘রোমহর্ষক’। অপেশাদার বক্সিং জীবনেও তো জো-আলির আকচাআকচি! মহম্মদ আলি ৬০ রোম অলিম্পিকে সোনা জিতে থাকেন তো, চার বছর পরেই টোকিও অলিম্পিকে সেই সোনার পদক উঠেছিল জো ফ্রেজিয়ারের গলায়। বলতে কী, অলিম্পিক সোনা জেতার পরেই ফ্রেজিয়ারের নামডাক বাড়ে।
মহম্মদ আলি, জর্জ ফোরম্যান, জেরি কোয়ারি, জো বাগনার, অস্কার বানাভেনা...। ফ্রেজিয়ারের মুষ্ঠির শক্তিতে ইন্দ্রপতন হয়েছে বারবার। তাঁর জীবনের সেরা সময়টা, বিগত শতাব্দীর সত্তরের দশক। অবিশ্বাস্য দক্ষতায় একে-একে ২৭ জনকে নক আউট করেছেন। হেভিওয়েটে মোট লড়াইয়ের রেকর্ড? ৩২টি জয়। মাত্র চারটি হার। চারটিই হেরেছেন অন্য কিংবদন্তি বক্সারদের কাছে। আলির কাছে দু’বার। দু’বার হারিয়েছেন ফোরম্যান।
ছবিতে প্রবীণ বয়সে মুখোমুখি হতেও সেই রিংয়ের মেজাজ। জো ফ্রেজিয়ার ও মহম্মদ আলি।
ফ্রেজিয়ারের অমর কীর্তি মহম্মদ আলিকে ধরাশায়ী করা। ’৭১-এ ম্যাডিসন স্কোয়ার গ্রাউন্ডে অভূতপূর্ব লড়াই জিতে চমকে দেন দুনিয়াকে। ১৫ রাউন্ডের সেই ম্যাচকে বলা হয় ‘শতাব্দীর কঠিনতম যুদ্ধ’। সে দিন তর্কাতীত ভাবে বিচারকেরা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে ফ্রেজিয়ারের মাথায় বিজয়ীর মুকুট পরিয়ে দিয়েছিলেন। আর টেলিভিশনের সৌজন্যে বিশ্বের প্রায় তিরিশ লক্ষ মানুষ সেই অবিস্মরণীয় লড়াই প্রত্যক্ষ করেন।
আরও দু’বার রিংয়ে আলির সঙ্গে দেখা হয়েছিল ফ্রেজিয়ারের। ’৭৪-এ ওই ম্যাডিসন স্কোয়ারেই। আলি সেখানে পয়েন্টে জেতেন। তার এক বছর পরে ম্যানিলাতেও মারকাটারি বক্সিংয়ের পরে হেরে যান ফ্রেজিয়ার। কিন্ত এতটাই রক্তক্ষয়ী ছিল সেই লড়াই যে, রেফারিকে ম্যাচ বন্ধ করে দিতে হয়। ১-৩ পয়েন্টে হারলেও দীর্ঘদিন যুযুধান দুই বক্সারকে নিয়ে উত্তেজনা ছিল। আলির বারবার করা বিদ্রূপে অতিষ্ঠ হয়ে এক সময় ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন ফ্রেজিয়ার। জীবনের শেষ পর্বে এসে তিনি অবশ্য সেই উষ্মাকে জয় করে জানিয়েছিলেন, আলিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
নিজেকে শান্ত রাখতেই হয়তো সম্প্রতি ফ্রেজিয়ার সঙ্গীতের দুনিয়ায় বুঁদ থাকতেন। ‘নক-আউট’ নামে একটি গ্রুপের সঙ্গে মঞ্চে গানও গাইছিলেন ইদানীং।
তখন কোথায় তাঁর যুদ্ধংদেহী রূপ?
কে বলবে, ফোরম্যানের কাছে খেতাব হারানোর আগে টানা ২৯টি জয় দিয়ে তাঁর কেরিয়ার শুরু! কে বলবে, রিং-এ অক্লান্ত যোদ্ধার নিষ্ঠুরতম মেজাজ দর্শকদের উত্তেজনায় পাগল করে তুলত, আর তাঁর বাঁ-হাতের এক-একটা অমর হুক অস্থির করে দিত বিখ্যাত প্রতিপক্ষদের।
কে বলবে এই সে দিন যিনি ব্যান্ড গ্রুপে গান গেয়ে উঠতেন, তিনিই এক সময় বলতেন, “প্রচণ্ড ভালবাসি মানুষকে মারতে। এমন মার যাতে উল্টো দিকের লোকটার হাঁটু থরথর করে কাঁপতে থাকে।”
ফ্রেজিয়ারের শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক জানার পরে চিরশত্রু আলি তাঁকে কুর্নিশ জানিয়ে বলেছিলেন, “জো-র দুঃসংবাদটা বিশ্বাস হচ্ছে না। মেনে নেওয়াটা তো আরওই কঠিন। জো এক জন যোদ্ধা। এক জন চ্যাম্পিয়ন। প্রার্থনা করি ও এই লড়াইটাও জিতুক।” কিন্তু জীবন-লড়াই ‘স্মোকিং জো’ হেরে গিয়েছেন জানার পরে আলি বলছেন, “দুনিয়া হারাল এক মহান চ্যাম্পিয়নকে। চিরকাল ওঁকে শ্রদ্ধা করব।”
ক্রীড়াক্ষেত্রে অমর প্রতিদ্বন্দ্বিতা
গল্ফে: টাইগার উডস-ফিল মিকেলসন
অ্যাথলেটিক্সে: সেবাস্টিয়ান কো-স্টিভ ওভেট
টেনিসে: বিয়র্ন বর্গ-জন ম্যাকেনরো ও মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা-ক্রিস এভার্ট
ফমুর্লা ওয়ান-এ: আয়ার্টন সেনা-অ্যালায়েন প্রস্ট
দাবায়: ফিশার-স্প্যাসকি, কাসপারভ-করপোভ




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.