অনেক সংস্থাই জমি নিয়ে ফেলে রেখেছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে রাজ্য কোনও আইনি ব্যবস্থা নেয়নি। মঙ্গলবার হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির সময় এই যুক্তি দেখিয়ে টাটা মোটরস-এর অভিযোগ, সিঙ্গুরের ক্ষেত্রে পৃথক আইন করে রাজ্য টাটাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে।
এ দিন টাটা মোটরস-এর দায়ের করা আপিল মামলার শুনানি শুরু হয় বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ ও বিচারপতি মৃণালকান্তি চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চে। সওয়ালের সময় বিভিন্ন সংস্থার জমি ফেলে রাখার প্রসঙ্গ তুলে টাটাদের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল বলেন, তা সত্ত্বেও এদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ সিঙ্গুরের ক্ষেত্রে আলাদা আইন নিয়ে এসে টাটা মোটরস-কে লিজে দেওয়া জমির দখল নিয়ে রাজ্য সরকার বৈষম্যের পরিচয় দিয়েছে। জমি নিয়ে ফেলে রেখেছে, এমন কয়েকটি শিল্প সংস্থার নামের তালিকাও তিনি নিজের বক্তব্যের সমর্থনে ডিভিশন বেঞ্চের কাছে পেশ করেন।
কী ভাবে রাজ্য টাটা মোটরসের প্রতি ‘বৈষম্যমূলক’ আচরণ করেছে, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সমরাদিত্যবাবু বলেন, গাড়ি কারখানার কাজ ৯৫% শেষ করেও ‘সিঙ্গুর ছেড়ে টাটারা চলে গিয়েছে’, এই অজুহাতে রাজ্য জমির দখল নিয়েছে। যা অসাংবিধানিক। তিনি এ-ও জানান, সিঙ্গুর আইনে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা ছিল না। তাই হাইকোর্ট ওই আইনে কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণ আইনের ২৩ ও ২৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী কিছু নির্দেশিকা যুক্ত করার কথা বলেছে। কিন্তু আদালত কোনও আইনের উপর কলম চালাতে পারে না বলে সমরাদিত্যবাবু দাবি করেন। তাঁর যুক্তি, কোনও আইন বৈধ না অবৈধ, আদালত কেবল তার বিচার করতে পারে। তাঁর মক্কেলও সিঙ্গুর আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে বিচার চেয়েছে।
টাটা মোটরস-এর পক্ষ থেকে এ দিন ডিভিশন বেঞ্চের কাছে বিভিন্ন সংস্থার নাম, কার কাছে কত জমি প্রকল্প গড়ার জন্য পড়ে রয়েছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। শুনানির শেষে আদালতের বাইরে টাটা মোটরস-এর অন্য এক আইনজীবী সিদ্ধার্থ মিত্র জানান, এমন বেশ কয়েকটি সংস্থা রয়েছে, যারা বছরের পর বছর জমি নিয়ে ফেলে রেখে দিয়েছে। কেউ সিঙ্গুরে টাটা মোটরসকে দেওয়া জমির থেকেও বেশি জমি নিয়ে রেখেছে। অনেকে জমির পাঁচিল দিয়ে ঘেরারও প্রয়োজন মনে করেনি। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা রাজ্য সরকার নেয়নি। কিন্তু টাটা মোটরস-কে উচ্ছেদ করতে আলাদা করে সিঙ্গুর আইন আনা হয়েছে। সিদ্ধার্থবাবুর বক্তব্য, এই বৈষম্য নিয়েই ডিভিশন বেঞ্চের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে।
এ দিনই মূল মামলার শুনানির সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়া হয় সিঙ্গুরের ২৮টি অনুসারি শিল্প সংস্থাকেও। তারা এই মামলায় নিজেদের অন্তর্ভুক্তি চেয়ে ডিভিশন বেঞ্চের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। সরকার পক্ষের আইনজীবী অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন জানিয়েছেন, ডিভিশন বেঞ্চে এখন মূল মামলার শুনানি চলবে। এই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সিঙ্গুরের জমি বণ্টন প্রক্রিয়ার উপর আদালতের স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। |