সম্পাদকীয় ১...
তুরস্ক বৈঠকের পর
ফগান সমস্যার সমাধানে তুরস্কে গত সপ্তাহে যে-আঞ্চলিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হইয়া গেল, তাহাকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ আখ্যা দেওয়া যায়। ইহা ছিল তুরস্কের মধ্যস্থতায় আঞ্চলিক দেশগুলির দ্বিতীয় বৈঠক। প্রথমটিতে পাকিস্তানের তীব্র আপত্তির কারণে ভারত আমন্ত্রিত হয় নাই। কিন্তু এ বার ইসলামাবাদ আপত্তি করে নাই। এ জন্য সে-দেশের সরকারকে যে পাক সেনা-কর্তৃপক্ষের আগাম অনুমোদন অর্জন করিতে হইয়াছে, তাহাতে সন্দেহ নাই। সেই দিক দিয়া দেখিলেও ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতির অপ্রত্যক্ষ ইঙ্গিত পাওয়া যাইতেছে। আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক, পরিকাঠামো ও পরিষেবাগত উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ভারতের অংশগ্রহণ সে-দেশের সরকার ও জনসাধারণের প্রশংসা কুড়াইয়াছে। কিন্তু পাকিস্তান কোনও ভাবেই ভারতকে আফগানিস্তানে চলাফেরা করিতে দিতে রাজি নয়। আফগানিস্তানকে সে নিজের খিড়কির উঠান কিংবা খাস তালুক বলিয়াই গণ্য করে এবং অন্য কোনও দেশের, বিশেষত ভারতের যে-কোনও ভূমিকাকেই বাহিরের হস্তক্ষেপ বলিয়া মনে করে। তবু যে তুরস্কের বৈঠকে ভারতকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, ইহা ভারতীয় কূটনীতিরই সাফল্য।
মার্কিন আগ্রাসনে তালিবান ক্ষমতাচ্যুত হইলেও আফগানিস্তানে মার্কিন ও ন্যাটো অনুমোদিত হামিদ কারজাইয়ের সরকার দেশের ভিতরে কিংবা বাহিরে বৈধতা পায় নাই। সকলেই জানেন, মার্কিন বাহিনী দেশে ফিরিলেই কারজাই সরকারের নির্বাসনও নিশ্চিত। বস্তুত, তালিবান নিশ্চিহ্ন হওয়া দূরস্থান, নূতন করিয়া শক্তি সঞ্চয় করিয়া মার্কিন ও ন্যাটো সেনা কার্যালয়, দূতাবাস ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে দুঃসাহসী হামলা চালাইতেছে। তালিবানদের সহিত শান্তি-আলোচনা চালাইবার কারজাই সরকারের উদ্যোগের পিছনেও এই বাধ্যতা। তালিবানের জনক, প্রশ্রয়দাতা এবং ক্ষেত্রবিশেষে নিয়ন্ত্রক হিসাবে (হাক্কানি গোষ্ঠী যেমন পাক গুপ্তচর সংস্থা আই-এস-আই নিয়ন্ত্রিত) পাকিস্তানও এই উদ্যোগের সমর্থক। ভারত তালিবানকে জেহাদি সন্ত্রাসবাদী বলিয়াই গণ্য করিয়া আসিয়াছে, তাই ‘খারাপ তালিবান’ ও ‘ভাল তালিবান’ জাতীয় কোনও ভেদাভেদে তাহার সায় নাই। কিন্তু আফগানিস্তানের ব্যাপারে ভারতের অভিপ্রায় শেষ কথা নয়। বরং পাকিস্তানের বক্তব্য ও ভূমিকা যে অনেক বেশি নির্ণায়ক, আফগান প্রেসিডেন্ট কারজাই পর্যন্ত নিত্য তাহা স্মরণ করাইয়া দেন। আফগানিস্তানের বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করিতে গিয়া ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ, দূতাবাসকর্মী বা নির্মাণকর্মীরা তালিবানি সন্ত্রাসে ক্রমাগত নিহত হইলেও তাই ভারতকে আফগান সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানের আধিপত্য শিরোধার্য করিতেই হয়। আফগানিস্তানকে বরাবরই প্রতিবেশীরা নিয়ন্ত্রণ করিতে চাহিয়াছে। অতীতে রাশিয়া ও ঔপনিবেশিক ব্রিটেনের মধ্যে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ লইয়া যে ‘গ্রেট গেম’ চলিয়াছে, তাহার জের পরেও অব্যাহত থাকে। সোভিয়েত রেড আর্মির আফগানিস্তান আগ্রাসন ও তাহা উৎখাত করিতে পাক সহায়তায় তালিবানের মতো মৌলবাদী জেহাদিদের মুজাহিদ বানাইবার পিছনে ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগের মার্কিন নীতিই প্রধান ছিল। ৯/১১-উত্তর মার্কিন আগ্রাসন তালিবান ও তাহার আশ্রিত আল-কায়দাকে উচ্ছেদ করিলেও নির্মূল করিতে ব্যর্থ হয়। এই সমগ্র পর্বে ভারতের তেমন কোনও সক্রিয় ভূমিকা থাকে নাই। আমেরিকা ও পাকিস্তান মিলিয়াই যাবতীয় জট সৃষ্টি করিয়াছে। ভারত বরং যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানকে মিত্রের ন্যায় সাহায্য করিতে আগাইয়াছে। ইহা ইসলামাবাদের না-পসন্দ, তাহার ভয়, নয়াদিল্লিও এক দিন কাবুলে তাহার প্রতিদ্বন্দ্বী হইয়া উঠিতে পারে। কিন্তু আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ভারতেরও উদ্বেগের বিষয়। আঞ্চলিক স্থিতি ও নিরাপত্তার স্বার্থেই ভারতের পক্ষে হাত গুটাইয়া থাকা সম্ভব নয়। বস্তুত সৌদি আরব কিংবা সংযুক্ত আরব আমিরশাহির তুলনায় ভারতের কাছে আফগানিস্তান অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। তুরস্ক সম্মেলনে নয়াদিল্লির আমন্ত্রিত হওয়ার মধ্যে তাহার স্বীকৃতি আছে। বাকিটা ভারতীয় কূটনীতির দক্ষতার উপর নির্ভরশীল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.