আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমলে, দেশেও পেট্রোলের দাম কমবে বলে আশ্বাস দিলেন ইন্ডিয়ান অয়েলের চেয়ারম্যান আর এস বুটোলা। তবে একই সঙ্গে তাঁর ইঙ্গিত, শুধু বিশ্ব বাজারে তেলের দাম নিম্নমুখী হওয়াই শেষ কথা নয়। আমদানি খাতে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির ক্ষতির অঙ্ক বেশ খানিকটা কমলে, তবেই যুক্তিযুক্ত হবে পেট্রোলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত। আর তার জন্য ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম কিছুটা বাড়া একান্ত জরুরি বলে মনে করছেন তিনি।
এত দিন তৃণমূল কংগ্রেস-সহ শরিক দলগুলি পেট্রোলের মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে মনমোহন-সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করলেও, দাম বাড়ানোর যুক্তিতেই অনড় থেকেছে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি। ২০১০ সালের ২৬ জুন নিয়ন্ত্রণমুক্তির পর গত ষোলো মাসে ১০ বার দাম বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে তারা। এ দিনও বুটোলার দাবি, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত শুধু পেট্রোল বিক্রিতেই তাদের ‘আন্ডার রিকভারি’ (আমদানি খরচের তুলনায় ভর্তুকি দিয়ে কম দামে বিক্রি)-র পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সাধারণ মানুষকে সামান্য হলেও স্বস্তি দিতে দাম কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে তৈরি তাঁরা। তবে আগামী ১৬ নভেম্বরের আগে দাম কমানো যে কোনও ভাবেই সম্ভব হবে না, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন বুটোলা। পেট্রোলের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে কার্যত ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু ভাঁড়ারের যা বেহাল দশা, তাতে শেষ পর্যন্ত দাম কমানো আদৌ কতটা সম্ভব হবে, সে বিষয়ে সন্দিহান তেল সংস্থাগুলির কর্তারা।
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক সূত্রেরও দাবি, এই মুহূর্তে তেল সংস্থাগুলির দাম কমানোর সুযোগ যথেষ্ট কম।
তেল সংস্থাগুলির প্রশ্ন, কেন্দ্র যেখানে বিপুল অঙ্কের সামাজিক প্রকল্প ঘোষণা করেছে, সেখানে তাদের ১ লক্ষ ৩২ হাজার কোটি টাকা ‘আন্ডার রিকভারি’র দায় নেবে কে? হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্তাদের বক্তব্য, তাদের ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণের যে ঊর্ধ্বসীমা রয়েছে, তার মধ্যে ৩১ হাজার কোটি নেওয়া হয়ে গিয়েছে। কোনও সংস্থা মূলধনী খাতে ব্যয় পিছিয়ে দিতে পারে। কিন্তু তেল আমদানি এবং তা শোধনের জন্য যে দৈনন্দিন খরচ প্রয়োজন, এখন টান পড়ছে সেখানেও। এমন চললে উৎপাদন কমাতে বাধ্য হবে সংস্থাগুলি। অবশ্য দাম কমানোর জন্য কেন্দ্রের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও বার্তা আসেনি বলেই তাদের দাবি। |