কোনও কোনও কাজে কোনও ছুটির অবকাশ থাকে না। অহরহ, নিত্যদিন সেই কর্মধারা চলিতে থাকে। অন্তত, চলিবার কথা। পরিভাষায়, অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বলিতে যাহা বুঝায়, ইহাও সেই গোত্রে পড়ে। যেমন, হাসপাতালের রক্তের ভাণ্ডার। ব্লাড ব্যাঙ্ক। অথচ, কলিকাতার একটি হাসপাতালে দেখা গিয়াছে, রবিবার এবং অন্য বিবিধ ছুটির দিন সেই ব্যাঙ্ক বন্ধ। অথচ, পরিষেবা গ্রহণ করিবার লোক কম, এমন বলা চলিবে না। বরং, অজস্র বলিলেই সত্য হয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগের বক্তব্য, পরিষেবা দিবার লোকের নিদারুণ অভাব। সেই জন্যই এমন বন্দোবস্ত। ছুটির দিন বিভিন্ন স্থানে রক্তদান শিবিরে ছুটিতে হয়। কারণ, রক্ত সংগ্রহের কাজটিও অতীব তাৎপর্যপূর্ণ। সুতরাং, সেই কাজটি সামলাইতে হইলে হাসপাতালে পরিষেবা প্রদান অসম্ভব। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা অবশ্য এই যুক্তি মানিতে নারাজ। তাঁহারা বলিতেছেন, অন্য কিছু হাসপাতালে তো আরও স্বল্প সংখ্যক লোকবল লইয়া কাজ চলিতেছে। তাহা হইলে এই হাসপাতালেও বা করা যাইবে না কেন? দুই তরফের যুক্তিই গভীরতর বিবেচনা দাবি করে। এক পক্ষ বলিতেছে, কাজ অনেক, কিন্তু করিবার ন্যায় উপযুক্ত সংখ্যায় কর্মী নাই। অন্য পক্ষ উদাহরণ দিতেছেন, অমুক হাসপাতালে হইলে তমুক হাসপাতালেই বা করা যাইবে না কেন? দুই তরফের বক্তব্য হইতে একটি কথা স্পষ্ট। পরিকাঠামোর অভাবটি অনস্বীকার্য।
যে হাসপাতালে স্বল্প সংখ্যক লোকবলেই কাজ চলিতেছে, সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের উদ্যম প্রশংসনীয়। প্রশ্ন হইল, কাজ চলিতেছে বলিয়াই কি সেই ধাঁচাটিকেই অনুকরণীয় বলিয়া স্বীকার করিতে হইবে? কর্মিগণের কর্মমনস্কতা অনুকরণের যোগ্য সন্দেহ নাই, কিন্তু প্রক্রিয়াটি আদর্শ নহে। যে উপায়ে ওই কর্মীরা কাজ করিতেছেন, তাহা উদ্ভাবনী শক্তির নিদর্শনও বটে। তাঁহারা প্রয়োজনে অন্য আধিকারিকদেরও কাজে লাগাইতেছেন। এই বিষয়টিই শিক্ষণীয়। যে হাসপাতাল লোকাভাবের যুক্তি দিয়া রক্তের ভাঁড়ারে তালা লাগাইতেছে, তাহার কর্মীদের এই বিষয়টিই শিখিতে হইবে। কারণ, চিকিৎসার ন্যায় পরিষেবা অন্তিম বিচারে একটি বিশেষ মনোভঙ্গিও বটে। সেই মনোভঙ্গি যাহা সমস্ত বাধাবিপত্তির ঊর্ধ্বে কর্মধারাকে বজায় রাখিতে চাহে। সুতরাং, লোক নাই বলিয়া ব্লাড ব্যাঙ্ক-এর ঝাঁপ বন্ধ থাকিবে, সেই ব্যাপারটি চলিতে পারে না। লোক যদি না-ই থাকে, তাহা হইলে কী রূপে প্রয়োজনীয় লোকের বন্দোবস্ত করা যায়, তাহা ভাবিতে হইবে। সম্ভাব্য সমস্ত পথ খতাইয়া দেখিতে হইবে। এই বক্তব্যটি পেশের অর্থ তাঁহাদের দায়িত্ববোধ লইয়া প্রশ্ন তোলা নহে। বরং, সেই দায়িত্ববোধ কী রূপে সমান্তরাল একটি পথে অগ্রসর হইতে পারে, তাহা ভাবিয়া দেখা জরুরি। একই সঙ্গে প্রশাসনও পরিকাঠামোর প্রতি অবিলম্বে নজর দিক। কাজ চালানো গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক ভাবে কাজটি চালানোও কম গুরুত্বপূর্ণ নহে। যেন তেন প্রকারেণ কাজ চালাইয়া নিছকই কাজ বন্ধ নাই বলিয়া উদ্বাহু হইবার যুক্তি নাই। কাজের গুণমান বজায় রাখিতে হইলে পরিকাঠামোকে উন্নত করিতে হইবে। অবিলম্বে। |